Tragic disaster

রায়গঞ্জের কার্নিভালে চূড়ান্ত অব্যবস্থা, বলদের গুঁতোয় মৃত প্রৌঢ়, আহত ৪০

রাজ্য

কার্নিভালের হৈ-হুল্লোড় উলটে গেল বলদের গাড়ি। একে অন্যকে বাচাতে পিছনে লাথি।

রায়গঞ্জ : ৮ অক্টোবর—  মাল নদীতে বিসর্জনে মর্মান্তিক বিপর্যয়ের দু’দিনের মধ্যে ফের কার্নিভালের নামে অব্যবস্থার জেরে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটল। শুক্রবার প্রশাসনিক উদ্যোগে কার্নিভালের সময়েই একটি পুজো কমিটির প্রতিমা বহনকারী সাজানো গাড়ি থেকে ছিটকে বেরোনো বলদের তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়, আহত হয়েছেন চল্লিশ জনের বেশি। শব্দবাজি আর মাইকের দাপটেই বলদের এমন তাণ্ডব আচরণ বলে জানা গেছে। কিন্তু মালবাজারের মতোই এখানেও প্রশাসনিক উদ্যোগে বহু মানুষের ভিড়ে এমন অব্যবস্থার আয়োজন ঘটলো কী করে তাই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে নাগরিকমহলে। 
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মালবাজারের ঘটনার পরেও এই সরকারের হুঁশ ফেরেনি, আবারও দুঃখজনকভাবে বিপর্যয়ে মৃত্যু হলো রায়গঞ্জের এক ব্যক্তির। শহরের রাস্তায় পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত ভিড়, আলো, শব্দবাজি ও মাইকের দাপটে একটি বলদের উন্মত্ততায় প্রাণহানি ঘটে গেল, আহত হলেন অনেকে। সাধারণ মানুষের করের টাকায় এভাবে অপরিকল্পিত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন উৎসবের নামে রক্তের বন্যা ও জীবনহানির দায় কে নেবে?
বাস্তবিকই রায়গঞ্জের রাস্তায় শুক্রবার সন্ধ্যায় কার্নিভালের নামে চলছিল লাগামছাড়া হুল্লোড়। আইনের খাতায় কলমে কলকাতা পুলিশ এলাকায় রাস্তায় শোভাযাত্রায় ডিজে বাজানোই নিষিদ্ধ। কিন্তু রায়গঞ্জে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কার্নিভালেই দেখা গেছে ডিজে’র দাপট। রায়গঞ্জের মোহনবাটি এলাকায় গীতাঞ্জলি হলের সামনে মঞ্চ বেঁধে পুজো কার্নিভালের আয়োজন করেছিল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন, সামনের রাস্তা দিয়ে চলছিল শোভাযাত্রা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে রায়গঞ্জ শহরের সেবক পল্লি এলাকার অনুশীলনী ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখনই আনন্দে ছন্দপতন ঘটে গেল রায়গঞ্জের অনুশীলনী ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাওয়া বলদের টানা গাড়িতে। বাজি আর ডিজের শব্দে বলদ ভয় পেয়ে প্রথমে লাফালাফি শুরু করে। তারপর গাড়ি ছিটকে ফেলে দিয়ে উন্মত্তের মতো ছুটে বেড়ায় এদিকে ওদিকে। কার্নিভাল থেকে ২০০ মিটার ছুটে ভিড়ে ধেয়ে যায় এবং বাধা পেয়ে আরও উন্মত্ত হয়ে একের পর এক দর্শনার্থীদের জখম করে। তাঁদের ছুটোছুটি ও পালানোর চেষ্টায় ভিড়ে আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
এই সময়েই বলদের সিংয়ের গুঁতোয় ছিটকে পড়ে যান বন্দর ভারত সেবক সমাজের সভাপতি সাধন কর্মকার (৬৫)। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাতল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ চিকিৎসার পর রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। জখম আরও অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রায়গঞ্জে মেডিক্যা ল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত সাধন কর্মকারের বাড়ি রায়গঞ্জ শহরের বন্দর এলাকায়। ভারত সমাজ সেবক সঙ্ঘের দুর্গা উৎসব কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া শহরজুড়ে। সাধন কর্মকারের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর অসুস্থ স্ত্রী। তাঁর একমাত্র মেয়ে জুলি কর্মকার দাস, জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, এ কেমন প্রশাসন ? রায়গঞ্জের ছোট রাস্তায় বলদ দিয়ে শোভাযাত্রার অনুমতি দিল কি করে? আমার বাবার মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের গাফিলতিই দায়ী। কথা বলতে বলতেই পিতৃবিয়োগে শোকার্ত কন্যা অচৈতন্য হয়ে পরেন।
গোটা বন্দর এলাকায় শোকের আবহে মানুষের ক্ষোভ দেখা গেছে। মালবাজারে বিসর্জনে হড়পা বানে বিপর্যয়ের পরেও হুঁশ ফেরেনি উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের। দায়িত্বজ্ঞানহীন অনুষ্ঠান আয়োজন ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার মানুষ। কার্নিভালে অংশগ্রহণের জন্য জেলার মোট ২৩ টি পুজো কমিটিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৯টি পুজো কমিটি অংশ নেয়নি, ১৪ টি পুজো কমিটি অংশ গ্রহণ করে কার্নিভালে। যে অনুশীলনী ক্লাবের শোভাযাত্রায় বলদ আনা হয়েছিল সেই ক্লাবটি বিজেপি থেকে নির্বাচিত হয়ে তৃণমূলে যোগদান করা বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর অনুগামীদের ক্লাব বলেই পরিচিত। প্রশাসন কেন ঠেকায়নি, তার উত্তর কি এখানেই রয়েছে? উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে। 
রায়গঞ্জের জনপ্রিয় বিদ্রোহী ক্লাব কার্নিভালে অংশ কেন নেয়নি সেই প্রশ্নের উত্তরে ক্লাব সভাপতি কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের জবাব, আমরা প্রশাসনের তাঁবেদারি করি না। সিপিআই(এম)’র উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম পালের অভিযোগ, সামনে পঞ্চায়েত ভোট, তাই তৃণমূলের ৬-৭টা গোষ্ঠীকে সরকারি টাকায় এক জায়গায় ধরে রাখার জন্য কার্নিভালের আয়োজন। কিন্তু প্রশাসন কী করে ডিজে বাজানো ভিড়ের মধ্যে বলদ নিয়ে শোভাযাত্রার অনুমতি দিল? এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্যই বিপর্যয়। রায়গঞ্জে বিধানসভায় বিজেপি’র হয়ে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক অনুশীলনী ক্লাবের সভাপতি হয়ে যা খুশি তাই করবে আর প্রশাসন চোখে ঠুলি পরে থাকবে? 

 

Comments :0

Login to leave a comment