‘‘ভারতের শাসক দল কেবলমাত্র ধনীদের কথাই শোনে। তাদেরই গুরুত্ব দেয়। অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত যারা, ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু পায় না যারা, লিঙ্গ বৈষম্যে যারা জর্জরিত, সেই গরিবদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাদের কোনও উন্নয়ন হয় না।’’ রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে শাসক দল একটি ধর্মকে গুরুত্ব দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু তাতে ভারতের সাধারণ মানুষের আখেরে কোনও লাভ হবে না।’’
দেশের শাসক দল যে গরিবদের উন্নয়নে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না, সাক্ষাৎকারে তা আরও একবার স্পষ্ট করেছেন অমর্ত্য সেন। বরাবরই বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন অমর্ত্য সেন। অশিক্ষার অন্ধকার, লিঙ্গ বৈষম্যের জেরে দেশের গরিব মানুষের কোনও উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন তিনি। সেন বলেছেন, ‘‘ভারতে এই মুহূর্তে পিছিয়ে থাকা মানুষের কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের আবশ্যিকতা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ প্রয়োজন সমাজের সমস্ত স্তরেই।’’
লোকসভা ভোটের আগে ফের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি মনে করেন, বিরোধী শিবিরের আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের, সেগুলি সংশোধন করা দরকার। ক্ষমতায় এলে দেশে জাতিগত জনগণনা অবিলম্বে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। অর্মত্য সেন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘জাতিগত জনগণনা দেশে প্রয়োজন ঠিকই, তবে পিছিয়ে থাকা মানুষের কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে শক্তিশালী করার জন্য আরও কঠিনভাবে পরিশ্রম করা প্রয়োজন।’’
বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে বিজেপি আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করবে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘‘দেশের সরকারের শ্রেণি-অগ্রাধিকারের অবস্থান এবং একটি ধর্মকে গুরুত্ব দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতের সংবিধান পরিবর্তন করার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের এতে কোনও লাভ হবে না।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যার ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রয়েছে। তাকে শুধুমাত্র হিন্দু সত্তা দেওয়া হলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি এবং বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক প্রকৃতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
Comments :0