Thumba Church

সেদিন মহাকাশে রকেট পাঠাতে প্রথম জমি দিয়েছিল থুম্বার গির্জা

জাতীয়

 সেই ছয়ের দশকের কথা। মহাকাশ গবেষণার পরিসর আস্তে আস্তে বাড়ছে। ভাবনাও বাড়ছে। চন্দ্রযান বা মঙ্গল অভিযান তখন স্বপ্নের মতো। ইসরোও তৈরি হয়নি। বিক্রম সারাভাইয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে মাত্র। এদিকে, মহাকাশের ব্যাপার জানতে গেলে তো পাঠাতে হবে রকেট, আর রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজন জুতসই একটি লঞ্চিং প্যাড। খোঁজ খোঁজ রব পড়ল। এ রাজ্য, সে রাজ্য ঘুরে ঘুরে সারাভাইয়ের পছন্দ হলো কেরালার তিরুবনন্তপুরমের থুম্বার একটি জমি। যে-সে জমি হলে তো হবে না। তাই বৈজ্ঞানিক দিক থেকে খুঁটিয়ে দেখলেন সারাভাই। বুঝলেন, লঞ্চিং প্যাডের জন্য এটাই ‘বেস্ট’ জায়গা। 
জায়গা তো পছন্দ হয়ে গেল, কিন্তু সারাভাই পড়লেন দোটানায়। এ জমিই চাই, বলবেন কী করে? কারণ, এই জমিতেই রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন একটি গির্জা। তার চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি গ্রামও। মূলত মৎস্যজীবীদেরই বাস সেখানে। কথিত আছে, ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দে এই গির্জা তৈরি হয়। পরে ম্যাগডেলিনের মূর্তি সমুদ্রে ভেসে আসলে, তা-ও প্রতিষ্ঠিত হয় গির্জায়। এখন তাহলে কী করবেন সারাভাই? বন্ধু এপিজে আবদুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে একদিন গেলেন সেই ‘ল্যাটিন চার্চ’র বিশপের সঙ্গে কথা বলতে। বললেনও। অনুরোধ করলেন, যদি মহাকাশ গবেষণার জন্য গির্জার জমি তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বিশপ সব শুনে খানিক্ষণ নীরব থাকলেন। 
পরে সারাভাই এবং এপিজে’র সামনেই কথা বলেন ওই গির্জার প্রত্যেক উপাসকের সঙ্গে। এপিজে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, বিশপ প্রত্যেককে বুঝিয়েছিলেন, বিজ্ঞান এবং তাঁদের কাজ একই, তা হলো মানবতার উন্নতি। তারপর সবার কাছে জানতে চান, গির্জার জমি মহাকাশ গবেষণায় কাজে লাগবে। দেব? আবারও ক্ষণিকের নীরবতা। কিন্তু তারপর সোৎসাহে প্রত্যেকেই দিলেন সম্মতি। মানবসভ্যতার উন্নতিতে সেই গির্জার জমিতেই তৈরি হলো ‘থুম্বা ইকুয়েটোরিয়াল রকেট লঞ্চ স্টেশন’। পরে তারই নাম বদলে হয় ‘বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার’। 
গোটা দেশ বুধবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে ভারতের প্রতিনিধি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে যাওয়ায়। থুম্বার মানুষগুলো যেন একটু হলেও বেশি খুশি, মহাকাশ গবেষণায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের অনন্য ভূমিকার কথা মনে করে। ১৯৬৩ সালে এই থুম্বা থেকেই নভেম্বরের ২১ তারিখ উৎক্ষেপণ হয় প্রথম রকেটের। উল্লেখ করার মতো বিষয়, ওই গির্জার ভবন কিন্তু ভেঙে ফেলা হয়নি। সুরক্ষিত আছে বেদীটিও। গির্জা ভবনে পরে তৈরি হয়েছে স্পেস মিউজিয়াম। 
অন্যদিকে, চন্দ্রযান ৩-এও কেরালার ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যের ছ’টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ২০টি বেসরকারি কোম্পানির তৈরি পণ্য ব্যবহৃত হয়েছে এই মিশনে, গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প মন্ত্রী পি রাজীব। তবে শুধু কেরালারই নয়, দেশের একাধিক সংস্থা ইসরোর এই মিশনে সরবরাহ করেছে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, পণ্য।

Comments :0

Login to leave a comment