Climate summit

রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অনুমোদিত সহায়তা তহবিল প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ক্ষতির শিকার দেশগুলির জন্য বিশেষ সহায়তা তহবিল গঠনে বোঝাপড়া কপ ২৭ জলবায়ু সম্মেলনে। রবিবার ভোরে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে সম্মতির পর প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের মধ্যে চুক্তির অভাবে, সহায়তা তহবিলের কার্যকারিতা আপাতত ঝুলে থাকবে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান।   
নতুন তহবিল থেকে শিল্পোন্নত দেশগুলির বেপরোয়া কার্বন নিঃস্বরণে প্রভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সাহায্য পাবে। জলবায়ু পরিবর্তেনের জন্য যারা ক্ষতির মুখে। অথচ এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নগণ্য।
এদিন সম্মেলনে সহায়তা তহবিল গঠনের ঐকমত্য হওয়ার পর আধ ঘণ্টার জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেই অবসরে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি প্রাসঙ্গিক খসড়াটি পড়ে নিজেদের মতামত জানান।
দীর্ঘ সময় ধরেই এমন সহায়তা তহবিল তৈরি নিয়ে গরিব দেশগুলির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল। বাস্তবে যা কার্যকর হলে, গরিব দেশ সমূহের পক্ষে বড় সাফল্য বলেই চিহ্নিত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের চোটে যাদের বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বন্যা, খরা, তাপ প্রবাহ, দুর্ভিক্ষ এবং ভয়ঙ্কর ঝড়ে যে দেশে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি। ঘটনাচক্রে যে দেশগুলির এমন মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। অথচ জলবায়ু বদলের দিক থেকে এমন দেশগুলির প্রায় কোনও ভূমিকাই নেই।
তাই এর আগের জলবায়ু সম্মেলন গুলিতে পিছিয়ে থাকা দেশ জলবায়ু নিয়ে ন্যায় বিচারের দাবি তোলে। ‘‘জলবায়ু নিয়ে ন্যায় বিচারের দাবি বহু দিনের। প্রায় তিন দশক ধরে বিষয়টি নিয়ে লাগাতারভাবে জানানো হয়েছে। আমরা আশাকরি আজকে তা চূড়ান্ত হলো,’’ বৈঠকের অবসরে সাংবাদিকদের জানান পাকিস্তানের পরিবেশ মন্ত্রী শেরি রহমান। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ গুলির কণ্ঠ রূপেই রহমান পরিচিত। ঘটনাচক্রে তাঁর নিজের দেশকেই ২০২২ সালে কড়া মূল্য দিতে হয়েছে। লাগাতার অতি বৃষ্টিতে বন্যায় হাবুডুবু খেয়েছে পাকিস্তানের সিন্ধ, বালোচিস্তান সহ একাধিক প্রদেশ। মারা গেছেন বহু। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও মাপা সম্ভব হয়নি। কপ ২৭ জলবায়ু সম্মেলনে করা একটি সমীক্ষা অনুসারে, পাকিস্তানের দুই-তৃতীয়াংশ বন্যাকবলিত হয়। এই জন্য সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল থেকে স্লোগান তোলা হয়,‘‘পাকিস্তানে যা হয়েছে তা শুধুই পাকিস্তানেই থাকবে না।’’ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব ঘিরে সরব হয়েছে মালদ্বীপ। সেদেশের পরিবেশমন্ত্রী অমিনাথ শাউনা বলেন, সমস্যার সমাধানে আমাদেরই উদ্যোগী হতে হবে। আমরা যা অনেক দিন ধরেই বলে চলেছি।’’
রবিবার ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে সহায়তা দানে তহবিল গঠনে সহমত হওয়াকে স্বাগত জানান হয়েছে। এদিন নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে এমন পদক্ষেপের জন্য বহু সময় ধরে অপেক্ষা করার কথাই বলা হয়েছে। 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশবিদেরা কপ ২৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি সাহায্য করার জন্য সহায়তা তহবিল গঠনের বোঝাপড়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। ‘‘এই ক্ষতিপূরণ তহবিল বহু ক্ষতিগ্রস্ত গরিব পরিবারের উপকারে আসবে। যাঁদের বাড়ির, চাষের জমির শস্য ধ্বংস হয়েছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে পূর্বপুরষদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেতে হয়েছে,’’ বলেন ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি অনি দাশগুপ্ত। তিনি আরও জানান, রবিবার ভোরে কপ ২৭ সম্মেলনে হওয়া সহমতের ফলে উন্নত এবং বিপন্ন দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিকে পরিবেশ বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সদস্য অ্যালেক্স স্কট বলেন, গরিব দেশগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কি করতে পারে এবারের সম্মেলনই তার প্রমাণ। তিনি জানান, এবার মনে হয় অন্তত জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বিপন্ন দেশগুলিকে সাহায্য করতে বিভিন্ন দেশের সরকার অন্তত প্রথম উদ্যোগটি নিতে শুরু করবে। কিন্তু তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সহায়তা তহবিলটি গঠন করা। নিশ্চিত করা ওই তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় দেশের জন্য অর্থ সাহায্য এবং উন্নত দেশগুলির থেকে অর্থদানের। তবে গোটা প্রক্রিয়াটি বাস্তব হবে।
রবিবার ভোরে সম্মেলন মঞ্চে সহায়তা তহবিল গঠনে সহমত গড়ে ওঠার পরে জার্মানির প্রতিনিধি জেনিফার মর্গ্যান এবং চিলির পরিবেশ মন্ত্রী মাইসা রোজাস পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। চিলি শুরু থেকেই সম্মেলনে এবিষয়ে যথেষ্ট তৎপর ছিল। 

Comments :0

Login to leave a comment