EAST BENGAL VS MOHUN BAGAN

উপভোগ্য ফুটবল দেখার অপেক্ষায় রবিবারের কলকাতা

খেলা

durand cup mohun bagan indian football bangladesh army east bengal bengali news

অপেক্ষা আর কয়েকটা ঘন্টার। তারপরেই রবিবাসরীয় যুবভারতীতে ডুরান্ড ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি। ফাইনালে প্রিয় দল, তার উপরে ডার্বি, স্বাভাবিক নিয়মেই চড়েছে উত্তেজনার পারদ। 

এই ডার্বিকে ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে মূলত দুই ভাবে। প্রথমত, ডুরান্ডের গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় ইস্টবেঙ্গলের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয় মোহনবাগান। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম ডার্বিতে জয় পায় ইস্টবেঙ্গল। টানা ৮টি ডার্বি পরাজয়ের শেষে। এই মরশুমের শুরুতে মোহনবাগানকে অপ্রতিরোধ্য মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই মনে হওয়া যে নিতান্তই খাতায় কলমে, তা হাতে কলমে প্রমাণ করে দিয়েছেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। নিজের তুখোড় ফুটবল মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই পরাজয়ের ‘বদলা’ নিতে মরিয়া বাগান ফুটবলাররা। তারফলে তুঙ্গে উঠেছে উন্মাদনা। 

উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে স্রেফ উবে গিয়েছে এই বড় ম্যাচের টিকিট। শুক্র এবং শনিবার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি দুই দলের সমর্থকদের একটা বড় অংশ। বড় ম্যাচের টিকিট কেন অনলাইনে বিক্রি করা হলনা, উঠছে সেই প্রশ্ন। দুই দলের সমর্থকদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেলেও, কালোবাজারে দেদার বিকোচ্ছে টিকিট। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের নেতারাও নিজেদের অনুগামীদের মধ্যে ঢালাও টিকিট বিলি করছে বলে অভিযোগ। শনিবার মিলিত ভাবে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সমর্থকরা টিকিট সঙ্কটের প্রতিবাদেও সামিল হন।

সব মিলিয়ে টানটান উত্তেজনাকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে মাঠে নামবে দুই দল। 

ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের মোহনবাগান এবং ফিরতি ম্যাচের মোহনবাগানের মধ্যে কোনও মিল নেই। বরং কিছুটা এগিয়ে থেকেই শুরু করবে তাঁর প্রতিপক্ষ দল।’’

মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো যদিও খোলাখুলি বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের মত বড় দলকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি জয়কে উপভোগ করতে চাই আমরা।’’

সেমিফাইনালে মোহনবাগান এফসি গোয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করে। দলের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ইউরো কাপ খেলে আসা ফুটবলার আর্মান্দো সাদিকু। কোনও রাখঢাক না রেখেই সাদিকু জানিয়েছেন, ‘‘ প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হার আমি মেনে নিতে পারিনি। ফিরতি ম্যাচে বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামব।’’

দুইদলের সরকারি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দল।

লাল হলুদ কোচ প্রথমেই নিজের দলের উপর থেকে যাবতীয় প্রত্যাশার চাপ সরিয়ে ফেলেছেন। কুয়াদ্রাত বিলক্ষণ বোঝেন, কী অসম লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। গত তিন মরশুম ধরে আইএসএল-এ ন্যূনতম সাফল্যের মুখ দেখেনি ইস্টবেঙ্গল। সেই জায়গা থেকে গ্রুপ পর্যায়ের ডার্বি জয়, গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল, কোয়ার্টার এবং সেমিফাইনালে জয়। কুয়াদ্রাত এবং তাঁর টিম জানেন, ভাঙাচোরা একটা দল নিয়ে এতদূর আসা নেহাত কম কথা নয়। আর যেহেতু মরশুমের প্রথম ডার্বি তিনি ইতিমধ্যেই জিতে ফেলেছেন, তাই ফাইনালে রেজাল্ট অন্যরকম হলেও সমর্থকদের রোষের মুখে পড়তে হবেনা তাঁর দলকে। বরং আইএসএল মরশুম শুরুর আগে ভালো রকম প্রস্তুতি সারার সুযোগ পেলেন তিনি। তাই দলের উপর বাড়তি বোঝা চাপাতে নারাজ তিনি। 

