তীব্র আর্থিক সঙ্কট এবং জীবিকার অনিশ্চয়তার আবহে জার্মানির ভোটে জয়ী হলো রক্ষণশীল জোট। অনুমান অনুযায়ী নয়া নাৎসি এএফডি’র ভোট বাড়ল লাফিয়ে। যা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিভিন্ন স্তরেই।
রক্ষণশীল এবং অতি দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) নেতা ফ্রেডরিক মারৎজই হচ্ছেন জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর। রক্ষণশীল জোট সিডিইউ-সিএসইউ জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচনে পেয়েছে ২৮.৬ শতাংশ ভোট।
সঙ্কটের ত্রাতা হিসেবে প্রচার করেছেন মারৎজ। দায়ী করেছেন অভিবাসীদের, ঠিক নয়া নাৎসিদের মতো। অভিবাসীদের বিপক্ষে কড়া আইনের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন তিনি। যে প্রচারের সঙ্গে মিলে গিয়েছে আমেরিকার নির্বাচনে রক্ষণশীল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুর। তবে জয়ের পরই মাখৎজ আমেরিকা এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন।
মাখৎজ বলেছেন, ইউরোপের ভালোমন্দ নিয়ে মথা ঘামায় না আমেরিকা। যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকার থেকে সরে এসে স্বাধীন অবস্থানের দিকে এগবে জার্মানি।
ট্রাম্প এবং তাঁর সঙ্গী এলন মাস্ক জার্মানির ভোটে সমর্থন করেছিল নয়া নাৎসিবাদী এএফডি-কে।
জনমত সমীক্ষা এবং বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব মিলিয়েই দুই নম্বরে উঠে এসেছে নয়া নাৎসি শক্তি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। ২০.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে এই দল।
মধ্য-বাম বলে পরিচিত ওলাফ শোলৎজের সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি) পেয়েছে ১৬.৪ শতাংশ ভোট। শোলৎজকে ছাড়তে হচ্ছে চ্যান্সেলরের পদ।
এই নির্বাচনে গ্রিন পার্টি পেয়েছে ১১.৬ শতাংশ ভোট। বামপন্থীরা পেয়েছে ৮.৮ শতাংশ ভোট।
আসনের হিসেবে দেখা যাচ্ছে বুন্দেস্ট্যাগে সিডিইউ-সিএসইউ জোটের হাতে থাকছে ২০৮ প্রতিনিধি। এএফডি’র আসন ১৫১।
অন্যদিকে এসপিডি’র ১২১, গ্রিনের ৮৫ এবং বামপন্থীদের ৬৪ আসন রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি জার্মানিকে বাধ্য করেছিল নাৎসিবাদী রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করতে। সেই জার্মানিতেই অতি দক্ষিণপন্থী এবং নাৎসিবাদী শক্তি উঠে এসেছে দুই নম্বরে।
নয়া নাৎসিবাদের উত্থানের পিছনে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটকে দায়ী করছেন পর্যবেক্ষকরা। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে ২০০৮’র পর থেকে। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ বিশেষ দেখাচ্ছে না। জনসাধারণের সঙ্কট তীব্র হলেও অতি ধনী অংশের সম্পদ বাড়ছে লাফিয়ে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কৌশলে আমজনতার মধ্যে থেকে অভিবাসীদের ঘাড়ে সঙ্কটের দায় চাপিয়েছে সিডিইউ এবং এএফডি।
গত দু’টি অর্থবর্ষে মোট জাতীয় উৎপাদন কমেছে জার্মানির। ইউরোপে যদিও সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি হয়ে থেকেছে এই জার্মানিই। সঙ্কটের দায় চাপানো হয়েছে সিরিয়া বা মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলি থেকে আসা অভিবাসীদের ওপর। বিভাজনের কৌশলেই জয়ী হয়েছেন মারৎজ। তবে সঙ্কটের কারণে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্বও বেরিয়ে আসছে বলে মত বিশ্লেষকদের একাংশের।
Germany Election
অভিবাসী বিরোধী প্রচার, জয়ের পর ট্রাম্পের হাত ছাড়ার বার্তা মারৎজের

×
Comments :0