Swarupnagar

বরাদ্দ, তবু অধরা কংক্রিটের ব্রিজ

রাজ্য


ডাহা মিথ্যা কথা। দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কথা বলেছেন। ১২ হয়ে গেল। কংক্রিটের ব্রিজ আর হলো না। বরং আমরা গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে বাঁশের সেতু বানিয়ে ছিলাম। জেলা পরিষদের পক্ষ কাঠের সেতু বানিয়ে ছিল ঠিকই। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই সেটা ভেঙে পড়ে। লক্ষ লক্ষ টাকা লুট হয়েছে কাঠের সেতু নির্মাণে। একবার না একাধিকবার। সামনে লোকসভা। তাই ফের ধাপ্পাবাজি দেওয়া শুরু করেছেন জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। এমনই কটাক্ষ উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের তরনীপুর ও বনগাঁর বেড়ে গোপালপুরের আপামর মানুষের। কেন তারা এমন কটাক্ষ ছুঁড়ে দিচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক স্বরূপনগরের ভূমিপুত্র নারায়ণ গোস্বামীর দিকে? জানা গিয়েছে ইছামতি নদীর উপর তরনীপুর ও বেড়ে গোপালপুরের মধ্যে সংযোগকারী কংক্রিটের ব্রিজ তৈরির কথা সম্প্রতি নারায়ণ গোস্বামী জানিয়েছেন একটি সংবাদমাধ্যমকে। সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে স্বরূপনগর সহ সর্বত্র। যা দেখে শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছেন তারা। তারা বলতে থাকেন নারায়ণ গোস্বামী মিথ্যা কথা বলছেন। নির্বাচন এলেই কংক্রিটের ব্রিজের প্রতিশ্রুতি দেন। কংক্রিটের ব্রিজ তো এতদিন হয়েই যেত। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে ব্রিজ হতে দেয় নি। কোথায় গেল বামফ্রন্ট সরকারের বরাদ্দকৃত প্রায় ১৩ কোটি টাকা? ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শিলান্যাস তো হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারায়ণ গোস্বামী তখন স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। ২০১১ সালের মে মাসে তৃণমূল সরকারে। কে দেবে সেই টাকার হিসাব? ইছামতির এপার ওপার দুই পারের গ্রামবাসীদের তোলা এ হেন অভিযোগ সত্য বলে মেনে নিলেন সিপিআই (এম) নেতা হামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারায়ণ গোস্বামী যা বলেছেন তা সর্ব্বৈ মিথ্যা। গ্রামের মানুষ ঠিক কথা বলছেন। তিনি গ্রামবাসীদের কথার সাথে সহমত পোষণ করেন এবং তিনি তুলে ধরেন তরনীপুর বেড়ে গোপালপুরের সংযোগ স্থাপনকারী ইছামতি নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ তৈরির অতীত কাহিনী। হামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্টের তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী তরনীপুরে এসে ইছামতি নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ তৈরির শিলান্যাস করেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েতের রাষ্ট্রমন্ত্রী রানাঘাট বিধানসভার বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। যিনি বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক। এছাড়াও ছিলেন তৎকালীন জেলা সভাধিপতি ভরতচন্দ্র দাস, বাদুড়িয়ার বিধায়ক মহম্মদ সেলিম গায়েন, স্বরূপনগরের বিধায়ক প্রয়াত মোস্তফা বিন কাসেম। আমি তখন স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা এবং নারায়ণ গোস্বামী সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত কংক্রিটের ব্রিজ তৈরির জন্য ১২কোটি ৫৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা অনুমোদন করেছিলেন। ২০১১ সালের মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে ব্রিজ তৈরির কথা বেমালুম ভুলে গেল। আমাদেরও প্রশ্ন কোথায় সেই বরাদ্দকৃত টাকা? আমরাও শুনেছি এবং দেখেছি। সংবাদ মাধ্যমকে নারায়ণ গোস্বামী বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ভারতমালা প্রকল্পের জন্য কংক্রিটের ব্রিজ করা যায় নি। ৮৫ শতাংশজমি অধিগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পরেও। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলছেন রাজ্য সরকারের জন্য ব্রিজ করতে পারছি না জমি জটের কারণে। ওদের দুই দলের নেতা মন্ত্রীরা মিথ্যার বেসাতি করছেন। বামফ্রন্ট সরকারের সময় শিলান্যাসের আগে ইছামতির দুপারে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। মানুষ স্বইচ্ছায় জমি দেয়। বরং তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেই সমস্ত জমি বেদখল হয়ে যায় টাকার বিনিময়ে। নারায়ণ গোস্বামী ভারতমালা প্রকল্পের অজুহাত দিচ্ছেন। ভারতমালা প্রকল্পের সাথে সেতু নির্মাণের কোন সম্পর্ক নেই। আজও অধরা হয়ে রইলো বহু কাঙ্খিত কংক্রিটের সেই ব্রিজ। দুর্গাপুজোর মন্ডপে দাঁড়িয়ে নারায়ণ গোস্বামী সাংবাদিকের বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত ২২ কোটি টাকা অনুমোদন করতে চলেছেন। পুজার পর টেন্ডার হবে। ভালো কথা। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের দেওয়া সেই ১২ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা কোথায় গেল? কে দেবে তার হিসাব? যদিও এই প্রশ্নে নারায়ণ গোস্বামী জানান ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সরকারের প্রথম বাজেট পরবর্তী অর্থ কমিশন বলতে পারবে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বরাদ্দকৃত টাকা কোথায় গেল। পাশাপাশি এদিন তিনি এও বলেন ২২কোটি নয় কমবেশি ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অতি শীঘ্রই হতে চলেছে বহু কাঙ্খিত তরনীপুর বেড়ে গোপালপুরের সংযোগ স্থাপনকারী ইছামতি নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ।

Comments :0

Login to leave a comment