এ রাজ্যে বীজ ছড়িয়েছিল বিজেপি। সব বীজ নষ্ট হয়েছে, গাছ গজায়নি। সে জন্য পঞ্চায়েত ভোটেও জাতীয় স্তরের নেতা, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আনার পরিকল্পনা চলছে। বামপন্থীদের মুখ গ্রামাঞ্চলের শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, শিক্ষক, ছাত্র, যুবরা। তাঁরাই প্রতিদিন সমবেত হচ্ছেন লালঝান্ডার পাশে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতী জোটকে পরাজিত করবে বামপন্থী আন্দোলনে নতুন প্রাণের জোয়ার।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে সাংবাদিক সম্মেলনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘আরএসএস’র মদত ছাড়া এ রাজ্যে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী জোট চলতে পারত না। মানুষের বিরুদ্ধে সক্রিয় বন্দোবস্তকে রক্ষা করার কাজ চালাচ্ছে আইএএস-আইপিএস আধিকারিকদের একাংশ।’’
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির নবজোয়ার যাত্রার উদাহরণ দেন সেলিম। পুলিশের বিপুল সংখ্যায় মোতায়েন, এসপি-জেলাশাসকদের তটস্থ উপস্থিতি দেখছে সারা রাজ্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস তুলে নিয়ে জমায়েতে প্রশাসনের ভূমিকা রয়েছ বলে অভিযোগ রয়েছে। সেলিম বলেছেন, ‘‘যে প্রশাসনকে দরকারের সময় চেয়েও মানুষ পায় না, তারাই এখানে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি আগলে রেখেছে। বিরোধীদের কোনও কর্মসূচি করতে আটকাচ্ছে প্রশাসন এই কর্মসূচিকে দেখিয়ে। ঔপনিবেশিক শাসনে জমিদারদের গ্রাম ঘোরার সময় এসব হতো। এসপি, ডিএম-রা যা করছেন তা গণতন্ত্র নয়।’’
বিজেপি’র বিভেদের রাজনীতির প্রতিরোধে লড়াইয়ের জানান দেন সেলিম। মানুষ জোট বাঁধছে আর তৃণমূল ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই বলেই বিধায়ক কেনা হচ্ছে, সাগরদিঘি প্রসঙ্গে সরাসরি বলেছেন তিনি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘জনতা একজোট হলেই তৃণমূল-বিজেপি ভয় পাচ্ছে। তৃণমূলের আর ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই। এখন ঐক্য ভাঙতে বিধায়ক কিনছে।’’
পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একসঙ্গে নিয়ে লড়াই হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে মানুষ বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ’র পক্ষে যোগ দিচ্ছেন। প্রকাশ্যেই পতাকা তুলে নিচ্ছেন। যারা দল বদলাচ্ছে ঘৃণা ছুড়ে দিচ্ছেন তাদের প্রতি। তাই দলবদলের কারবারীরা সাবধান।’’
সেলিমের সংযোজন, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপি’তে একই লোক ঘুরেফিরে দু’দলে যাচ্ছে আসছে। নতুন মুখ নেই, সব ‘রিসাইকেলড’।’’
নিয়োগ তদন্তে ইডি’র হাতে গ্রেপ্তার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁর ‘সাহেব’ অভিষেক ব্যানার্জি। সুজয়কৃষ্ণের দাদা জানিয়েছেন তাঁদের বড় ভাই আরএসএস’র সর্বক্ষণের কর্মী। সেলিম বলেছেন, উত্তরবঙ্গে জনগোষ্ঠীর এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশকে লড়িয়ে দিতে তৃণমূলের মতো আরএসএস-ও সক্রিয়। সেই কাজেই জড়িত সেই ভাই।
বিভেদের রাজনীতি প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, ‘‘মণিপুর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা রোজগার ছেড়ে প্রাণের ভয়ে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন এই রাজনীতির জন্য। তৃণমূল বা বিজেপি সাংসদরা পরিযায়ীদের পাশে থাকেও না। বাংলাদেশি বলে তাড়ানো হচ্ছে পরিযায়ীদের। এদের কোনও সাংসদ যায় না। ধর্ম, ভাষার মতো পরিচয়ের স্বীকৃতি নিশ্চয় থাকবে। কিন্তু তাকে রাজনীতির জন্য ভোটের জন্য ভাগাভাগিতে ব্যবহার করছে বিজেপি, তৃণমূল।’’
সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়, রাজ্য কমিটির সদস্য অলকেশ দাস, সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য জীবেশ সরকারও।
Comments :0