গল্প
সারপ্রাইজ গিফ্ট
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
শনিবারের সন্ধ্যে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে টিফিন ক'রে মৌজ ক'রে টিভি দেখছি। হঠাৎ, আমার মেয়ে কুঁড়ি এসে আমার চোখের সামনে ওর নতুন ড্রইং-কালারিং বুকটা ধরে বলল, "কমপ্লিট হয়ে গেছে বাবা। এবার আমার সারপ্রাইজ গিফ্টটা দাও।"
ক'দিন আগে বিভিন্ন বন্য জন্তু-জানোয়ার আঁকার আর সেগুলো রঙ করার এই বইটা কিনে দিয়েছিলাম মেয়েকে। বলেছিলাম, এই বইটার সবগুলো অ্যানিম্যাল আঁকা আর কালার করা হয়ে গেলে, ওকে একটা সারপ্রাইজ গিফ্ট দেব আমি। মেয়ে যে সেই উপহারের কথাই বলছে, বুঝতে অসুবিধা হোলো না।
"ও, হয়ে গেছে। দেখি, কেমন আঁকলি?"
মেয়ের কাছ থেকে বইটা নিয়ে পাতা উল্টোই একে একে। দেখি, বেশ যত্ন করেই এঁকেছে, রঙ করেছে মেয়ে। ভাল লাগে আমার। বলি, "বাঃ, ভালোই তো এঁকেছিস আর কালার করেছিস। ভেরি গুড। তা, তোর সারপ্রাইজ গিফ্টটা তো? কাল পাবি।"
"কাল?"
"হ্যাঁ, কাল। তোকে নিয়ে যাব একটা জায়গায় বেড়াতে।"
"বেড়াতে যাব! কোথায় বাবা, বল না, বল না..."
জানি, যতক্ষণ না ওকে বলব কোথায় নিয়ে যাব ওকে, ততক্ষণ এমনই করতেই থাকবে ও। তাই, ঠিক করি, বলেই দিই ওকে, কোথায় নিয়ে যাব।
"কি হোলো বাবা, কি চিন্তা করছো? বল না, কোথায় নিয়ে যাবে?"
"জ়ু-তে।"
আসলে এ'বছর শীতের আমেজটা জম্পেশ করে পড়েছে যবে থেকে, তখন থেকেই মাথায় ঘুরছিল যে এ'বার মেয়েকে আলিপুর চিড়িয়াখানাটা দেখাতে নিয়ে যাব। আগে নিয়ে যাওয়া হয়নি কখনো ওকে চিড়িয়াখানায়। তবে, ওকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাব, একথাটা সোজাসুজি না বলে, ইচ্ছে করেই ঐ ড্রইং-কালারিং বুকটা এনে ওকে আঁকতে দিয়ে ঐ সারপ্রাইজ গিফ্ট-টিফ্ট বলেছিলাম আর কি, ব্যাপারটা একটু ইন্টারেস্টিং করার জন্য!
"জু-তে?" বিস্ময় মাখানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে মেয়ে।
"হ্যাঁরে।"
"দারুণ হবে বাবা। আমি তো কোনোদিন জ়ু দেখিইনি। এই ড্রইং বুকটায় যা যা অ্যানিম্যাল আছে, সেই স-ব অ্যানিম্যালই দেখতে পাব না বাবা জ়ু-তে?"
"পাবিই তো। অ্যানিম্যাল ছাড়াও আরো কতো কিছু আছে!"
"কোন জ়ু-তে নিয়ে যাবে বাবা? ঐ যেটা আমরা যখন দাদুর বাড়ি যাই বাসে, রাস্তার সাইডে পড়ে?"
"হ্যাঁরে। আলিপুর জ়ু-তেই যাব তোকে নিয়ে।"
"ওখানে অ-নে-ক অ্যানিম্যাল থাকে, না বাবা?"
"হ্যাঁ তো। জানিস, রিসেন্টলি, ঐ জ়ু-টা দেড়শো বছরে পা-ও দিল।"
"অ্যাতো পুরোনো!"
"হ্যাঁরে। তোর কাল ভীষণ ভাল লাগবে দেখিস সেখানে।"
"জ়ু-তে যাব। কতো কতো অ্যানিম্যাল দেখব। টাইগার, এলিফ্যান্ট, ডিঅ্যার, বেয়্যার..." হাতে ধরা ড্রইং-কালারিং বুকটার পাতা আনমনে ওল্টাতে ওল্টাতে নিজের মনেই বলতে থাকে মেয়ে।
আর আমি শুধুই দেখতে থাকি অপলকে, আমার বড় আদরের মেয়ের খুশিতে ঝলমলানো মুখখানি।
Comments :0