Communalism

গোরুর নামে খুন বিহার, ত্রিপুরায়

জাতীয়

গোমাংস পাচারের ভুয়ো অভিযোগ ছড়িয়ে এবার বিহারে একজনকে পিটিয়ে খুন করল স্বঘোষিত গোরক্ষকরা। কোনও কথা না শুনে, কোনও আর্তিতে সাড়া না দিয়ে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করা হয় মাঝবয়সি মহম্মদ জাহিরুদ্দিনকে। সারণের খোরি পাকার গ্রামে বৃহস্পতিবার ভোররাতের এই নৃশংসতায় সাত জন গ্রেপ্তার হলেও বাকি প্রত্যেকটি পিটিয়ে খুনের ঘটনার মতোই ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয়ে আছেন জাহিরুদ্দিনের পরিবার। এদিকে, একইদিনে ত্রিপুরাতেও গোরু চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। 
মাঝওয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাহিরুদ্দিন (৫৫) বুধবার রাতে ট্রাক নিয়ে বেরন। সঙ্গে ছিলেন খালাসি খুরশিদ আলি। ওষুধ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় গবাদি পশুর হাড় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল মরহৌড়া কারখানায়। খোরি পাকার গ্রামে পৌঁছানোর পর জাহিরুদ্দিনের ট্রাকে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁরা রাস্তার ধারে দাঁড়ান। কোনও মেকানিক পাওয়া যায় কি না, সেই খোঁজও করছিলেন। তখনই হঠাৎ ওই গ্রামের কয়েকজন জাহিরুদ্দিনদের সাহায্য করার নামে এগিয়ে এসে গোমাংস পাচারের গুজব তুলে মারধর শুরু করে দেয়। খুরশিদ কোনওরকমে পালিয়ে যেতে পারলেও জাহিরুদ্দিন পারেননি। কয়েক বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তাঁর পা ভাঙে। অস্ত্রোপচার করে পায়ে রড বসানো হয়েছে। ফলে দৌড়ানোর ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তাই জাহিরুদ্দিনকে বাগে পেয়ে রাস্তায় ফেলে নির্বিচারে মারতে থাকে ওই স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী। কমপক্ষে ২০ জন মিলে জাহিরুদ্দিনকে মারধর করেছে। একটি ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে জাহিরুদ্দিনের ট্রাক। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। জাহিরুদ্দিনের চটি জোড়া এদিক-ওদিক পড়ে রয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু ওই বীভৎসতার সামনে কিছুই করতে পারেননি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অসাড় জাহিরুদ্দিনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, শরীরে আভ্যন্তরীণ ক্ষতের জেরেই মৃত্যু হয়েছে জাহিরুদ্দিনের। ধারণা করা হচ্ছে, লোহার রড বা ভোঁতা কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। 
এদিকে, পুলিশের চোখের সামনেই জাহিরুদ্দিনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মরহৌড়া কারখানার মালিক মহম্মদ হায়দর। তিনি বলেন, ‘‘ঝামেলার খবর পেয়ে জালালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। জাহিরুদ্দিনকে মারধর করা হচ্ছে, তাঁরা তা দাঁড়িয়ে দেখেছেন। খুরশিদ পরে বলেছে, ওইদিন ঈদ থাকায় সন্দেহ করা হয় যে ওরা গোমাংস নিয়ে যাচ্ছে ট্রাকে করে। কিন্তু ট্রাকে গোরুর হাড় ছিল। আমার ঠাকুরদার সময় থেকে দেখে আসছি, এভাবে গবাদি পশুর হাড় সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন কারখানায়।’’ সারণের পুলিশ সুপার গৌরব মাংলা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। সাত জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’’ ওষুধ তৈরির জন্য এভাবে গবাদিপশুর হাড় নিয়ে যাওয়া যে স্বাভাবিক ব্যাপার, তা তিনিও বলেছেন। 
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই পশ্চিম ত্রিপুরার এক গ্রামে বছর ৪১’র নন্দু সরকারকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রবল মারধর করা হয় গোরু চুরির অভিযোগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্ত্রী সোনালি সরকার অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিজেপি সরকারের পুলিশ অবশ্য পিটিয়ে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দাবি করেছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর স্বঘোষিত গোরক্ষকদের এই তাণ্ডব দেশজুড়ে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও করে গোরক্ষক বাহিনী তাঁদের কর্মকাণ্ডের প্রচারও চালায়। তাই বিহার এবং ত্রিপুরায় দ্রুত গ্রেপ্তারি হলেও পিটিয়ে হত্যা বন্ধ করতে আদৌ কোনও কঠিন সাজা হবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment