Supreme Court

মেয়েদের নিয়ে ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্টের তোপ কলকাতা হাইকোর্টকে

জাতীয়

 

কিশোরীদের ‘যৌন আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রণে রাখা’র পরামর্শ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ল কলকাতা হাইকোর্ট। গত অক্টোবরে ধর্ষণের এক মামলায় অভিযুক্ত কিশোরকে বেকসুর মুক্তির রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ব‍‌লেছিল, নিজের যৌন আকাঙ্খাকে নিয়ন্ত্রণ করা বয়ঃসন্ধিকালের প্রত্যেক কিশোরীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। না হলে দু’মিনিটের তৃপ্তির জন্য সে সমাজের চোখে ছোট হয়ে যাবে। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ধর্ষণের দায় কার্যত মেয়েদের উপরে চাপিয়ে দিলেন বলে সেই দিনই নানা মহল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এবার ওই মন্তব্যের জন্য স্বত:প্রণোদিত মামলা শুরু করে কলকাতা হাইকোর্টের অভিমতকে শুক্রবার কার্যত তুলোধনা করল সুপ্রিম কোর্ট। দুই বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং পঙ্কজ মিত্তলকে নিয়ে গঠিত শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ এদিন মামলার শুনানিতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ওই মন্তব্য অত্যন্ত আপত্তিজনক ও অবাঞ্ছিত এবং সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় স্বীকৃত বয়ঃসন্ধিদের অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। বেঞ্চ আরও বলেছে, নিম্ন আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হাইকোর্টের কাজ। এমন মামলায় বিচারপতিরা নিজেদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন বা প্রচার করবেন, তা কাম্য নয়। 

এই ধর্ষণের মামলায় নিম্ন আদালত অভিযুক্ত কিশোরকে পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ ও ৩৬৬ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছর কারাবাসের শাস্তি দিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্ত কিশোরকে বেকসুর মুক্তি দিয়ে রায়ের পক্ষে যুক্তি দেয়, বয়ঃসন্ধির ১৬ থেকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পকসো আইনে নির্দিষ্ট ধারা নেই। সেই সঙ্গেই রায়ে বিচারপতিরা বলেন, নিজের শরীরের বিশুদ্ধতাকে সুরক্ষিত রাখা, নিজের মর্যাদা ও আত্মসম্মানকে রক্ষা করা, লিঙ্গগত বাধাকে অতিক্রম করে নিজের সামগ্রিক বিকাশের জন্য সচেষ্ট হওয়া, যৌন আকাঙ্খাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে রক্ষা করা বয়ঃসন্ধিকালের প্রত্যেক কিশোরীর দায়িত্ব বা দায়বদ্ধতা। আর কিশোরদের বা বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরদের কী দায়িত্ব? না, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা তাদের যৌন আকাঙ্খাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা সরাসরি বলেননি। বদলে তাঁরা মন্তব্য করেছিলেন, এক জন কিশোরীর এই সব দায়িত্বকে সম্মান করা বয়ঃসন্ধির কিশোরের কর্তব্য। সেইভাবেই তাকে তার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ডিভিসন বেঞ্চের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তখনই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন অনেকে। 

এবার সুপ্রিম কোর্ট ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত:প্রণোদিতভাবে বয়ঃসন্ধিকালের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবিধানের ৩২ নম্বর ধারায় মামলা শুরু করল। এর অর্থ, মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের ওই মন্তব্যের যথার্থতা বিচার করবে শীর্ষ আদালত। এদিন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এই মামলা শুরু করা হলো। স্পষ্টতই প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্যকে ভালভাবে নেননি। যে বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছে, এদিনের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের সেই বেঞ্চের বিচারপতিরাও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কার্যত তোপ দেগেছেন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের উদ্দেশে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার, অভিযুক্ত কিশোর এবং ধর্ষিতা কিশোরীকে নোটিশ দিয়েছে নিজস্ব বক্তব্য পেশ করার জন্য। বেঞ্চ রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, ডিভিসন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কি না বা আবেদন জানাতে চায় কি না। বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি ওকা এই মন্তব্যও করেছেন যে, নিম্ন আদালতের সাজার বিপরীত রায় নিয়ে সংশয় আছে বলেও মনে হচ্ছে। তবে তা এই স্বতঃপ্রণোদিত মামলার এক্তিয়ারের বাইরে। এদিন বেঞ্চ এই মামলায় আইনজীবী মাধবী দিবনকে আদালত-বান্ধবের পদে নিয়োগ করেছে এবং তাঁর সহকারীর ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দিয়েছে আইনজীবী লিজ ম্যাথুকে।

Comments :0

Login to leave a comment