টানা বৃষ্টিতে হুগলী, বীরভূম বর্ধমান সহ বেশ কয়েকটি জেলা জলমগ্ন হওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। একাধিক বাড়িতে ঢুকেছে জল। বিঘ্নিত যানচলাচল। শুক্রবার সকাল থেকে জল ঢুকে বিপন্নতার একের পর এক ছবি সামনে এসেছে জেলার নানা প্রান্ত থেকে। গ্রাম ডুবেছে, রাস্তা উপচে বইছে জল। বিস্তির্ন চাষ জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। বহু মাটির বাড়ি মাটিতে মিশেছে। এমনকি গোয়ালঘর চাপা পড়ে ১২টি গোরুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। অভিযোগ উঠছে নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে।
বৃষ্টিতে জলমগ্ন হুগলী। বুধবার পর্যন্ত মাঠে জলের অভাবে ধান রোয়া ও পাট পচানোর কাজ ব্যাহত হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিন রাতের মুষলধারায় বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জমির আল উপছে মাঠ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পুকুর ডোবা কানায় কানায় ভরে গেছে। অনেক মাঠে কিছু কিছু ধান রোয়া হয়েছিল। এই বৃষ্টির জলে অনেক এলাকায় ধান ডুবে গেছে। জেলার চুঁচুড়া- মগরা ব্লকের দিগসুই হোয়েড়া, তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েত ও পোলবার বিভিন্ন মাঠ জুড়ে শুধুই জল। কেশবচক পঞ্চায়েতের নছিপুর ও কাঁড়ারিয়ার, কেটেরা ও শিবপুর সহ বিভিন্ন মাঠে সদ্য রোয়া ধান এখন জলের তলায়। শহরাঞ্চালের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাওড়া - ব্যান্ডেল ও বর্ধমান মেন লাইনের বিভিন্ন রেল স্টেশন সাবওয়েগুলি জলমগ্ন হওয়ার কারণে দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
টানা বৃষ্টিতে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বীরভূমে। সিউড়ি ২নং ব্লকের ধলটিকুড়ি গ্রামের কৃষক আলাউদ্দীন সেখের মাঝরাতে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে তার গোয়াল ঘর। তাঁর কথায়, ‘‘এমন বৃষ্টি হবে বুঝতেই পারি নি। গোয়ালঘর ভেঙে দেওয়াল চাপা পড়ে যায় বারোটা গোরু। সব কটিই মারা গিয়েছে।’’
জলমগ্ন রানিগঞ্জের বিস্তৃর্ণ এলাকা। ছবি- মলয়কান্তি মণ্ডল।
জল ঢুকেছে লাভপুরের ঠিবা অঞ্চল সহ নানুর, ন‘নগর কড্ডার বিভিন্ন গ্রামে। জলের তলায় চলে গিয়েছে নানুর-বোলপুর রাস্তা। ঠিবা গ্রামে জল ঢুকে বিপর্যস্ত হয়েছেন মানুষ।
জলমগ্ন বোলপুর-শান্তিনিকেতনের একাধিক জায়গা। কোপাই নদীর সেতুর উপর দিয়ে বইছে জল। সতীপীঠের অন্যতম কংকালীতলা মন্দির চত্ত্বর সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়েছে। একাধিক দোকান ঘর, কাঁচা বাড়ি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনের তরফে কোপাই নদীর সেতুর দুই দিকে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিডিও বোলপুরের বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘‘বেশকিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে। অজয়, কোপাইয়ে জল বেড়েছে। অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ’’ একইভাবে ইলামবাজারেরও বহু গ্রাম বিধ্বস্ত হয়েছে পর্বল বৃষ্টিপাতের জেরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এদিন তিলপাড়া জলাধার থেকে ১৫০০ কিউসেক, দেউচা থেকে ৭৫০০, ব্রাঙ্মনী জলাধার থেকে ১৭০০ , কুলতোড় জলাশার থেকে ৪৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
বাঁকা নদীর জলে রায়নগর যাবার রাস্তায় জলস্রোত বইছে। ছবি- শঙ্কর ঘোষাল।
পূর্ব বর্ধমানের ছোট নদী খড়ি, কুনুর, বাঁকা দুকুল ভাসিয়ে মাঠ, গ্রাম, চাষের জমি ভাসিয়েছে। ভাতাড়, মন্তেশ্বর, মেমারী, জামালপুর, রায়না, কাটোয়া, মঙ্গলকোটে এই জলে ক্ষতি হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেশ কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৫০ বেশি গ্রামে জনজীবনে ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে যা জানাগেছে, কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গেছে আংশিক ৪১০টি, পুরো বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে ৭২টি। তবে প্রাণহানির কোন খবর নেই। বহু এলাকার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েন তাঁদের স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়। তবে ত্রাণ নিয়ে দুর্গত মানুষের প্রচুর ক্ষোভ।
ভাতার বাজার, বলগোনা বাজার জলমগ্ন। ভাতাড় স্টেশনের কাছে বস্তির একাধিক পরিবারকে এদিন রাতেই সরিয়ে নিয়ে আসে প্রশাসন। বড়বেলুনে দুলে পাড়া, দাস পাড়ার প্রাব ৬০ টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আসতে হয়। বিভিন্ন জায়গাতে জলমগ্ন হবার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন এলাকার মানুষ। কারণ হিসাবে তাঁরা বলেছেন, বিভিন্ন নয়নজুলি বুজিয়ে তৃণমূল ঘর তৈরি করার নির্দেশ দেবার ফলে জল ড্রেনেজ হবার রাস্তা নেই ফলে জলবন্দী হয়ে যাচ্ছে।
জলবন্দি মেজিয়ার রেল কলোনী এলাকা।
২৪ ঘন্টার টানা বৃষ্টিপাতে জল জমে বানভাসি অবস্থার মধ্যে পড়েছেন বাঁকুড়ার মেজিয়া রেলকলোনী ও গার্লস স্কুল সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২০০ পরিবার। নিকাশি ব্যবস্থার অব্যবস্থার এবং অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি করার জন্যই এই পরিনতি বলে মানুষ মনে করছেন। মেজিয়ার বিডিও শেখ আবদুল্লাহ ও অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। দুর্গত মানুষজনকে অন্যত্র তুলে নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মেজিয়ার বুকে বিভিন্ন লজ, ও স্কুলগুলিতে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এক রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, অণ্ডল, আসানসোল কয়লাঞ্চল। জলে ভেসে যায় রানিগঞ্জের হুসেননগর এলাকা। সর্বত্রই বস্তিবাসী এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। জামুড়িয়া ইকড়া ব্রিজ, নুনিয়া নদীর হাড়াভাঙা ব্রিজ, নূপুর বেলুনিয়া ব্রিজের উপর দুরন্ত বেগে জল বইছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে গ্রামীণ জনপদগুলি। দামোদর ও অজয় নদীর পাড় বরাবর যেটুকু চাষের জমি ছিল সেগুলো ভেসে গেছে। জমির ফসল ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। সকাল থেকেই সিপিআই(এম) কর্মীরা জলমগ্ন এলাকায় পৌঁছে মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
Comments :0