CPI(M)

সরাতে হবে সেই আইসি কে, সরব বুনিয়াদপুর

রাজ্য জেলা

দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে জমায়েত বলছেন মহম্মদ সেলিম। ছবি- অপূর্ব মণ্ডল।

অপূর্ব মণ্ডল: বুনিয়াদপুর
পুলিশের দাদাগিরির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শ্রমজীবীদের ক্ষোভ আছড়ে পড়লো বুনিয়াদপুরের এসডিপিও দপ্তরের সামনে। এদিন দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রতিটি ব্লক থেকে অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেত মজুর সহ অন্যান্য বামপন্থী গনসংগঠনের কর্মী সমর্থকরা সিপিআই(এম)’র উদ্দোগে প্রতিবাদ সমাবেশে হাজির হন। মিছিল থেকে শ্লোগান ওঠে ‘পুলিশের দাদাগিরি মানছি না মানবো না’। ‘বংশিহারী থানার আইসির দ্রুত অপসারণ ও উপযুক্ত শাস্তি চাই’। 
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই শ্রমজীবীদের ধর্মঘটে বুনিয়াদপুরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলাকালীন সেখানকার পুলিশ ধর্মঘটে সামিল হওয়া শ্রমজীবীদের উপর ধমক, চমকে ধর্মঘটকে বানচাল করা চেষ্টা করে। বংশীহারী থানার আইসি অসীম গোপ স্থানীয় পার্টি নেতৃত্ব তথা ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের জেলা নেতৃত্ব মাজেদার রহমানের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হটাৎ ওই শ্রমজীবী নেতৃত্বকে চড় মারে প্রকাশ্য রাস্তায় এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার খবর পৌঁছাতেই জেলা জুড়ে বিক্ষোভ, মিছিল, পথসভার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানায় শ্রমজীবী সহ সাধারণ মানুষ। বিগত দুই সপ্তাহ জুড়ে চলে বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ। এদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে বুনিয়াদপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেত মজুর সহ সাধারণ মানুষ লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ উগরে দেয়। বুনিয়াদপুর ফুটবল মাঠ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জাতীয় সড়ক ধরে বুনিয়াদপুর পরিক্রমা করে গঙ্গারামপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে হাজির হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বেশ কিছুক্ষন বিক্ষোভ দেখায় শ্রমজীবীরা। পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিল বুনিয়াদপুরের পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকার সমাবেশের মঞ্চের সামনে এসে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হয়। নেতৃবৃন্দ মহকুমা দপ্তরে গিয়ে দাবির স্মারক লিপি প্রদান করে ডেপুটেশন দেয়।
এদিন সমাবেশ মঞ্চে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা আজ  পুলিশের দাদাগিরির জবাব হাতে নাতেই দিতে পারতাম। আমাদের কমরেডরা যে মেজাজে  ছিলেন ওখানে এসডিও অফিসের সামনে পুলিশগুলিকে তুলে নয়ানজুলীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারতাম কয়েক সেকেন্ডে। কিন্তু সিপিআই(এম) শৃঙ্খলা বদ্ধ বলেই আমরা ক্ষমতা হাতে তুলে নিইনি। আমরা সংবিধানের প্রতি আস্থা রাখি। দেশের আইন কানুন মেনেই ওই পুলিশ আধিকারিকের হিরো ইজমের ব্যাবস্থা করবো আমরা। তিনি বলেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে শ্রমজীবীরা রাস্তায় আন্দোলন করছিলো শান্তিপূর্ণ ভাবেই। এটা তাদের অধিকার। আর মমতার পুলিশ মোদীকে সন্তুষ্ট করতে শ্রমজীবীদের দিকে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে  তাদের পিটিয়ে, ধর্মঘটকে বানচাল করার চেষ্টা করছিলো। কি অপরাধ ছিলো শ্রমজীবীদের ?  