বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতেও ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে নামছে নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, রাজ্যের ক্ষেত্রেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যা নিয়ে সারা দেশে চলছে তোলপাড়।
এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত অনুরোধ জানালেও কমিশন যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে আধার, রেশন বা প্যান কার্ড বিবেচনার বিরোধিতা করে হলফনামা দাখিল করেছে। অথচ এই তিন নথি সকলের কাছে থাকে।
বিহারে যে ১১টি নথি চাওয়া হয়েছে তা নিয়েই বিতর্ক তীব্র। আধার, রেশন বা প্যানের মতো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিচয় নথি বাদ। যে ১১ নথি চাওয়া হয়েছে বিহারে সেগুলি কী। পরপর দেওয়া হলো নিচে:
১। যেকোন পরিচয়পত্র/ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার/ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার যে কোন নিয়মিত কর্মী। , পেনশনপ্রাপকে দেওয়া পেনশন পেমেন্ট অর্ডার।
২। ০১০৭ ১৯৮৭ এই তারিখের পর্বে সরকার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ/ ব্যাঙ্ক/ ডাকঘর/ ভারতীয় জীবনবিমা নিগম/ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কর্তৃক ভারতে প্রদত্ত যে কোন পরিচয়পত্র/ শংসাপত্র/ নথি
৩। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত জন্মের শংশাপত্র
৪। পাসপোর্ট
৫। স্বীকৃত পর্ষদ/ বিশ্ববিদ্যালয় করতৃক প্রদত্ত ম্যাট্রিকুলেশন/ শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র
৬। রাজ্যের উপযুক্ত কতৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত স্থায়ী বাসস্থানের শংসাপত্র।
৭। বনভূমি অধিকর শংসাপত্র।
৮। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়/ তপশিলি জাতি/ তপশিলি উপজাতি বা অন্য কোনো জাতিগত শংসাপত্র। নাগরিকদের জাতীয় রেজিস্টার( যে সমস্ত ক্ষেত্রে এটা রয়েছে।
১০। রাজ্য। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা তৈরি পারিবারিক রেজিস্টার।
১১। কোনো জমি/ বাড়ি বরাদ্দের সরকারি শংসাপত্র।
নথি ছাড়াই বিহারে ফর্ম জমা করাচ্ছে কমিশন। কারণ বহু জন নথি দিতে পারছেন না। ফর্ম জমার সাফল্য কমিশন দাবি করলেও নাম কাদের থাকবে ভোটার তালিকায় বোঝা যাবে নথি পরীক্ষার পর।
বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধন (এসআইআর)কে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিরোধীরা একযোগে এবং কয়েকটি নাগরিক সংগঠন এসআইআর-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পিটিশন দাখিল করেছে সুপ্রিম কোর্টে। বিরোধীরা এসআইআরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ে করেছে, তেমনই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। তাদের একটাই দাবি, অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এসআইআর।
বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশন। শীর্ষ আদালতে দাখিল করা হলফনামায় কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আধার, ভোটার কিংবা রেশন কার্ড মোটেই নাগরিকত্ব প্রমাণের যথাযোগ্য নথি নয়। বস্তুত, নিজেদের অবস্থানকেই ন্যায্যতা দিয়ে কমিশন উলটে দাবি করে যে, এই প্রক্রিয়া ভোটার তালিকা থেকে ‘অযোগ্য ভোটারদের’ ছেঁটে ফেলে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে। সুপ্রিম কোর্টে অবশ্য নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসাবে আধার, ভোটার এবং রেশন কার্ডকে যুক্ত করা সুপারিশ করেছিল গত ১০ জুলাইয়ের শুনানির সময়। পরবর্তি শুনানি আগামী ২৮ জুলাই।
২৪ জুন নির্বাচন কমিশন বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধনের নির্দেশ জারি করে। কমিশনের তরফে দাবি করা হয়, একমাত্র যোগ্য ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন সেজন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমনও যুক্তি দেওয়া হয় যে, দ্রুত নগরায়ন, বারংবার অভিবাসন, তরুণ ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, মৃতদের নাম না জানানো এবং তালিকা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়ার জন্যই এই সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে কমিশনের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের বৃহদাংশ। তাদের অভিযোগ, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই এই ছক কষেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে বিহারের সংশোধিত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ৫২ লক্ষ নাম। সেই তালিকায় ‘মৃত এবং স্থানান্তরিত’ ভোটারদের নাম রয়েছে।
জানানো হয়েছে প্রত্যেকে নথি জমা দিতে হবে না। বিহারে ২০০৩ সালে এসআইআর হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছিল ভোটার তালিকা। কমিশন জানিয়েছে, বিহারের ক্ষেত্রে ২০০৩ সালে জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় যাদের নাম ছিল, তাঁদের নাম থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শেষবার হয়েছিল ২০০২ সালে। অতএব ২০০২ সালের তালিকাকেই নির্ভুল হিসাবে ধরবে নির্বাচন কমিশন।
তবে নির্বাচন কমিশন একটি সূত্রে জানা গেছে, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত মামলার শুনানির রায়ের ওপর ভিত্তি করেই পশ্চিমবঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি শীর্ষ আদালত এই প্রক্রিয়ায় কোনো স্থগিতাদেশ না দেয়, তবে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। আধিকারিকদের মতে, সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং শুধুমাত্র বিজ্ঞপ্তি জারির অপেক্ষা।
Comments :0