Com Basudeb Acharia Homage

কমরেড বাসুদের আচারিয়াকে শ্রদ্ধা জনতার, মঙ্গলবার শেষকৃত্য কলকাতায়

রাজ্য

প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা, প্রাক্তন সাংসদ কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার মৃত্যুতে  শোকা জানালেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মানুষ। তিনি বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন। তা এই দুই জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁর দেহ আনা হবে কলকাতায়, সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে। 
রেল শহর আদ্রার তিনি বাসিন্দা ছিলেন আচারিয়া। আদ্রার পলাশকলা ওয়ারলেস ময়দানে যে বাড়িতে তিনি থাকতেন, সেখানে সকাল থেকেই সব মানুষের জন্য ছিল অবারিত দ্বার। বাঁকুড়া লোকসভা আসন থেকে ন’বারের সাংসদ তিনি। কিন্তু দুই জেলার মানুষের বক্তব্য, তিনি তাঁদের শুধুমাত্র সাংসদ ছিলেন না। তিনি তাঁদের ঘরের মানুষ ছিলেন। যে কোন বিপদে-আপদে নির্দ্বিধায় তাঁকে কাছে যাওয়া যেত। 


শিল্পে পিছিয়ে পড়া এই দুই জেলায় শিল্পস্থাপনের আন্দোলনের অন্যতম রূপকার কমরেড বাসুদেব আচারিয়া। মৃত্যুতে শোকার্ত রাজনৈতিক মহল। দলমত নির্বিশেষে প্রয়াত নেতার প্রতি শোক জ্ঞাপন করেছেন সকলে। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় প্রসাদ সিং সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে ফোন করে জানতে চেয়েছেন প্রয়াত নেতাকে নিয়ে আগামী কর্মসূচির কথা। জাতীয় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো ফোন করে শোক জানানোর পাশাপাশি আগামী কর্মসূচি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। 
পুরুলিয়া জেলার শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র পার্টি অফিসে এদিন তাঁর প্রতি শোক জানিয়ে পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় শোক মিছিলের পাশাপাশি কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সিপিআই (এম) জেলা দপ্তরে কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়, আরএসপির জেলা সম্পাদক অত্রি চৌধুরী, ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য কমিটির সদস্য ডা: অসীম সিনহা, সিপিআই(এম) নেতা নিখিল মুখার্জি, বিলাসীবালা সহিস, হারাধন ব্যানার্জি, মহম্মদ ইব্রাহিম, বিমলেন্দু কোনার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বাঁকুড়াতেও তাঁর প্রয়াণের খবর আসতেই শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক মিছিল বের হয়।  মিছিলে সিপিআই (এম) বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি, পার্টি নেতা অভয় মুখার্জি সহ পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, কর্মী, সমর্থক ছাড়াও বাঁকুড়া শহরের বহু মানুষ এই মিছিলে পা মেলান। 
পুরুলিয়া জেলার বিডিআর রেলপথ সম্প্রসারণ, আদ্রা পুরুলিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ তৈরি এবং জেলার একাধিক ট্রেন এবং রেল প্রকল্পের জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে রঘুনাথপুর মহকুমাজুড়ে শিল্পায়েনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার মুখ্য হোতা ছিলেন বাসুদেব আচারিয়া। দিল্লিতে দরবার করে ডিভিসিকে রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পাশাপাশি একসময় মধুকুণ্ডাতেও এসিসিকে নিয়ে এসেছিলেন সিমেন্ট কারখানা করার জন্য। 
ছাতনা, মুকুটমণিপুর রেলপথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত তাঁর উদ্যোগে ২০০৫সালে হয়। এতদিন তা বন্ধ হয়ে থাকার পর ফের যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে সেই আন্দোলনকারীদের বাঁকুড়ার মানুষজনের পাশে থাকার কথা তিনি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বাঁকুড়ার রামসাগরের মৎস্যজীবীদের ডিমপোনা বাইরে যাওয়ার জন্য এখানে রেল স্টপেজের ব্যবস্থা করেন। রামসাগর স্টেশন থেকে বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করার ক্ষেত্রেও বাসুদেব আচারিয়ার অবদান রয়েছে। এছাড়া বাঁকুড়া শহরের লালবাজারে রেল গেটের সমস্যার মেটাতে যে ওভারব্রিজ তৈরি হয়েছে তা বাসুদেব আচারিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই। 
২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর মেজিয়ার কালিকাপুরে বেআইনী কয়লাখাদানে শতাধিক মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর বাসুদেব আচারিয়া পরের দিনই ঘটনাস্থলে যান। আক্রান্তও হন। কিন্তু এই বেআইনি কয়লা কারবারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। তাঁরই প্রচেষ্টায় এই ঘটনার পর মেজিয়া, শালতোড়া এলাকায় সেই সময় বেআইনি কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়।

Comments :0

Login to leave a comment