জয়ন্ত সাহা
কাজ না করেই মাথাভাঙা-১ ব্লকের বৈরাগীহাট পঞ্চায়েতের প্রধান শম্পা রায় চৌধূরি, পঞ্চায়েতের সচিব নিত্যানন্দ বর্মণ ও নির্মাণ সহায়ক সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ তুলে নিয়েছেন পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ করা (২১-২২)প্রায় ৮৬ লক্ষ টাকা!
২১ মার্চ এই অভিযোগ লিখিত ভাবে জমা পড়ে মাথাভাঙার মহকুমা শাসকের কাছে। ওই অভিযোগ পত্রে ১৫ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল বৈরাগীহাট পঞ্চায়েত এলাকায় নাকি ৪ বার সরেজমিনে তদন্তে এসে সব কিছু ঠিক আছে বলে গেছে এমনটাই দাবি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের। এদিকে যে ১৫ জন উন্নয়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছিলেন তাঁরাও ফের মহকুমা শাসককে চিঠি দিয়ে জানায় তাঁরা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে!
পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি অভিযোগকারিরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেই অভিযোগ তুলে নিয়েছে।
এরই মধ্যে অবশ্য আরেক অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় বৈরাগীহাটে। গণশক্তি সহ অন্যান্য সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের দিনই এই গ্রাম পঞ্চায়েতের আরেক ঠিকাদার যিনি আবার তৃণমুলের প্রাক্তন অঞ্চল সহসভাপতি ছিলেন, সেই রঞ্জিৎ বর্মণের বাড়িতে যান প্রধানের স্বামী সহ কয়েকজন। তার বাড়িতেই দিনভর সাইনবোর্ড লেখা হয়। যেগুলি সাধারণত কাজ হবার লাগানো হয়। রাতেই কয়েকটি বোর্ড নিয়ে গেলেও বেশ কয়েকটি এখনও রঞ্জিৎ বর্মণের বাড়িতেই রয়েছে! বোর্ডগুলি পঞ্চদশ অর্থ কমিশন(২১-২২)এর ও পিবিজি(পারফরমেন্স বেস্ট গ্র্যান্ট) (২১-২২) তহবিলের কাজের। পিবিজি(২১-২২)এর কাজের বোর্ড কেন এত দিন পর লেখা হলো সেটাও যথেষ্ট সন্দেহের।
উল্লেখ্য ঠিকাদার রঞ্জিৎ বর্মণ ১০০ দিনের কাজ করেছেন প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার। যার টাকা আটকে রয়েছে! ২৭মার্চ রঞ্জিৎ বর্মণ জানতে পারেন ১০০ দিনের টাকায় তার করা কাজের উপর বোর্ড লাগিয়ে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের (২১-২২)কাজ বলে তদন্তে আসা টিমকে দেখানো হচ্ছে। ফোনে এই খবর পেয়েই রণজিৎ বর্মণ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এখন তিনি শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। মঙ্গলবার রঞ্জিৎ বর্মণের মেয়ে ও এক আত্মীয় এই অভিযোগ করেন।
প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ১০০ দিনের হয়ে যাওয়া কাজের ওপর বোর্ড লাগিয়ে তদন্ত কমিটিকে ফিফটিন ফিনান্সের(২১-২২) কাজ বলে দেখিয়ে দেওয়া হলো?
যদিও এ প্রসঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের উপস্থিতিতেই তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এসব ঠিক নয়। ওনার ১০০ দিনের কাজের ওপর পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দের কাজের বোর্ড কেন লাগানো হবে। হয়তো ওনেক আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিতে ফোন করে কেউ ভুল বুঝিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবারই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এসে নুরজামাল হোসেন নামে এক ঠিকাদারকে কাজ করেও টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করতে শোনা গেল সচিবের টেবিলে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন ১০ লক্ষ টাকা অন্যায় ভাবে আটকে রেখেছে পঞ্চায়েত প্রশাসন। সুলতান মিয়া নামে আরেক ঠিকাদার ও গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে ২৩ লক্ষ টাকার কাজ করেও টাকা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ।বকেয়া রয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রঞ্জিৎ বর্মণের ৭০ লক্ষ টাকাও।
ঠিকাদারদের অভিযোগ কাজ করেও তারা বছরের পর বছর টাকা না পেলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠিকাদার মহামুদা খাতুন কি করে কাজের টাকা পেয়ে যায়।
মঙ্গলবার প্রধান এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সচিবের কাছে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন(২১-২২) এর বরাদ্দ ৮৬ লক্ষ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দু’জনেই জানান,বরাদ্দ হওয়া টাকায় কাজ হয়েছে সঠিক ভাবে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেছেন মহকুমা শাসক।সব কিছু ঠিক আছে।প্রধানের স্বামী বলেন,দলেরই কিছু লোক পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে এসব করছে।
তার বক্তব্য, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন(২১-২২)এর কিছু কাজ অন্য জায়গায় হয়েছে। তাই কাগজের নামের সাথে খুঁজলে পাওয়া যাচ্ছে না!
প্রশ্ন হলো এখন পঞ্চদশ অর্থ কমিশন(২২-৩৩)এর কাজ চলছে এখন।তবে ২৫মার্চ তড়িঘড়ি করে প্রধানের স্বামীর উপস্থিতিতে দিনভর পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের (২১-২২)এর বোর্ডগুলি কেনো লেখা হলো?যার কয়েকটি এখনও রঞ্জিৎ বর্মণের বাড়িতে পড়ে রয়েছে।
কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগের প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই গেছে বৈরাগীরহাটে।
শুধু বৈরাগীহাটেই এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়। এই ধরনের অভিযোগ কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার সহ নানা জেলায় আছে।
Comments :0