Mamata Banarjee

দুর্নীতি নিয়ে চুপ, আশ্বাস দিয়েই কাজ সারলেন মমতা

রাজ্য

‘যোগ্য’দের জন্য দুমাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসএসসি ২০১৬ প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরিহারাদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানে তিনি জানান যে যোগ্য যারা তাদের ব্যবস্থা সরকার করবে আর যারা অযোগ্য তাদের ব্যবস্থা পরে করা হবে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন দুমাসের মধ্যে যোগ্যদের জন্য ব্যবস্থা করবেন। স্বেচ্ছায় কাজ করার পারমর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন থাকছে কাজ করলেও তারা কি বেতন পাবেন?
এদিন বৈঠকে যারা আসেন তাদের গলায় একটা কার্ড ঝুলছে তাতে লেখা ‘আমরা যোগ্য’ কে বা কারা এই কার্ড বিলি করলো আর কার অনুমতিতে করলো তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা এদিন বৈঠকে তাদেরই প্রবেশ করতে দিয়েছেন যাদের কাছে এই কার্ড ছিল। এই কার্ড সংগ্রহকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামের বাইরে মারামারি হয়। একদল চাকরি প্রার্থীদের দাবি যারা অযোগ্য তারা ৫০০ টাকার বিনিময় ওই কার্ড নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে।
এদিন চাকরিহারাদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি তোলা হয় সরকারের সামনে। তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিতে হবে। পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া যাবে না। যে বিচারপতি রায় দিয়েছেন, তাঁর বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা যাবে না। পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত যে চাকরি করছি, সেখানেই স্বমহিমায় আমাদের বহাল রাখতে হবে। এতে আদালতের অবমাননা হবে না। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যেতে চাইছি না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে, সিবিআইয়ের নথিতে যোগ্য এবং অযোগ্যের ভাগাভাগি রয়েছে। যোগ্যদের পরিচ্ছন্ন তালিকা নিয়ে রিভিউ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। সব বিরোধী দল আমাদের প্রতি সহমর্মী। আমরা সর্বদল বৈঠকের আবেদন জানাচ্ছি। আমরা দক্ষ আইনজীবীর অভাব বোধ করেছি। আমাদের এক জন দক্ষ আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

বলতে উঠে এদিন মমতা প্রথমেই আক্রমণ করে বসেন সিপিআই(এম) সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে তিনি বলেন, ‘‘বিকাশ বাবু কেন মামলা করলেন তার উত্তর তাকে দিতে হবে। সিপিআই(এম) কে এর উত্তর দিতে হবে।’’
উল্লেখ্য, এই অভিযোগ তৃণমূল আগেও করেছিল। বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হয়েছিলেন যোগ্য এবং বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা।  মামলার ফলে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতি সামনে আসে। তার মাত্রা এতটাই যে ফাঁকা ওএমআর শিট দিয়ে চাকরি হয়েছে। কে যোগ্য কে অযোগ্য, তার তালিকা পর্যন্ত আদালতে দিতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। বান্ডিল বান্ডিল টাকা উদ্ধার হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বাড়ি থেকে। যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরি পাননি যারা তারাই সঙ্গত কারণে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। তখনই সামনে আসতে থাকে দুর্নীতির তথ্য। বঞ্চিতদের হয়ে মামলা লড়েছিলেন আইনজীবী এবং সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। 
মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে বলেন স্কুলে শিক্ষকাতর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তার কথায় তাদের যেহেতু বরখাস্তের কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি তাই তারা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এদিন মমতা যোগ্য, অযোগ্য বিষয়টি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। অযোগ্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আগে যোগ্যদের বিষয়টি মিটে যাক। তার পর যাদের অযোগ্য বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য আছে আমি দেখব। আবার আপনাদের ডাকব। সত্যি যদি তাঁরা অযোগ্য বলে প্রমাণিত হন, আমার তখন কিছু করার থাকবে না। কিন্তু কাকে কেন অযোগ্য বলা হয়েছে, কে তদন্ত করেছে, আলাদা করে সেটা দেখতে হবে। আলাদা করে সেটা নিয়ে আমি কথা বলব। সকলে নিশ্চিন্তে থাকুন। যোগ্য-অযোগ্যের মধ্যে গোলমাল লাগাবেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন অযোগ্য প্রমাণ হলে তার কিছু করার থাকবে না কিন্তু তার দলেরই নেতা মন্ত্রীরা টাকার বিনিময় চাকরি বিক্রি করেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এদিন দোষী যারা তাদের কোন তিরোষ্কার করলেন না। দুর্নীতি নিয়ে কোন কথা বললেন না। ভাব দেখালেন যেন কিছুই হয়নি। তার এই আচরণ দুর্নীতিকে সমর্থন করেই বলে মনে করছেন অনেকে। 
এই মামলায় আদালত এসএসসিকে নির্দেশ দিয়েছিল যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা জমা দিতে। কিন্তু সেই তালিকা জমা দেওয়া হয়নি। উল্টে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ওএমআর শিট। শিক্ষা আন্দোলনের সব অংশ যোগ্য এবং অযোগ্য কারা, তা বাছাই করে রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার দাবি তুলেছিল। যাতে যোগ্যদের চাকরি না যায়। সেই সময় নীরব থেকেছে সরকার। সেই তালিকা যদি আদালতের কাছে জমা পড়ত তবে এদিন যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের চাকরি যেত না।

Comments :0

Login to leave a comment