PROBANDHA | KRISHANU BHATTACHAJEE | VIVEKANANDA COMEBACK | MUKTADHARA | 2025 JANUARY 19

প্রবন্ধ | কৃশানু ভট্টাচার্য্য | স্বামী বিবেকানন্দের কলকাতা প্রত্যাবর্তন | মুক্তধারা | ২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  KRISHANU BHATTACHAJEE  VIVEKANANDA COMEBACK  MUKTADHARA  2025 JANUARY 19

প্রবন্ধ | মুক্তধারা

স্বামী বিবেকানন্দের কলকাতা প্রত্যাবর্তন 
কৃশানু ভট্টাচার্য্য

" পাশ্চাত্যদেশ‌ হইতে প্রত্যাবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে একজন ইংরেজ বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, স্বামীজী,  চার বছর বিলাসের লীলাভূমি গৌরব মুকুটধারী মহাশক্তিশালী পাশ্চাত্য ভূমিতে ভ্রমণের পর আপনার মাতৃভূমি কেমন লাগিবে? আমি বলিলাম, পাশ্চাত্য ভূমিতে আসিবার পূর্বে ভারতকে আমি ভালোবাসি তাম। ‌ এক্ষণে ভারতের ধূলিকণা পর্যন্ত আমার নিকট পবিত্র, ভারতের বাতাস আমার নিকট পবিত্র, ভারত আমার নিকট তীর্থ স্বরুপ।"
শোভাবাজার রাজবাড়ীতে ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৭ চারটে কলকাতার নগরবাসীদের পক্ষ থেকে স্বামী বিবেকানন্দকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের পর অভিনন্দন জানানো হয়েছিল।‌ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় চার হাজার মানুষ। ‌ সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজা বিনয় কৃষ্ণদেব বাহাদুর।‌ স্বামীজীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল একটা রৌপ্যপাত্র এবং একটি মানপত্র। সেই সভায় দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দ সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মূলগত অমিল গুলো। ‌ বলেছিলেন পশ্চিমের লোকেরা মনে করে ভারতবর্ষে মানুষ দরিদ্র ধর্মহীন পরাধীন এবং আধ্যাত্বিক শক্তি শুন্য। তারা ভুলে যায় , যে প্রাণশক্তি ভারতকে সর্বদা সঞ্জীবিত রাখতে পারে। কলকাতার যুবকদের উদ্দেশ্যে তার আহ্বান ছিল , "ওঠো জাগো কারণ শুভ মুহূর্ত আসিয়াছে ওঠো জাগো কারণ তোমাদের মাতৃভূমি এক মহাবলি প্রার্থনা করিতেছেন যুবকদের দ্বারাই এই কার্য সাধিত হইতে পারে।"

কলকাতায় স্বামীজি উপস্থিত হয়েছিলেন ১৯শে ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ শুক্রবার। ‌ সেদিন কলকাতা শহরের শিয়ালদা স্টেশনে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের ভিড়। ‌ বজ বজ থেকে স্পেশাল ট্রেন শিয়ালদা প্রবেশ করবার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান মিরার পত্রিকার সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ সেন।‌ এরপর ঘোড়ার গাড়িতে করে রিপন কলেজ এবং তারপর বাগবাজারে পশুপতিনাথ বসুর বাড়ি। ‌ গোটা রাস্তা গাড়িটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার যুবকরা। ‌ কারণ গোটা দেশের কাছে তখন স্বামীজি এক পুরুষ সিংহ। পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি তুলে ধরেছেন এই বাংলার কথা এই ভারতের কথা। অমৃতবাজার পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, " গত শুক্রবার সকালে সুমহান হিন্দু সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ যখন আমেরিকায় ইউরোপে দীর্ঘকাল কাটাবার পরে প্রত্যাবর্তন করলেন তখনি শিয়ালদহের রেল স্টেশন উৎসব দিনের রূপ ধরেছিল। শিয়ালদহ স্টেশন প্লাটফর্ম সংলগ্ন স্থানে নিকটবর্তী সমস্ত রাস্তায় এক কথায় স্টেশনের চতুরদিকে বিরাট জনতার সমাবেশ হয়। মোটামুটি ২০ হাজার লোক সমবেত হয়েছিল। সমাজের সর্বস্তরের লোক এসেছিল স্বামীজিকে সম্মান ও হৃদয়ের অভ্যর্থনা জানাতে। ‌ সমস্ত পথটি ধজ পতাকা পত্রপুষ্প এবং বিজয় তরনে সজ্জিত হয়েছিল যার উপরে লিখিত ছিল স্বাগত বাণী।"
আসলে এদেশের মানুষ পরাজিত হতে হতেই অপমানিত হতে হতে সেদিন যেন একবার মাথার উঁচু করে দাঁড়াবার সাহস দেখিয়েছিল। আসলে এটাই ছিল ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর দিন।

Comments :0

Login to leave a comment