বইকথা — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
অক্ষয়নামা
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
প্রিয় বন্ধুর সব দেহ সমাহিত করবার সময় এঙ্গেলস বলেছিলেন, " যুগে যুগে তাঁর নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে , আর তাঁর কাজও।" ১৮৮৩ ১৭ মার্চ লন্ডনের হাইগেট কবর খানায় সমাহিত করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু আজও সারা পৃথিবীতে বহু মানুষের পরম শ্রদ্ধার পাত্র তিনি- কার্ল হাইনারিস মার্ক্স। তাঁর অসামান্য জীবন নিয়েই সৌরীন ভট্টাচার্যের ছোটদের জন্য লেখা উন্নত মানের জীবনীগ্রন্থ মার্ক্স। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে। তারপর বহুবার বইটি পুনর মুদ্রিত হয়েছে কেবলমাত্র বিষয়বস্তুর জন্য নয় তার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়বস্তু উপস্থাপনের মুন্সিআনার জন্য। সংক্ষিপ্ত এই গ্রন্থে লেখক মহান দার্শনিকের শৈশব থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বকে তুলে ধরেছেন ২০ টি অধ্যায়ে। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৪। তার মধ্যেই দেখিয়েছেন ব্রাসেলস, প্যারিস এবং লন্ডনে কিভাবে শ্রমিক জীবনকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন এই মহান দার্শনিক। কিভাবে চিনে ছিলেন ইংরেজদের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি। প্রকৃত অর্থেই বিশ্লেষণ করতে পেরেছিলেন পুঁজিবাদী শিল্পের বিকাশ শিল্প শ্রমিক এর বিকাশ এবং চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন কোন পথ দিয়ে সেখান থেকে শ্রমিক শ্রেণীকে নিজেদের মুক্তি আদায় করে নিতে হবে। তার কাছে সবচেয়ে সুখের ধারণা ছিল লড়াই। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পরবার ঘরে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা একটা বিশেষ চেয়ার টেবিলে বসে তিনি রাজনীতি অর্থনীতি ইতিহাস এবং মানুষের সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে পড়াশোনা করেছেন নোট নিয়েছেন এবং তার পরবর্তীকালে সেগুলোকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। লিখেছেন রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির সমালোচনা, লিখেছেন তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ডাস্ ক্যাপিটাল। সৌরেন ভট্টাচার্যের এই বইতে ছোটরা নিজেদের মতন করে চিনতে পারবে। পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া এই মহান দার্শনিককে। জানতে পারবে কোন প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে থেকে তিনি রচনা করেছিলেন মানব সভ্যতার মুক্তির পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক মতবাদকে। তথ্য সম্ভার এবং তাকে অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে শিশু কিশোরদের জন্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই বইটি অবশ্যই বাংলা জীবনী সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
মার্ক্স - সৌরিন ভট্টাচার্য, প্যাপিরাস কলকাতা
Comments :0