CPI(M)

মুখ্যমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি মহিলা হলেও অত্যাচার কমে না, বলছেন প্রার্থীরা

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

CPIM MD SALIM SANDESHKHALI VIOLENCE LEFT FRONT BIMAN BASU NIRAPADA SARDAR  BENGALI NEWS

মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালি বা হাঁসখালির ঘটনায় অপরাধীদের মদত দেন। রাষ্ট্রপতিও মহিলা। কিন্তু নীরব থাকেন উন্নাও থেকে হাথরস বা বিলকিস বানুর ধর্ষকদের সমাদরে বরণ করার ঘটনায়।
এমন ঘটনা পরম্পরবায় নজর দেওয়ার আবেদন জানালেন সিপিআই(এম)’র মহিলা প্রার্থীরা। এবারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী দীপ্সিতা ধর, সোনামণি মুর্মু (টুডু), সায়রা শাহ হালিম, জাহানারা খান, শ্যামলী প্রধান রবিবার একযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে। মহিলাদের ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন যুবনেত্রী এবং সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি।
প্রার্থীরা বলছেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িতদের মদত দিচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলই। শীর্ষ প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক পদে মহিলা আসীন হলেও আক্রমণ বাড়ছে। 
বোলপুরের প্রার্থী শ্যামলী প্রধান বলেছেন, ‘‘ বিধায়ক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিয়মিত বাধার মুখে পড়তাম। সেখানেও কাজ করতে দেওয়া হতো না। স্কুল ছাড়া পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত সমিতিতে টাকা খরচ করতে দেওয়া হয়নি।’’
সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির এই সদস্য বলছেন, ‘‘আজকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে এত বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রচারে দেখছি মেয়েরা ভয়ে রয়েছে। তাঁরা বলছেন যে তাঁদের সরব হতে দেওয়া হচ্ছে না। বলছেন যে তাঁদের কর্মসংস্থান কী হবে।’’ 
ঝাড়গ্রামের প্রার্থী সোনামণি বলেছেন, ‘‘কন্যাভ্রূণ অবস্থা থেকে অত্যাচার হয়। বান্দোয়ানে কাজ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছি। দেখেছি যে কিশোরী মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও হয়। আমরা এদের নিয়ে কাজ করেছি। স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার, স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। বহু স্কুলেই দেখেছি তৃণমূল বললেও স্যানিটারি প্যাডের ব্যবস্থা থাকে না।’’ 
তিনি বলছেন, ‘‘সন্দেশখালি এবং মণিপুর এগুলি উদাহরণ। এগুলি আচমকা হয় না। এ রাজ্যে তৃণমূল আসার পর মহিলা নির্যাতন বেশি হয়েছে। আদিবাসী নারীদের ওপর অত্যাচার বেশি হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন দলিত বা তফসিলি জাতির মহিলারা। মুখ্যমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি কিন্তু সরব হন না।’’
মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা খান এবার প্রার্থী আসানসোলে। বিধায়ক ছিলেন। তিনি অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘বিধানসভায় নারী নির্যাতনে প্রতিবাদ করেছিলাম। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড তুলেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ছোট্ট ঘটনা। নিরাপদ সর্দার (বসিরহাটের প্রার্থী, সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক) বলতে উঠেছিলেন। তখন শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে। প্রবল বাধা দেয় তাঁর দলবল। উপাধ্যক্ষ সোনালী গুহ মাইক বন্ধ করে দেন। নিরাপদ সর্দার সেদিন যা বলতে চেয়েছিলেন আজ রাজ্যের মানুষ তা বলছেন।’’ 
জাহানারা বলেছেন, ‘‘বামপন্থীরা সংসদে বিধানসভায় নেই। দুর্নীতি এবং নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হওয়ারও কেউ থাকছে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সরকারে রয়েছে বিজেপি। এই দল গোটা দেশকে বিভক্ত করছেন। সকলকে রুখতে হবে।’’ 
মাদ্রাসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার বিকাশ করেছিল। তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন দশ হাজার মাদ্রাসা হবে। হয়নি। সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের কাজে জন্য ‘হাব’ করবেন বলেছিলেন। তা-ও হয়নি। আর তিনিই রেড রোডে ঈদের নমাজে বলেছেন ‘বামপন্থীরা যেন ভোট না পায়।’ ঈদে শুভেচ্ছা জানানোর বদলে রাজনীতি করছেন।’’ 
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম নারী নির্যাতনের একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ১৩৪ জন সাংসদ এবং বিধায়কের বিরুদ্ধে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ২১ সাংসদ এবং ১১৩ বিধায়ক। বিজেপি’র ৭ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে, ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে সাংসদ এবং বিধায়কের নামে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা রয়েছে। ২৬ জন এমন সাংসদ এবং বিধায়ক রয়েছেন রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হলেই মহিলারা নিরাপদ নন।’’
শ্যামলী প্রধান বলেছেন, ‘‘মহিলাদের কর্মসংস্থান, সম্মান এবং আত্মরক্ষার পরিকল্পনা নিচে নিয়ে যেতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস-কে প্রসারিত করার ব্যবস্থা করছেন। ফলে মনুবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। নারীদের জীবনে তার প্রভাব পড়ছে। আমরা প্রতিহত করতে চাই।’’

Comments :0

Login to leave a comment