PALESTINE SOLIDARITY UN

রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিশ্ব জনমত থেকেছে প্যালেস্তাইনের পাশেই

আন্তর্জাতিক

প্রতীম দে

যেন ইজরায়েলই আক্রান্ত। যেন গত শনিবার প্যালেস্তাইনের গাজা স্ট্রিপ কেন্দ্রীয় ‘হামাস’-র হামলাই দুই ভূখণ্ডে প্রথম সংঘর্ষ। গাজাকে ঘিরে রেখে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামরিক অভিযান যেন ‘সঙ্গত এবং যোগ্য জবাব’। 
আপাতত প্রচারের ধরন অনেকটা এমনই। আপাতত আড়ালে এই সত্য যে ইজরায়েল দখলদার রাষ্ট্র। দফায় দফায় কেড়ে নিয়ে প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ড। ভিটে হারিয়েছেন প্যালেস্থাইনের মানুষ। তাঁরা অবরুদ্ধ হয়েই আছেন। এই সত্যি বারবার বেরিয়ে এসেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের একের পর এক অধিবেশনে। ইজরায়েল আর আমেরিকা একঘরে হয়েছে বারবার। বিশ্ব জনমত প্যালেস্তাইনের বিপন্ন মানুষেরই সঙ্গে থেকেছে। 
১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভা ২৯ নভেম্বর প্যালেস্তাইনের জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস হিসাবে বার্ষিক পালনের আহ্বান জানায়। আর চলতি বছরের ১৫ মে প্রথমবারের মতো, রাষ্ট্রসঙ্ঘ আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করেছে ইজরায়েলের দখলদারিতে ঘর হারানো প্যালেস্তাইনের নাগরিকদের।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যদিও বরাবরের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ব্রিটেনের মতো পশ্চিমী দেশ বসতি হারানোর ৭৫ তম বছর পালনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। যারা এবার যুদ্ধে সমর্থন করছে ইজরায়েলকে। 
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নিজে স্বাধীন প্যালেস্তাইনের সমর্থন জানিয়েচিলেন। ভারতের বিদেশনীতি বরাবর সেই অবস্থান ধরে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই অবস্থান থেকে সরছিলেন, এবার সরাসরি ইজরায়েলের আক্রমণকে সমর্থন করছেন। দেশের ভেতর প্রচার করছে বিজেপি, লক্ষ্য সেই বিভাজন। 
সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা সহ দেশের বড় অংশ এর মধ্যেই বলেছে হামলা এবং পালটা হামলা দুই-ই নিন্দনীয়। প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। বন্ধ করতে হবে এই সংঘাত। প্যালেস্তাইনের জনতার স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সিপিআই(এম) মনে করিয়ে এই সংঘাতের মূলে আমেরিকার এক নম্বর সাকরেদ ইজরায়েলের দখলদারিই দায়ী। কেবল চলতি বছরেই ইজরায়েলের সেনা প্যালেস্তাইনে ঢুকে পড়ে হত্যা করেছে প্রায় তিনশো প্যালেস্তিনিয়কে। তার মধ্যে রয়েছেন মহিলারা, রয়েছে শিশুরা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ ইজরায়েলের দখলদারিকে নিন্দা করেছে বারবার। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এবারের অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছিল ইজরায়েল। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের প্রতিনিধি গিলাদ এরদান বলেছিলেন, ‘‘এই ঘৃণ্য অনুষ্ঠানে যোগদানের অর্থ হল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে একটি বিপর্যয় বলে অভিহিত করে প্যালিস্তিনিয় ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে শান্তির যে কোন সুযোগকে ধ্বংস করা।’’
ইহুদিদের জন্য আরবের ভূখণ্ড থেকে বের করা হয়েছিল ইজরায়েলকে। আসলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন দখলদারির রাস্তা বাধাহীন করতে তৈরি হয়েছিল এই রাষ্ট্র। বারবার সংঘর্ষে ঘর ছাড়া হয়েছেন প্যালেস্তাইন সহ আরব দুনিয়ার মানুষ। এই বিপর্যয়কে তাঁরা বলেন ‘নকবা’। 
‘দ্যা হান্ডড্রেড ইয়ার্স ওয়ার অন প্যালেস্তাইন’ বইয়ের লেখক রশিদ খালিদি ২০২১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয় যার নাম ইজরায়েল। আরেকদিকে প্যালেস্তাইনকে প্রতি মুহূর্তে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্যালেস্তিনিয়দের জন্য, এটি তাঁদের সমাজের ধ্বংস, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নেওয়া। তাঁদের অধিকাংশের বহিষ্কার এবং তাদের অধিকাংশের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা।’’
কেন এই সংঘাত? স্পষ্ট হবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের অবস্থান দেখলেই।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৮১ তম প্রস্তাবনায় প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব এবং ১৯৪ তম প্রস্তাবনার প্যালেস্তাইন শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবকে মান্যতাই দেয়নি ইজরায়েল। প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রপতি ক্ষোভে দাবি করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলের সদস্যপদ বাতিল করার।
রাষ্ট্রসঙ্ঘেরই পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে প্যালেস্তাইনের ৫৩০টি গ্রাম, ঘর বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার জন মানুষ।
রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিশ্ব জনমত মান্যতা দেয়নি ইজরায়েলকে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, এমনকি পশ্চিমী বিশ্বের বহু মানুষের কাছে ইজরায়েল আসলে একটি দখলদার রাষ্ট্র।

Comments :0

Login to leave a comment