তারা একশো দিনের কাজ চেয়েছিল, গরীব মানুষের আবাস যোজনার ঘর চেয়েছিলো, দৈনিক ছয়শত টাকা মজুরি, নয় হাজার টাকা পেনশন, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম সহ শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার চেয়েছিলো। আর তাতেই দাদা দিদি ক্ষেপে গেলো। তিনি বলেন, দক্ষিণ দিনাজপুরে মেডিক্যাল কলেজ নেই। বালুরঘাট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতী অসুস্থ হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, সেই নিয়ে দাদা দিদির প্রতিনিধিরা চুপ।  জেলাতে একটা ইউনিভার্সিটি থাকলেও সেটা শুধু সাইনবোর্ডই ক্ষান্ত। নেই স্থায়ী শিক্ষক, নেই ল্যাবরেটরি, হোষ্টেল, নেই শ্রণিকক্ষ। একটা জমিও বরাদ্দ হলো না। তিনি বলেন, বিজেপি ঘুর পথে দেশে এনআরসি শুরু করে সংখ্যালঘুদের ভোট কাটা শুরু করেছে। ভাবা যায় একশো বছর ধরে যাদের বাপ ঠাকুরদা এ দেশে বসবাস করে এসেছেন তাদের বলছে কাগজ দেখাও। বিবাহিত মহিলাদের বাপের বাড়ির তথ্য না দিলে সে বিদেশি ?  এ কোন দেশে আমরা আছি ?  সেলিম বলেন, ছাব্বিশ হাজার যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকুরী গেলো। আদালত তথ্য চাইলো কিন্তু রাজ্য সরকার দিতে পারলো না। টাকার বিনিময়ে চাকরি চোরদের এখনও বিচার হলো না। আরজি করের বিচার প্রহসনে পরিনত হলো। সারদা, নারদার বিচার অন্ধকারে কাঁদছে। আর বিজেপির নেতারা বলছে সিবিআই ইডি দিয়ে সব করে দিবো। এগুলোতো সবই সিবি আই তদন্ত করেছে। আর এ রাজ্যে এখন কিছু ঘটলেই দিদি আগেই সিবিআই চাইছে। এদের সেটিং কোন স্তরে পৌঁছেছে বুঝতে বাকি নেই মানুষের। সেলিম বলেন, আমাদের লড়াই শুধু এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেই শেষ নয়। আগামীতে এই রাজ্যের পুলিশ ও বিজেপির দালালদের বিরুদ্ধে আরও বড়ো আন্দোলনও জমায়েত করে ওদের দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে। 
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মন্ডলির সদস্য কল্লোল মজুমদার মঞ্চে বলেন, 
ক্ষেত মজুর, শ্রমিক, কৃষক সহ সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পায় ওই পুলিশ আধিকারিক। নিরপরাধ মানুষের উপর আঘাত। ওর লজ্জা হওয়া উচিত। কিন্তু উনিতো  এসেছেন তৃণমূলের দাসত্ব করতে। কিন্তু উনি জানেন না লাল ঝান্ডা ধারিরা ওনার বিরুদ্ধে কতদুর পর্যন্ত যেতে পারে। উনি সিনেমার শুটিং করে হিরো সাজতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনি এখন কোটি কোটি মানুষের ভিলেনে পরিনত হয়েছেন। আর এই ভিলেনের শাস্তি না হওয়ায় পর্যন্ত লাল ঝান্ডা থেমে থাকবে না। 
সারা ভারত ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার বোস বলেন তৃণমূলের আমলে  ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যাওয়া রাজ্যকে আলোর পথ দেখাবে সিপিআই(এম) সহ সহযোগী লাল ঝান্ডাধারী শ্রমজীবীদের লড়াই আনদোলন। আজকের আন্দোলনের মেজাজটাকে গ্রামে গঞ্জে বুথে ছড়িয়ে দিতে হবে। মঞ্চে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক গৌতম গোস্বামী, বামনেত্রী সুচেতা বিশ্বাস প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিআই(এম) দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদক নন্দলাল হাজরা। বিক্ষোভ মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নিগৃহীত শ্রমজীবী নেতৃত্ব মাজেদার রহমান।

Comments :0

Login to leave a comment