CPIM

ভূমিস্তরের দাবি নিয়ে লড়াই আরও তীব্র করুন

রাজ্য

নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষায় আলোকিত হয়ে বাংলার বুকেও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। সোমবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের অডিটোরিয়ামে নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্য মিশ্র তীব্র সঙ্কটে থাকা বাংলার মানুষকে বাঁচাতে যা যা প্রয়োজন সেই সব দাবি নিয়ে এখনই আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানুষের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করে ভূমিস্তরের দাবিগুলোকে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো মানুষ আমাদের পাশে চলে আসবে। গ্রামে গ্রামে পদযাত্রায় সেই লক্ষণ স্পষ্ট। আমরা এখন রানওয়েতে টেক অফের অপেক্ষায় আছি, ইঞ্জিনের স্পিড বাড়িয়ে উড়ানের প্রস্তুতি নিতে হবে। 
সঙ্কটে থাকা বাংলার মানুষকে বাঁচাতে কোথায় কোন অঞ্চলে কোন দাবিতে আন্দোলন তীব্র করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেননি সেলিম। বরং বলেছেন, মানুষকে বাঁচাতে যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে তাই করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে মহামারীর মতো অবস্থা, আর কলকাতার মেয়র মশা না মেরে বীরভূমে গেছেন বাঘ বাঁচাতে! সব পৌরসভাগুলিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দায়বদ্ধ করার মতো তীব্র আন্দোলন করতে হবে।
শাসকদলের দুর্নীতিকে গা সওয়া এবং মামুলি বিষয় বলে চালানোর মনোভাবকে নস্যাৎ করে সেলিম বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী ও দুষ্কৃতীবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে। দুর্নীতি মানে শুধু টাকার লুট নয় মানুষের অধিকার লুট হয়ে যাচ্ছে, জনকল্যাণের সব প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনও মামুলি বিষয় নয়। দুষ্কৃতী ছাড়া দুর্নীতি বেশিদিন চালানো যায় না, তাই ‘চোর ধরো জেল ভরো’ বললে দুষ্কৃতী দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। চোর শব্দটা নাকি বলা যাবে না! 
গ্রাম গ্রামে পদযাত্রায় মানুষের যে অন্য মনোভাব টের পাওয়া গেছে তার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, লোকে বিক্ষুব্ধ, আমাদের অ্যাজেন্ডা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় পৌঁছে দিতে পারলে মানুষ আস্তে আস্তে যে কথা বলছে সেটাই জোরালো আওয়াজ হয়ে উঠবে। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে ওরা আক্রমণও নামিয়ে আনার চেষ্টা করবে। সেটা প্রতিহত করার জন্যও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জড়ো করতে হবে।
নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। সূর্য মিশ্র সভায় ‘চীনের সমাজতন্ত্রের অভিমুখে সংগ্রাম’ বিষয়ে ভাষণ দিয়ে বলেছেন, নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষা এবং নানা আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে চীনের এগিয়ে চলার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে আজকের পুঁজিবাদ লেনিনের বর্ণিত সাম্রাজ্যবাদের যুগেও থেমে নেই। এখন তা লুটেরা পুঁজিবাদের চেহারা নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্র করার শপথ নিতে হবে নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকীর উদ্‌যাপনে।
নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষা প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেছেন, শাসকরা যখন পুরানো কায়দায় শাসন চালাতে পারে না এবং মানুষও যখন সেই কায়দায় শাসিত হতে চায় না তখন বিপ্লবী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার মানেই এই নয় যে বিপ্লব স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগঠিত হবে, নৈরাজ্যও হতে পারে। সমাজতন্ত্রের জন্য একটা বিপ্লবী পার্টি লাগে যারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচি নিয়ে বিপ্লব সংগঠিত করতে পারে। মিশ্র বলেন, লেনিন নিউ ইকনমিক পলিসি রূপায়ণ করে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ নিয়েছিলেন, ভিয়েতনামেও জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য দোই মোই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও সমাজতন্ত্রের অভিমুখে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ করেছে। তার সঙ্গে আমেরিকার পুঁজিবাদের কোনও তুলনা চলে নাকি? পুঁজিপতিদের হাতে পুঁজির নিয়ন্ত্রণ আর কমিউনিস্টদের হাতে পুঁজির নিয়ন্ত্রণ কখনোই এক নয়। 
সমাজতান্ত্রিক চীন নানা ওঠাপড়ার পর্ব পেরিয়ে এখন তুলনায় মসৃণভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সূর্য মিশ্র। তিনি বলেছেন, ১৯৪৯ সালে বিপ্লবের সময়কালে চীন ভারতের থেকেও পশ্চাৎপদ ছিল। এমনকি ১৯১৭ সালের রাশিয়ার থেকেও পশ্চাৎপদ ছিল চীনের সমাজ। কিন্তু সেই চীন এখন অর্থনীতিতে আমেরিকার পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ক্রয় ক্ষমতার বিচারে চীনের অর্থনীতি বৃহত্তম। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১৮ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয় চীনে যা আর কিছুদিন পরে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের পরিকাঠামো উন্নত, শহরে নাগরিকদের সংখ্যা বাড়ছে, ট্রেন এবং সড়ক পরিকাঠামোর দৈর্ঘ্যের বিচারে চীন বিশ্বে প্রথম, চীনের নাগরিকদের গড় আয়ুও আমেরিকার থেকে বেশি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, কদিন আগেই পশ্চিমী মিডিয়াতে এই চীনে সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব রটিয়েছিল, ভারতেও তা ছড়ানো হয়। চীনের পার্টি পাত্তাই দেয়নি, কোনও জবাব দেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেনি। পার্টি কংগ্রেস করে ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন করে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠনে নিজেদের লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। পার্টি কংগ্রেসের আগে তারা আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে ৮৫ লক্ষ মানুষের অভিমত নিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment