অরিজিৎ মণ্ডল
শ্রম কোড থেকে বেসরকারিকরণ, সরকার কাদের পক্ষে এবং কেন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে হবে সব স্তরের শ্রমজীবীকে। আজকের আক্রমণের মোকাবিলার জন্য রাজনৈতিক মতাদর্শগতভাবে সিআইটিইউ-কে জঙ্গি শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা নিতে হবে বেশি করে। তীব্র করতে হবে শ্রেণি সংগ্রাম। শ্রেণি শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে কৃষক, খেতমজুরদের সংগঠনগুলির সঙ্গে মজবুত করতে হবে ঐক্য।
শুক্রবার সিআইটিইউ ১৩তম রাজ্য সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করে এই আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু।
তিনি বলেছেন, সিআইটিইউ’র বিগত সর্বভারতীয় সম্মেলনে দূরে থাকা শ্রমিক-কর্মচারীর কাছেও পৌঁছানোর ডাক দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কেন্দ্রের সরকার শ্রম কোড লাগুর যে সিদ্ধান্ত করেছে তার পেছনে যে গভীর রাজনীতি রয়েছে তা শ্রমিক কর্মচারীদের কাছে তুলে ধরতে হবে। সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কলকারখানা কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। তাই লড়াই তীব্র করতে হবে। জঙ্গি শ্রেণি আন্দোলন করতে হবে।
গত ২০ এপ্রিল কলকাতার ব্রিগেডে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর এবং বস্তিবাসী আন্দোলনের ডাকে সমাবেশ হয়েছিল। এই শ্রেণি ঐক্য আরও জোরালো করার ডাক দিয়েছেন সাহু। বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় প্রকাশ্য সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার সংগঠনের পতাকা উত্তোল, শহীদ বেদীতে মাল্যদানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিনিধি অধিবেশন।
সম্মেলনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক সুখরঞ্জন দে, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ।
চারটি কমিশন গড়ে আলোচনা হয়েছে সম্মেলনে। অসংগঠিত শ্রমিক, সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাত, নয়া উদারনীতির ফলে শ্রমজীবীর ওপর আক্রমণ সংক্রান্ত আলোচনা হয় প্রতিনিধিদের নিয়ে।
শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা, অনাদি সাহু, রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি সহ নেতৃবৃন্দ।
হেমলতা উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ২০২৩ সালের সর্বভারতীয় সম্মেলনে আমরা ঠিক করেছিলাম শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে লড়াই সংগঠিত করব। সেই কাজ আমরা কতদূর করতে পারলাম তা পরবর্তী সিআইটিও সর্বভারতীয় সম্মেলনে আমরা আলোচনা করব ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি ২০২৬ অন্ধ্রপ্রদেশে সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে।
হেমলতা বলেন, পুঁজিবাদ সমাজের সর্বস্তরে শোষণ চালাচ্ছে। বৃহৎ কর্পোরেট মুনাফার দখল নিচ্ছে। উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিকরা বঞ্চিত। শুধু বেতন বৃদ্ধি বা দাবি আদায়ের আন্দোলন নয়, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার পক্ষে শ্রমিক শ্রেণিকেই লড়াইয়ের অগ্রগণ্য ভূমিকা নিতে হবে।
হেমলতা বলেন, উন্নত পুঁজিবাদী বিশ্বের দেশগুলিতেও সামাজিক শোষণের সঙ্গে শ্রমিক, মেহনতির ওপর শোষণ বাড়ছে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে আমেরিকা, ফ্রান্সের মতো পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলিতেও।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্ধ্র প্রদেশে কিছুদিন আগেই ন্যূনতম কাজের সময়সীমা ১০ ঘন্টা করে দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার কিছু সামাজিক প্রকল্প চালু করেছে ঠিকই, কিন্তু শুধু মহিলাদের হাতে কিছু নগদ টাকা দিলেই একটি পরিবারের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন হয় না। পশ্চিমবঙ্গে যখন বামফ্রন্ট রাজ্যের দায়িত্ব পালন করেছে তখন শ্রমিকের অধিকারের প্রশ্নে কোথাও আপোস করেনি। বামপন্থীরা ছাড়া শ্রমিকদের পাশে কোনও রাজনৈতিক দল নেই। তাই ক্রমাগত লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হবে। সংগ্রাম করেই জয় ছিনিয়ে আনা যায়। এরাজ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে স্মার্ট মিটার চালু করেছিল তা যৌথ লড়াইয়ের ফলে আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। তাই আমাদের প্রধান স্লোগান হবে ঐক্য ও সংগ্রাম।
সুভাষ মুখার্জী প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন যে সংগঠনকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করাতে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের ওপর যে ভয়ঙ্কর আক্রমণ ঘটছে তার মোকাবিলা করতে হবে। আমরা সেই পথেই আছি। বহু সফল কর্মসূচি সহ ব্রিগেড ও বিভিন্ন সংগ্রাম হয়েছে এই সময়কালে। তবে আরো অনেক বেশি কর্মসূচি নিতে হবে। শ্রমিকদের আরো বেশি করে আন্দোলনে শামিল করতে হবে। তাঁদের চেতনার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রায় এক হাজার প্রতিনিধি মিলিত হয়েছে এই সম্মেলনে। নির্মাণ শ্রমিক, প্রকল্প কর্মী, চটকল শ্রমিক, কয়লা শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিক, পরিবহণ, অ্যাপ গাড়ি চালক সহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে সমবেত হয়েছেন।
Comments :0