গল্প
তিতলির বন্ধুরা
শ্রাবস্তী দাস
তিতলিদের বাড়িটা উত্তর বঙ্গের তরাই অঞ্চলে, দুটো পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে। সে তো যে সে পাহাড় নয়, প্রতিদিন সকালে সোনালি সোনালি রোদে
পাহাড়দুটো ঝলমলিয়ে ওঠে। বৃষ্টির দিনে গাছের ভেজা পাতায় রুপোলি চিকচিক। তিতলিদের বাড়ির সামনে ফুলের বাগান। গাছে গাছে লাল, নীল, গোলাপি, হলদে, বেগুনি নানা রঙের, কত কত ফুল। বসন্ত কালে হাওয়ায় উড়ে উড়ে কত ফুলের পাপড়ি, তিতলিদের উঠোনের ঘাসে, তিতলির পড়ার টেবিলে, বারান্দার এখানে -সেখানে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। ফুলের মিষ্টি গন্ধে সারা বাড়িটা ম-ম করে। ছোট্ট তিতলি মনের সুখে সারা উঠোনে ঘুরে বেড়ায়, আর খেলা করে গাছগাছালির সঙ্গে। পাখি এবং প্রজাতিরাও আসে দল বেঁধে।
আজ খুব সকাল সকাল তিতলির ঘুম ভেঙেছে। আজ যেন অন্যদিনের মতো দেখাচ্ছে না বাগানটাকে। গাছেরাও মন খারাপ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফুলগুলো মাথা নীচু করে মুখগুঁজে রয়েছে, পাখিরাও গান করছে না। প্রজাতিরা ওড়াওড়ি থামিয়ে, ডানাগুটিয়ে লুকিয়ে আছে পাতার আড়ালে। আর তিতলি, সে তো আজ
একবারের জন্যও বাগানেই আসেনি। তিতলির আজ খুব মন খারাপ। আজ
হোলি, রং খেলার দিন। বাবাকে দিয়ে আগের দিনই
সে বাজার থেকে লাল, হলুদ, গোলাপি আর সবুজ রং আনিয়ে রেখেছে। অথচ বাড়িতে তার রং খেলার সাথি কেউ নেই। তাহলে কার সাথে রং খেলবে তিতলি?
বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কতগুলো ছোটো ছোটো
ছেলেমেয়ে,
সারাগায়ে, মুখে, মাথায় রং মেখে হইচই করতে করতে চলে গেল। তিতলি
মনমরা হয়ে সেইদিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর জানলার কাছে বিছানায় গিয়ে
হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইল।
মিষ্টি মিষ্টি হাওয়ারা জানলা দিয়ে দল বেঁধে ঢুকে আসছিল তিতলির ঘরে, আর পর্দা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ফিরে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ হাওয়ার সাথে সাথে পাশের কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো জানলার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ে, যেন তিতলির মাথায়- চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। তিতলির মনে হল, হাওয়া, কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতা, ওরা সবাই যেন বলছে__ আমরা তোমার বন্ধু, চলো আমাদের সঙ্গে তুমি আজ রং খেলবে। বাগান থেকে পেয়ারা গাছের হলুদ পাখিটিও সাথে সাথে ডেকে উঠল - "আমিও তোমার বন্ধু, চলো রং খেলি।"কোত্থেকে একটা মৌমাছি তিতলির ঘরে ঢুকে গুনগুন করে নেচে নেচে বলল- "আমিও আছি তোমার সাথে।"
তিতলি ধীরে ধীরে হাঁটু থেকে মুখ তুলল।
ওর মুখে একঝলক খুশির আলো। বিছানা থেকে নেমে বাগানের দিকে চলে গেল সে। পুতুল মাসি তিতলিকে ফলের রস খাওয়াতে এসে দেখে__তিতলি পিচকারি দিয়ে সবগুলো গাছের ডালে, পাতায় রং ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রজাতিরাও ডানায় মাখছে সেই রং, ফুলকুঁড়িরাও ফুটে উঠেছে আনন্দে। আর চারদিকে রঙে রঙে বইছে খুশির হাওয়া।
Comments :0