Israel Palestine conflict

হাসপাতালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল

আন্তর্জাতিক

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে গাজায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নেমেছে ইজরায়েল। অতীতে যা কখনও দেখা যায়নি। গাজায় হতাহতের সংখ্যা যতদূর সম্ভব বাড়ানোর জন্য একের পর এক হাসপাতালে বা হাসপাতালের সামনে বোমাবর্ষণ করছে ইজরায়েল। আল শিফা হাসপাতাল প্রথম দিন থেকেই তাদের লক্ষ্যবস্তু। শুক্রবার সকালে এই হাসপাতালের প্রাঙ্গণ এবং প্রসূতি বিভাগে বোমা মারে ইজরায়েলী সেনাবাহিনী। রোগীরা ছাড়াও হাসপাতালের প্রাঙ্গণে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, যাঁরা এখনও মনে করছেন হাসপাতাল তুলনায় নিরাপদ স্থান। সামনে খাটানো তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। এর পরেই শুরু হয় আহতদের আর্তনাদ। নিহত হয়েছেন একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচবার এই হাসপাতালে আক্রমণ হয়েছে। হাসপাতালের অধিকর্তা বলেছেন, শুক্রবারকে হাসপাতালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দিন বলা যায়। হাসপাতালের বারান্দায়, প্রাঙ্গনেও রোগীরা শুয়ে রয়েছেন। কোনোরকম অস্ত্রোপচার করাও অসম্ভব হয়ে গেছে। কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব, কাকে করব না এই সিদ্ধান্তও নিতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি ১০০ মৃতদের চারপাশে নিয়ে। 
ইজরায়েল দাবি করছে হাসপাতাল খালি করে দিতে হবে। কোথায় খালি করব? কোথায় সরাবো? আল নাসের মেডিক্যাল সেন্টারে দুটি হাসপাতাল রয়েছে। সেখানেও বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েলী বিমান। সেখানে নিহত হয়েছেন দু’জন। বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে চারটি হাসপাতালে এভাবে বোমা-আক্রমণ হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের ২০টি বন্ধ হয়ে গেছে। তার মধ্যে শিশুদের জীবনদায়ী চিকিৎসার হাসপালও রয়েছে। আরও ১২টি হাসপাতাল বন্ধের জন্য ‘নির্দেশ’ দিয়েছে ইজরায়েল। ইজরায়েলী ট্যাঙ্ক হাসপাতাল ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। 
এদিন আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া একটি স্কুলেও বোমাবর্ষণ হয়। ৫০ জন নিহত হয়েছেন। 
গাজায় ইজরায়েলী আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেন এই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও মার্কিন বিদেশ দপ্তরের সজহারী সচিব বারবারা লিফ জানিয়েছেন, যত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে তার থেকে অনেকবেশি লোক মারা গিয়েছেন বলে মনে করার কারণ রয়েছে। মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এদিন নয়াদিল্লিতে বলেছেন, ইজরায়েল অসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছে, তা প্রশংসনীয়। তবে আরো কিছু করা দরকার। ব্লিঙ্কেনের মুখে হাসপাতালে আক্রমণ নিয়ে একটি কথাও শোনা যায়নি। ইজরায়েল দিনে ‘চার ঘণ্টার বিরতি’ দেবে বলে বৃহস্পতিবার ফলাও করে প্রচার করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। 
ইজরায়েল জানিয়েছে, এযাবৎ গাজায় তারা ১৫ হাজার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। গাজার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ২৯ হাজার টন বিস্ফোরক গাজায় ফেলেছে ইজরায়েল। মোট বাড়িঘরের ৫০ শতাংশ ভেঙে গেছে। মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ গৃহচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন। 
উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণের দিকে স্রোতের মতো মানুষ যাচ্ছেন। উত্তর গাজা গে ফাঁকা করে দিতে চাইছে ইজরায়েলী সেনারা। কিন্তু যাবার পথে সেই মানুষের স্রোতই বারংবার আক্রান্ত হচ্ছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য দপ্তর এদিন বলেছে, ‘পৃথিবীতে যদি কোথাও নরক থেকে থাকে তাহলে এখন তা গাজা’।
 

Comments :0

Login to leave a comment