বই
অতীতের হাওড়াকে জানতে হলে
শান্তিরাম পাঠক
লর্ড কার্জন ভারতের কী ক্ষতি করেছেন তার হিসাব আমরা এক নিমেষে বলতে পারি। কিন্তু সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নে তিনটি কাজের জন্য তিনি প্রশংসিত— ১। ৩০ আগস্ট ১৯০০ জনগণনার প্রেক্ষিতে গেজেটিয়ার্স-এর সংশোধন পরিকল্পনা।
২। ১৯০৩ ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি ও সরকারি অন্যান্য গ্রন্থাগারকে একত্রিত করে ইম্পিরিয়ল লাইব্রেরি (বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগার) প্রতিষ্ঠা করা ।
৩। ১৯০৪ মনুমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে ‘ভারতের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’।
প্রথমোক্ত কাজের জন্য তাঁর ধারণা ছিল জনগণনাতে নিযুক্ত কর্মী আধিকারিকদের সাহায্য পেলে গেজেটিয়ার সংশোধনের কাজটি সম্পন্ন হবে। তাঁর পরিকল্পনা ব্রিটিশ প্রশাসন খতিয়ে দেখেন। স্যার ডেনজিল ইবেটসন (১৮৪৭—১৯০৮) ১৯০২ সালের ১৭ মার্চ সরকারের তরফে উপরোক্ত কাজ সম্পর্কে প্রস্তাব জমা দেন। এরপরই জেলা গেজেটিয়ার সম্পর্কিত প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় গেজেটিয়ারে দু’টি অংশ থাকবে— প্রথম অংশে জেলার স্থায়ী বৈশিষ্ট্য দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তনশীল বিষয়। এভাবেই জেলা গেজেটিয়ারের কাজ শুরু হয়। ১৮৮০’র দশকে উইলিয়াম উইলসন হান্টার (১৮৪০—১৯০০)লিখেছিলেন ‘এ স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল।’ এর তিরিশ বছর বাদে এল এস এস ও’ম্যালি ও মনমোহন চক্রবর্তী (১৮৬৩—১৯১৯) হাওড়া জেলা গেজেটিয়ার সম্পাদনা করেন। তাঁরা হান্টারের লেখাই অনুসরণ করেছিলেন এমনকি ভাষাও অনেক ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রেখেছিলেন — শুধু নতুন প্রাপ্ত তথ্য সংযোজিত হয়েছিল। ও’ম্যালি ছিলেন আইসিএস অফিসার আর মনোমোহন চক্রবর্তী গেজেটিয়ার সংকলনে বঙ্গীয় সরকার নিয়োজিত সহকারী অধিকর্তা হিসাবে যুক্ত ছিলেন।
প্রশাসনিক স্তরে জেলার মানচিত্র ঐতিহাসিক নিয়মে বহু পরিবর্তন ঘটেছে। ১৮৪৩ সালে হাওড়া জেলার সৃষ্টি। ও’ম্যালির জেলা গেজেটিয়ারের পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৭২ সালে অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯১৬ —১৯৮৮) হাওড়া জেলা নিয়ে আঞ্চলিক ইতিহাস ও প্রবন্ধ অনেক প্রকাশিত হয়েছে। হাওড়া জেলা নিয়ে প্রথম প্রামাণ্য বই চন্দ্রনাথ ব্যানার্জি’র অ্যান অ্যাকাউন্ট অব হাওড়া : পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট, ১৮৭২ সালে প্রকাশিত হয় এই ইতিহাসের ১৫০ বর্ষকে মনে করে কল্যাণ দাস আলোচ্য বইটি সংকলন করেছেন।
সংকলক প্রকাশনাকে সাম্প্রতিকীকরণের ইচ্ছে নিয়ে বইটির সমান্তরাল পাঠ, প্রতিক্রিয়া, পুরাকীর্তি, ইতিহাস, ভূগোল, বাণিজ্য প্রায় সবক্ষেত্রেই তাঁর অনুসন্ধিৎসার স্বাক্ষর রেখেছেন। অতীতের হাওড়ার সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনামূলক আলোচনা বর্তমান সময়ের গবেষক ও পাঠকের কাছে সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে।
প্রকাশনার মুদ্রণ ও সামগ্রিক পরিবেশনা প্রশংসনীয়। আশা রাখি সংগ্রহযোগ্য প্রকাশনাটি অচিরেই গবেষকদের দৃষ্টিতে আসবে।
ও’ম্যালি-মনমোহনের বিবরণে হাওড়া :ফিরে দেখা
কল্যাণ দাস। আমাদের পাঠশালা। হাওড়া চর্চা গ্রন্থমালা-৩। ৬৫০ টাকা।
Comments :0