Dengue

মহানগরে ডেঙ্গুতে মৃত আরও তিন

রাজ্য

আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ডেঙ্গুর ছোবল। সোমবার ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলল কলকাতা-বিধাননগর এলাকা থেকে। বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, রাজ্যে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৮০। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি। তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে রক্তের প্লেটলেটের। আবার ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখনও সরকারের তরফে তেমন কোনও উদ্যোগও নেই। এই পরিস্থিতিতে বিস্ময়করভাবে ডেঙ্গু মৃত্যুর তথ্য গোপন করছে রাজ্য সরকার, অভিযোগ সাধারণ মানুষের। ক্ষুব্ধ মানুষের বক্তব্য, ডেঙ্গুতে এতগুলি মৃত্যুর সমস্ত দায় সরকারের।    
সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে এদিন সকালে ডেঙ্গুতে মারা যান সোমনাথ দে (৩৬)। কেষ্টপুরের বাসিন্দা সোমনাথ হঠাৎই শুক্রবার জ্বর এবং ডেঙ্গুর অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে শনিবার ভর্তি হন হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপটিক শক এবং মাল্টিঅর্গান ফেলিওর হয়েছিল রোগীর। রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে এদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ওই হাসপাতালেরই এক অস্থায়ী সাফাইকর্মী বুবাই হাজরা (২৮)। জানা গিয়েছে, ট্যাংরা এলাকার বাসিন্দা যুবক বুবাই হাজরা গত ৭ দিন ধরেই এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে পরিস্থিতির অবনতি হয়। সোমবার মৃত্যু হয় তাঁর।
সাফাই কর্মীর মৃত্যুর খবর ট্যাংরা এলাকায় পৌঁছাতেই পৌরসভার বিরুদ্ধে এদিন ব্যাপক ক্ষোভ উগড়ে দেন এলাকার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় ভয়ঙ্কর মশার উপদ্রব সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এলাকা সাফাইয়ের উদ্যোগই নেই কর্পোরেশনের। ডেঙ্গুকে কেন বাড়তে দেওয়া হচ্ছে? স্বভাবতই ডেঙ্গুর মৃত্যুর দায় নিতে হবে সরকারকেই। এদিনই খবর মিলেছে কলকাতার রুবি জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানপুরের বাসিন্দা আবু সৈয়দ (৪৮) ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন জ্বর নিয়ে। রবিবার রাতে তিনি মারা যান। সোমবার এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
এছাড়াও জানা গেছে কলকাতার বেলেঘাটা হাসপাতালে সোমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন কলকাতার তপসিয়া এলাকার বাসিন্দা মনিকা বেগম (৩৩)। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় রবিবার রাতে অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় বেলেঘাটা আইডি-তে। সোমবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শনিবার মৃত্যু হয়েছে ট্যাংরা এলাকার ক্রিস্টোফার রোডের বাসিন্দা রিঙ্কি ভট্টাচার্যের। জানা গিয়েছে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আরজি কর হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান তিনি। 
প্রতিয়নিয়ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে রাজ্যে। কিন্তু সব সময়ে সব মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসছে না। স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্যে ডেঙ্গুতে রাজ্যে এপর্যন্ত এতগুলি মৃত্যুর কোনও উল্লেখ নেই। পরীক্ষা কম হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও কম দেখানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের বক্তব্যেই জানা যাচ্ছে, কলকাতা-বিধাননগর এলাকায় ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু। এই রোগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে শিলিগুড়ি, হুগলী, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া-বালি, জলপাইগুড়ি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। সোমবার স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, গোটা রাজ্যের ডেঙ্গু পজিটিভিটি রেট প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে কলকাতা সহ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকাগুলিতে পজিটিভিটি রেট ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।    
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ডেঙ্গু টাইপ-৩ অতীব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এখন। ডেঙ্গু তার চরিত্র কিছুটা বদল করায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে। চিকিৎসা ভালোভাবে শুরু করার আগেই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে রোগীর। ডেঙ্গুর কারণে শরীরে অন্যান্য রোগগুলিও অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এই মুহূর্তে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসাধীন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের আর কতদিন বেড দেওয়া যাবে বা রক্তের প্লেটলেট জোগান দেওয়া যাবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত চিকিৎসকরা। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, গত ৫বছরের মধ্যে এবছরই ডেঙ্গু ভয়াল ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের কথায়, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যবস্থার অনেকখানি ঘাটতি থেকে গিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে। 
সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বক্তব্য, দিশাহারা সরকারের হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে পরিস্থিতি। রাজ্যের কিছু জায়গায় একেবারেই মহামারীর পরিস্থিতি। কবে শীত পড়বে, আর ডেঙ্গু কমবে— সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। ডেঙ্গুতে এতগুলি প্রাণ চলে গিয়েছে আর মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণ নীরব রয়েছেন। বিভিন্ন পৌরসভা এবং স্বাস্থ্য দপ্তরে শুধু বৈঠকের পর বৈঠক হয়ে চলেছে, বিজ্ঞাপন আর প্রচারের বাণী ছুটেছে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের মুখে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাড়ির আশেপাশে পৌরসভা বা প্রশাসনের তরফে কোনও ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজ দেখতে পাচ্ছেন না। বহু ক্ষেত্রে সিপিআই(এম) সহ বাম কর্মী, বাম ছাত্র-যুব মহিলাদের কিছু কিছু উদ্যোগের প্রশংসা করছেন সাধারণ মানুষ। শিলিগুড়িতে এখন চলছে ওয়ার্ড ভিত্তিক জনসচেতনতা প্রচার কর্মসূচি, এলাকা পরিষ্কার রাখার কাজ।

Comments :0

Login to leave a comment