মোদী সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে বিরোধী ঐক্য আরও গতি পেল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি-কে সমূলে উৎপাটিত করার লক্ষ্যে বুধবার নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। এই বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিরোধী নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের ওপর আঘাতের বিরুদ্ধে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েই চলবেন। দেশকে নতুন দিশা দেখাবে বিরোধীরা।’’
এদিনের বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথাই পুনরায় জানিয়ে দিলেন বিরোধী নেতারা। আরও বেশি সংখ্যক বিজেপি বিরোধী শক্তিকে এক ছাতার তলায় আনার নিরন্তর উদ্যোগ চালিয়ে যাবেন, একথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাঁরা। খাড়গে বলেন, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবে। দেশবাসীর সামনে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটা বিকল্প ভাবনা তুলে ধরার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে, সেকথা আবার স্মরণ করিয়ে দেন রাহুল গান্ধী। তিনি এদিনের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেন। আরও মতান্তর দূরে সরিয়ে রেখে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়ে নীতীশ কুমার বলেছেন, ‘এদিনের বৈঠকে বিরোধী ঐক্য আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার কথাও হয়েছে।
বস্তুত, সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবেই আদানিদের শেয়ার কারচুপি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করে তদন্তের দাবি তোলে। এই দাবিতে তারা একসঙ্গে মিছিল, ধরনা, অবস্থানও করে। পরে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি বিরোধী দল যারা অতীতে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে শামিল হতে রাজি ছিল না। বস্তুত, এখন প্রায় ১৯টি বিরোধী দল একসঙ্গে দিল্লির তখত থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে হটানোর ডাকও দিয়েছে। কিন্তু এদিনের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে কারণ এই প্রথম কোনও নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া ২০২৪-র নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এক সঙ্গে বসে কথা বললেন কংগ্রেস, জনতা দল (ইউ) এবং আরজেডি নেতৃবৃন্দ। পরে নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে আলোচনা করেন বিরোধী ঐক্যের লক্ষ্যে। তবে সকালের তিন দলের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেও আগামীদিনে সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলবেন।
বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইকে মতাদর্শগত সংগ্রাম অ্যাখ্যা দিয়ে রাহুল বলেছেন, ‘‘এদিন বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সব বিরোধী দলকে একসঙ্গে নিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়াই করা হবে।’’ শুধু কংগ্রেস নয়, এই উদ্যোগ অন্য বিরোধীরাও চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত নেতারা একটা অভিন্ন মত তুলে ধরেন বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে। খাড়গে পরে হিন্দিতে এদিনের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘মানুষের প্রতিবাদের ভাষাকে একসূত্রে গেঁথে দেশবাসীর সামনে এক নতুন দিশা তুলে ধরতে চলেছে বিরোধীরা।’’ উল্লেখ্য, খাড়গে ইতিমধ্যে ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন এবং শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) প্রধান উদ্ধব থ্যাকারের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে।
বিজেপি বিরোধী বিরোধীদের ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে সহমত পোষণ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদবের সঙ্গে বৈঠকের পর কেজরিওয়াল সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, ‘‘দেশ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার পর এই সরকারই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত।’’ এরপরেই তিনি নীতীশ কুমারদের বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের যা হাল হয়েছে সেখানে পরিবারগুলির জীবনধারণই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফলে সব বিরোধীরা মিলে এই সরকারকে নদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিতেই হবে। নীতীশজী বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তাঁর সঙ্গে আছি।’’
বৃহস্পতিবার সকালে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনায় বসার কথা নীতীশ কুমার এবং তেজস্বী যাদবের।
Comments :0