উগ্র হিন্দুত্বের বেপরোয়া তাড়নায় ভারতবর্ষকে কি শেষ পর্যন্ত জাতের ভিত্তিতে, ভাষার ভিত্তিতে, রাজ্যের ভিত্তিতে ভেঙে টুকরো টুকরো হবার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে মোদী নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি সরকার! বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু জাত-সম্প্রদায়, বহু সংস্কৃতিতে ভরপুর গণতান্ত্রিক ভারত কি আর তার যুক্তরাষ্ট্রীয় বন্ধনে অটুট থাকবে না। ভারতের জনগণ যারা এতদিন নিজেদের সবার আগে ভারতীয় বলে গর্ববোধ করতেন এখন কি তারা নিজেদের সবার আগে হিন্দু, মুসলিম, মারাঠি, বাঙালি, বিহারী ইত্যাদি দাবি করবে। ভারতের নাগরিকরা কি গোটা দেশকে তাদের নিজের দেশ বলে ভাবতে পারবে না। বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ কি তাদের রাজ্যটাকেই তাদের দেশ হিসাবে ভাবতে বাধ্য হবে। নিজের রাজ্য তথা বাসস্থান থেকে তারা কি অন্য রাজ্যে, দেশের যেকোনও জায়গায় যেতে পারবে না। অন্যত্র পড়াশুনা বা কাজের জন্য স্বল্পকাল বা দীর্ঘকাল বসবাস করতে পারবে না।
এমন গুরুতর প্রশ্ন আজ জোরালোভাবে সামনে এসে হাজির হয়েছে। এই ডিসেম্বর মাসেই তিন তিনটি বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে। মোদীর ভারতে এবং তাতে খুন হতে হয়েছে তিন তিনটি তরতাজা মানুষকে যারা ছিল নিতান্তই নিরপরাধ অতি সাধারণ মানুষ। তিন জনকেই মরতে হয়েছে তাদের নিজের রাজ্য থেকে তাদের দেশেরই অন্য রাজ্যে গিয়ে। যে হিন্দুত্ববাদের উন্মাদনার জোয়ারে বিভাজনের রাজনীতি পুষ্ট হয় সেই রাজনীতির ডিভিডেন্ডই তিন তিনবার মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করেছে। আর সেই হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের হাতে খুন হয়েছে তিনজন। একজন ছত্তিশগড়ে মানুষ কেরালায়। একজন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ খুন হয়েছেন ওডিশায় গিয়ে। অপরজন ত্রিপুরার মানুষ খুন হয়েছেন উত্তরাখণ্ডে গিয়ে। আরএসএস’র হিন্দুত্ববাদী ধর্মান্ধতার রাজনৈতিক আদর্শে বেড়ে ওঠা গুন্ডারা প্রথম দু’জনকে খুন করেছে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে। আর তৃতীয় জনকে খুন করেছে চীনের নাগরিক মিথ্যা অজুহাত খাড়া করে। কোনও আগ্নেয়াস্ত্রের অতর্কিত আঘাতে কাউকে খুন করা হয়নি। তিনটি খুনই হয়েছে দলবেঁধে হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে নৃশংস-নির্মমভাবে। হিন্দুত্বের তাড়নায় এরা আধুনিক মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে প্রাগৌতিহাসিক জান্তব পৈশাচিকতাকে আপন করে নিয়েছে। তাই জলজ্যান্ত একজন নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে এদের এতটুকুও হাত কাঁপে না, বিবেক দংশন হয় না। অবশ্য বিবেক থাকলে তো দংশন হবে। হিন্দুত্ববাদী ঘৃণা ও বিদ্বেষ এদের মনুষ্যত্বহীন, বিবেকহীন মনুষ্যত্বের জীবে পরিণত করেছে।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্য এমন বর্বতাকে নীরবে সাহস, সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা জুগিয়ে যাচ্ছে দেশের বর্তমান শাসক। কেন্দ্র ও রাজ্যের ডাবল ইঞ্জিনগুলি গত এক দশক ধরে ক্রমাগত এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছানো ঘটনার সংখ্যা সংখ্যায় কম হলেও ভিন রাজ্য থেকে আসা অহিন্দিভাষী ছাত্র-ছাত্রী, পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর দলবদ্ধ হামলার শত শত হাজার হাজার। হিন্দুত্ববাদীরা এটা বলপূর্বক বুঝিয়ে দিতে চাইছে দেশটা তাদের। অন্য ভাষা, অন্য জাত, অন্য ধর্ম তারা তাদের দেশে বরদাস্ত করবে না। মোদীজি যথারীতি মৌনী বাবা।
editorial
এটা কার দেশ!
×
Comments :0