KOLKATA CABLE

কেবল অপারেটরদের অসম লড়াইয়ে ঠেলে দিচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশন

কলকাতা রাজ্য জেলা

KOLKATA OVER HEAD CABLE KMC BENGALI NEWS তারের জঙ্গলের দায় কেবল অপারেটরদের ঘাড়ে ঠেলতে মরিয়া কলকাতা কর্পোরেশন

কলকাতা শহরে দৃশ্যদূষণ আটকাতে তারের জঙ্গল সরানোর উদ্যোগ নিল কলকাতা কর্পোরেশন। এই মর্মে বুধবার কেবল এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী সংস্থা বা এমএসও এবং ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থা বা আইপিও, জিও, ভোডাফোন, এয়ারটেলের মতো বহুজাতিক সংস্থা এবং কেবল অপারেটরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যদিও কেবল অপারেটরদের দাবি, তাঁদের জীবীকা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁকেও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে নারাজ কেবল অপারেটররা। 

কর্পোরেশন সূত্রে খবর, কলকাতাকে তারের জঙ্গল মুক্ত করার জন্য পাইলট প্রজেক্টের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ৪০টি রাস্তাকে প্রাথমিক ভাবে তার মুক্ত করা হবে। ল্যাম্পপোস্টে ঝোলা তারগুলিকে ১৫ ইঞ্চির একটি পাইপের সাহায্যে মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সমস্ত এমএসও এবং আইপিও’কে কর্পোরেশনের তরফে বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পাইপের মধ্যে তার না নিলে তারের সংযোগ ছিন্ন করে দেবে কর্পোরেশন। 

যদিও এই গোটা প্রক্রিয়ায় জীবীকা হারানোর ভয় পাচ্ছেন শহরের ক্ষুদ্র কেবল অপারেটররা। তাঁদের বক্তব্য, কর্পোরেশন এই তারবাহী পাইপের রক্ষণাবেক্ষণের টাকাও ব্যবহারকারীদের থেকে তোলার চেষ্টা করছে। একলপ্তে ১৫ বছরের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জমা করতে হবে। 

ইতিমধ্যেই কলকাতায় একাধিক জায়গায় সমস্ত তারকে মাটির তলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারজন্য কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে আড়াই কোটি টাকা খরচ দেখিয়েছে বিএসএনএল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কেবল অপারেটররা জানাচ্ছেন, তাঁদের কাজের পরিধী খুবই কম।  তাই বহুজাতিক সংস্থাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েক লক্ষ করে টাকা একবারে কর্পোরেশনের কোষাগারে জমা দিতে পারলেও, কেবল অপারেটরদের পক্ষে সেটা করা সম্ভব নয়। কার্যত জীবীকা হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা। 

এদিন কর্পোরেশনের ডাকা বৈঠকেও এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার হন কেবল অপারেটররা। চাপের মুখে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাধ্য হন সাময়িক ভাবে কেবল অপারেটরদের এই নিয়মের বাইরে রাখতে। 

কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের একটা অংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুদ্র কেবল অপারেটররা তৃণমূল পরিচালিত কর্পোরেশনের ভুল নীতির শিকার। ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে থাকা তারের অধিকাংশটাই বাতিল নইলে এমএসও এবং আইএসপি সংস্থাগুলির মোটা ওপটিক্যাল কেবল। এই বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে লাগাম পরাতে না পেরে দৃশ্যদূষণের যাবতীয় দায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কেবল অপারেটরদের ঘাড়ে চাপিয়ে এসেছে ফিরহাদ হাকিম। তারফলে ব্যপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কেবল অপারেটরদের মধ্যে। 

সেই ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া গিয়েছে মঙ্গলবারের বৈঠকেও। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নামতে হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি ফিরহাদ হাকিমের ফোন মারফৎ কেবল অপারেটরদের জানিয়েছেন, তাঁর সরকার অপারেটরদের পক্ষেই রয়েছে। সেপ্টেম্বরে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কেবল অপারেটরদের বৈঠকের বিষয়ে প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। 

যদিও মমতা ব্যানার্জির এই সদিচ্ছাকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন রাজ্যের সিংহভাগ কেবল অপারেটর। রাজ্যের বহু জায়গায় জিও’র মতো বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থাগুলি মাথার উপর দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তারগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করলেই পুলিশ দিয়ে কেবল অপারেটরদের গ্রেপ্তার করানো হচ্ছে। মঙ্গলবারই কোন্নগরে এই কায়দায় এক কেবল অপারেটরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতা, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি সহ রাজ্যের প্রায় সর্বত্র এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

এই বিষয়টিকে তুলে ধরে কেবল অপারেটরদের বক্তব্য, সরকার আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনি আমাদের পাশে রয়েছেন। আর তাঁরই পুলিশ বহুজাতিক সংস্থার হয়ে কাজ করছে। সাধারণ কেবল অপারেটরদের হেনস্থা করছে। 

মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববাংলা কেবল টিভি অপারেটর্স ইউনিয়নের সভাপতি শঙ্কর মন্ডল। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ যেখানে বাস্তবতা ভিন্ন, সেখানে আমরা মৌখিক আশ্বাস চাইনা। প্রশাসন আন্তরিক ভাবে আমাদের কথা ভাবুক। নইলে ১০ লক্ষের কাছে পরিবার জীবীকা হারিয়ে পথে বসবে আগামী দিনে।’’

Comments :0

Login to leave a comment