দেশের ৪০ কোটি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খাতে কোনও সরকারি আর্থিক সহায়তা পান না। তাদেরকে চিকিৎসার খরচ নিজেদের পকেট থেকে বহন করতে হয়। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সেই খরচ সামলাতে বিপর্যস্ত অবস্থা তাদের। এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রক প্রকাশিত সাসটেনবল ডেভেলপমেন্ট গোলস নিয়ে ন্যাশনাল ইন্ডিকেটর ফ্রেমওয়ার্ক প্রোগ্রেস রিপোর্টে (২০২৩)।
এদিকে রিপোর্টে চিকিৎসার খরচ নিয়ে বৃদ্ধি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, সরকারি সহায়তা না মেলায় নাগরিকের চিকিৎসায় পকেট থেকে খরচ করার হার ক্রমশ বেড়েছে। একই সময়ে চিকিৎসার খরচ এবং ওষুধের দাম বেড়ে চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বহু পরিবারকে সংসারে প্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে চিকিৎসায় খরচ সামলাতে হচ্ছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে কম করে ৯ কোটি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার খরচ সামলাতে তাদের পরিবারের মাসের প্রয়োজনীয় খরচ ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। চিকিৎসার খরচ তাদেরকে একটা বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে চিকিৎসার খরচ বেড়ে চলায় দেশে এই রকম বহু পরিবারে বড় আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ সাল এই সময়েই চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধির এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে দেশে স্বাস্থ্য বিমা সহ নানা কিসিমের স্বাস্থ্য প্রকল্প থাকলেও নাগরিকরা তাতেও চিকিৎসায় ব্যয় সামাল দিতে পারছেন না বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে অন্যতম লক্ষ্য ছিল সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করা। এর মধ্যে দিয়ে নাগরিকরা তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে খরচের ক্ষেত্রে কোনও আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে যাতে না পড়েন তা নিশ্চিত করা। এতে নাগরিকদের উন্নত মানের চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো, সুলভে ভ্যাকসিন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, সেই লক্ষ্যপূরণ হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সরকার একদিকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়েছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় বরাদ্দ কমানোয় সরকারি চিকিৎসায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ কমেছে। বেসরকারি বিনিয়োগে বেসরকারি হাসপাতাল বেড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা খাতে খরচ বেড়েছে। তার প্রভাব পরেছে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার খরচে। চিকিৎসার খরচ বেড়ে চলায় বহু পরিবারকে সংসারের বাজেট ছাঁটাই করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে পকেট থেকে খরচ করার হার বেড়েই চলেছে।
রিপোর্টে সাধারণ নাগরিকদের সংসারের খরচের তথ্য তুলে বলা হয়েছে, যেসব পরিবার তাদের পরিবারের অন্য খরচ কমিয়ে চিকিৎসা খাতে মোট খরচের ১০ শতাংশ ব্যয় করছেন তাদের সেই খরচ বেড়েছে ৪.৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ হারে। যারা তাদের পরিবারের খরচের ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করেন তাদের খরচ বেড়েছে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৩শতাংশ।
সরকারের সামনে দেশে সর্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বেসরকারি ক্ষেত্রে যে উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো রয়েছে তার খরচ বেশি। অন্যদিকে ওষুধের দাম বেড়ে চলেছে। সরকারি নানা প্রকল্প থাকলেও ওষুধের দামে রাশ টানা সম্ভব হয়নি। যে রকম রাশ টানা যায়নি বিপুল হারে বেড়ে চলা বেসরকারি সংস্থার চিকিৎসার খরচে, জানিয়েছে রিপোর্ট।
Comments :0