Bangladesh

আগরতলা, কলকাতার রাষ্ট্রদূতদের ফেরালো ঢাকা

আন্তর্জাতিক

 দূতাবাসে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, আগরতলা ও কলকাতায় কর্মরত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার তাদের এমন এক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে উপ হইকমিশনার শিকদার মহম্মদ আশরাফুর রহমান ঢাকায় ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হুসেনের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। দিন কয়েক আগে কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে। তার পরেই আগরতলায় দূতাবাসে হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই দুটি দূতাবসের উপ হাইকমিশনারের কাছে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট তলব করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। 
এদিকে বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকের পর, বৃহস্পতিবার ঢাকায় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস। অন্য অনেকের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে বৈঠকে এদিন উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতা সাজেদুর রহমান, মুহিউদ্দিন রাব্বানী, জুনায়েদ আল হাবিব ও মুনির হোসাইন কাসেমী। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা মোকাবিলা সংক্রান্ত এমন বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের মতো একটি মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পাশাপাশি বৈঠকে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। সত্য তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত খবর জানা মাধ্যম তৈরি করতে হবে এবং ধর্মীয় পরিচিতি নির্বিশেষে যে কোনও দোষীকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে বলে বলে জানিয়েছেন ইউনূস। প্রসঙ্গত দিন দুয়েক আগে পর্যন্ত একনাগাড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এমন সমস্ত খবরকে ‘ফ্যাসিস্টদের চক্রান্ত’ বলে দাবি করেন বাংলাদেশ সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা। তাই যদি হয়ে থাকে তবে কিসের ভিত্তিতে এমন বৈঠকের ডাক দিতে হচ্ছে? প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। 
প্রসঙ্গত বুধবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র মার্গারেট ম্যাকলিওড। পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশের উপর নজরদারি চালানোর কথা জানিয়েছেন মার্কিন সরকারের এই আধিকারিক। এর দিন কয়েক আগেই ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ওইদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী একই রকম একটি বিবৃতি দেন। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার আশঙ্কায় ইউনূস কিছুটা সুর নরম করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের বড় অংশ।     
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য মিডিয়া বা ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স’র মতো সামজমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই বিষয়ে সরকারের দায়ের করা এক মামলার শুনানি শেষে এমনটাই জানিয়েছেন বিচারপতি মহম্মদ গোলাম মর্তুজা মজুমদার ও মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরির ট্রাইবুনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পত্রপাঠ এই আদেশ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। হাসিনার এই সমস্ত বক্তব্যকে ‘হেট স্পিচ’ (বিদ্বেষমূলক মন্তব্য) বলে আখ্যা দিয়ে তা যাবতীয় গণমাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার নিউ ইয়র্কে আওয়ামি লিগের এক বিক্ষোভ সমাবেশে অনলাইন মাধ্যমে এক বক্তৃতায় ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের গণহত্যায় চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন হাসিনা। সেই প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার ট্রাইবুনাল এমন নির্দেশ দিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment