ISRAEL PALESTINE CONFLICT

রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাব মেনে প্যালেস্তাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি এআইপিএসও‘র

রাজ্য কলকাতা আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

প্যালেস্তাইনে বর্বরতা চালাচ্ছে ইজরায়েল সেনা। গাজা ভূখণ্ডকে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে, এবং শান্তি ফেরানোর দাবিতে  বুধবার কলকাতায় শান্তি মিছিলের ডাক দিল সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা বা এআইপিএসও। 

বুধবারের মিছিলে সর্বাত্মক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মঙ্গলবার এআইপিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি’র প্রোগ্রাম সাব-কমিটি একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইজরায়েলের হানাদারির প্রতিবাদে সর্বোচ্চ জনসংযোগ এবং ঐক্য গড়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। 

এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর সাড়ে তিনটে’র সময় ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হবে। মিছিল যাবে এন্টালি মার্কেট অবধি। সেখানে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভা হবে। 

এই প্রসঙ্গে এআইপিএসও’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কো—অর্ডিনেটর অঞ্জন বেরা বলেছেন, এই প্রথম ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দে সরাসরি ইজরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই আক্রমণ পালটা আক্রমণ বন্ধ হোক। কিন্তু আজকে প্যালেস্তাইন সমস্যা যেই আকার ধারণ করেছে, তারজন্য সম্পূর্ণ দায়ী ইজরায়েল। ইজরায়েল প্যালেস্তাইনে একটা দখলদার শক্তি। 

এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ মনে করাচ্ছেন, ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রসংঘ প্যালেস্তাইন সমস্যার সমাধান হিসেবে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছিল। প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডের মধ্যে এই দু’টি রাষ্ট্রের একটি হবে প্যালেস্তাইন, অপরটি ইজরায়েল। কিন্তু প্যালেস্তাইনের জন্য বরাদ্দ জমির ৮০ শতাংশ বন্দুকের জোরে দখল করে নিয়েছে ইজরায়েল। রাষ্ট্রসংঘের সমস্ত বক্তব্য অগ্রাহ্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ একাধিকবার ইজরায়েলকে দখল করা জমি ফিরিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু আমেরিকার মদতে সেই বক্তব্যকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। তারফলে আজকে সমস্যা এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। 

শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, প্যালেস্তাইনে শান্তি ফেরাতে পারে একমাত্র রাষ্ট্রসংঘের দেখানো পথ। কিন্তু তার আগে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। নির্বিচারে অসহায় নারী, পুরুষ এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হানা চালাচ্ছে ইজরায়েলের বায়ুসেনা। প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও’র নেতৃত্বে প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু আলোচনার প্রক্রিয়া মানতে চাইছে না ইজরায়েল। তারফলে নানা ধরণের বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। তারই একটি হল হামাস। 

অঞ্জন বেরা বলেন, ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের জমি দখল করে রেখেছে। দখল করা জমি থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদতে জনবিন্যাস বা ‘ডেমোগ্রাফি’ বদলে ফেলা হচ্ছে। তারফলে ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে এবং শান্তি প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়েছে। ইজরায়েল এখন বলছে গাজা’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব হল, দশকের পর দশক ধরে প্যালেস্তাইনের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। 

এআইপিএসও নেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত সরকারের নীতি ছিল প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু বর্তমানে জায়নবাদী ইজরায়েল রাষ্ট্রের সুবিধা হয়, এমন নীতি এবং পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে নয়াদিল্লির তরফে। 

শান্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সুর বদলের ফলে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড়সড় খেসারত দিতে হবে ভারতকে। 

এআইপিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে ইজরায়েলের অস্ত্র ব্যবসার সবথেকে বড় গ্রাহকে পরিণত হয়েছে ভারত। আর অস্ত্র ব্যবসা থেকে হওয়া লাভের অর্থ প্যালেস্তাইনকে দমন করার কাজে ব্যবহার করে তেল আভিভ। ইজরায়েলে এই মুহূর্তে চরম দক্ষিণপন্থী একটি সরকার রয়েছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু’র সরকার এই কাজ আরও ব্যপক ভাবে করছে। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার কাজ করছে এআইপিএসও। 

এআইপিএসও নেতৃত্ব এই ক্ষেত্রে গান্ধীজী’র একটি বক্তব্যকে সামনে আনছে। ১৯৩৮ সালে গান্ধীজী বলেছিলেন, ফ্রান্স যদি হয় ফরাসিদের, ব্রিটেন যদি হয় ব্রিটিশদের, তাহলে প্যালেস্তাইনও প্যালেস্তিনীয়দের। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে প্যালেস্তিনীয়দের হঠিয়ে দিয়ে। কিন্তু সেটাও মেনে নিয়ে পিএলও সহ প্যালেস্তিনীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা দুই রাষ্ট্রের ফর্মুলা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ইজরায়েল কোনও আন্তর্জাতিক আইনের পরোয়া না করে সমস্তটা গ্রাস করতে চাইছে। 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment