Bhangar

আরাবুল গ্রেপ্তারের জেরে এখনও উত্তপ্ত ভাঙড়ের কোচপুকুর

রাজ্য জেলা

ক্যাপশন- শুক্রবার বারুইপুর আদালতে ধৃত আরাবুল ইসলাম।

অনিল কুন্ডু- ভাঙড়

ফের উত্তপ্ত ভাঙড়। আইএসএফ’র পতাকা ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কোচপুকুর এলাকা। অভিযোগ, তৃণমূলীরা নিজেদের দলীয় পতাকা লাগানোর সময় আইএসএফ’র টাঙানো পতাকা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনায় আইএসএফ কর্মীরা প্রতিবাদ করায় দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে বচসা, সংঘাত হয়। উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর। তাঁদেরকে জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আসে উত্তর কাশীপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। নামানো হয় র্যা ফ। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের ৯জনে আটক করেছে পুলিশ। 
এদিন ভাঙড়ের পোলেরহাট এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন পোলেরহাট হাই স্কুলের কাছে আবর্জনার স্তুপে বোমা পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা থানায় খবর দিলে পোলেরহাট থানার পুলিশ বোমাগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বোমা উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কর সৃষ্টি হয়।    
এদিকে ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামকে শুক্রবার বারুইপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট’র আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে ১২ দিন পুলিশ হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ফের তাকে আদালতে হাজির করতে উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি।  
ভাঙড়ের কোচপুকুর গ্রামে তৃণমূল ও আইএসএফ’র সংঘাতের ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন অভিযোগ করে বলেন, বিজয়গঞ্জ বাজারে ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের সভাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলীরা দলীয় পতাকা লাগাচ্ছিল। সেই সময় আইএসএফ’র টাঙানো পতাকা ছিঁড়ে ফেলে দেয় তারা। এর প্রতিবাদ করায় আইএসএফ কর্মীদের উপর চড়াও হয় তৃণমূল। বচসা, হামলার পাল্টা প্রতিরোধ করে আইএসএফ। গোটা এলাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায়  স্থানীয় আইএসএফ নেতা শামসুর রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে ভাঙড়ে ফের হিংসা ছড়াতে চাইছে তৃণমূল। নিজেদের দলীয় পতাকা লাগানোর সময় আইএসএফ’র পতাকা খুলে ফেলে দিয়েছে। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি। 
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে গত ১৫ জুন আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা খুন হয়। তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। এই খুনের ঘটনার প্রায় ৮ মাস পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূলের তাজা নেতা আরাবুল ইসলামকে থানায় ডেকে গ্রেপ্তার করে। ধৃত তৃণমূল নেতাকে বারুইপুরের এসিজেএম’র আদালতে পুলিশ হাজির করলে বিচারক অলিভিয়া রায় ধৃতকে ১২ দিনের পুলিশ হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ফের আসামীকে আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। এদিন আদালতে পুলিশের তরফে সরকারি আইনজীবী ধৃত’র জামিনের আবেদনের বিরোধীতা করে বলেছেন, ঘটনার ৮ মাস বাদে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। যে ৩ হাজার মানুষ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল তাঁদেরকে আরাবুল ইসলাম কন্ট্রোল করছিল। ঘটনার যথাযত তদন্ত ও যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেই অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আদালতে ধৃতর পক্ষে ৩ জন আইনজীবী পুলিশি হেপাজতের বিরোধীতা করে বলেন, কলকাতা পুলিশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তের নামে নিজেদের হেপাজতে নিতে চাইছে। পিসি’র আবেদন রিজেক্ট করা হোক। ঘটনার এতোদিন বাদে অস্ত্র উদ্ধারের নামে হ্যারাজ করা হচ্ছে। এদিন সাদা কাপড়ে মুখ ঢাকা অবস্থায় ধৃত তৃণমূল নেতাকে বারুইপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ।

Comments :0

Login to leave a comment