অপরদিকে মোহনবাগানকে এই ম্যাচ জিততেই হবে। এটা বিলক্ষণ বোঝেন বাগান কোচ ফেরান্দো। মরশুমের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের কাছে দুইবার হারলে তাঁর চাকরি খোয়ানো অসম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই দলের টিডি হিসেবে রয়েছেন অ্যান্টোনিও লোপেজ হাবাস। এই ম্যাচ হারলে তাঁর জায়গায় হাবাসের আসা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তাই দলের মধ্যেও আগ্রাসী মনোভাব ঢুকিয়ে দিয়েছেন ফেরান্দো।

এই ম্যাচের ফলাফল নির্ভর করবে দুই দলের মাঝমাঠের উপর। কার্লেস কুয়াদ্রাত মূলত ‘পোজেশনাল ফুটবল’ খেলার দর্শনে বিশ্বাসী। অর্থাৎ যতটা সম্ভব বলের দখল নিজেদের কাছে রাখতে হবে। ইস্টবেঙ্গলের সল ক্রোসপো, বোরহা হেরেরার মত ফুটবলারদের সেই কারণেই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরসঙ্গে রয়েছে উইং প্লে। ইস্টবেঙ্গলের বাঁ প্রান্ত এবং ডান প্রান্ত দিয়ে খেলেন নওরেম মহেশ এবং নন্দকুমার শেখর। দুইজনেই গোলটা চেনেন। ডানপ্রান্তিক আক্রমণে উঠেই প্রথম ডার্বিতে গোল করেছিলেন নন্দকুমার। এরসঙ্গে রয়েছে রক্ষণভাগ। সেখানে মন্দার রাও দেসাই, জর্ডন এলসি এবং হারমানজোৎ সিং খাবরা যথেষ্ট নির্ভরতা যোগাচ্ছেন। 

ইস্টবেঙ্গলের দূর্বলতার জায়গা মূলত স্ট্রাইকার। গত মরশুমে দল বাজে খেললেও আইএসএল-এ টপ স্কোরার হয়েছিলেন ক্লেইটন সিলভা। কিন্তু এই মরশুমে এখনও তেমন ভাবে ফর্মে ফেরেননি ক্লেইটন। দলের অপর স্ট্রাইকার জ্যাভিয়ের সিভেরিও’র ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদিও নর্থ-ইস্ট ম্যাচে ক্লেইটন তাঁর গত মরশুমের ফর্মের কিছু ঝলক দেখিয়েছেন। তিনি মাঠে নামার পরেই পাসিং ফুটবলের ঝাঁঝ বাড়ে। নন্দকুমারের গোলও হয়েছে তাঁর পাস থেকে। 

ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতার জায়গাটি মোহনবাগানের সবথেকে বড় শক্তি। নিজেদের আপফ্রন্ট শক্তিশালী করার জন্য সবুজ মেরুন ব্রিগেড দলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের স্ট্রাইকার জেসন কামিংসকে। প্রথম ডার্বিতে বেমানান লাগলেও পরবর্তীকালে ডুরান্ড এবং এএফসি কাপে নিজের ফর্ম খুঁজে পান কামিংস। তাঁর জায়গা নেওয়ার দক্ষতা এবং তীব্র গতি আটকাতে হিমশিম খান প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। তারফলেই তাঁরা ফাউল করে বসেন। এবং পেনাল্টি থেকে গোলের মুখ খোলে মোহনবাগান। 

কামিংসের পাশাপাশি বাগানের বাকি ৩ বিদেশি হুগো বুমৌস, আর্মান্দো সাদিকু এবং দিমিত্রি পেত্রাতসও গোলের মুখ চেনেন। বুমৌস এবং পেত্রাসত গত মরশুমের মোহনবাগানের সাফল্যের অন্যতম কারিগর। সাদিকুও ক্রমেই নিজের জাত চেনাচ্ছেন। তুলনায় মোহনবাগানের রক্ষণ কিছুটা দুর্বল। বাঁ প্রান্তে অনিরুদ্ধ থাপার ভুলেই প্রথম ডার্বিতে গোল হজম করেছিল মোহনবাগান।

ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগ সবুজ মেরুন আক্রমণ রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেক্ষেত্রে ম্যাচ জিততে হলে ইস্টবেঙ্গলের কাউন্টার অ্যাটাক রুখতেই হবে মোহনবাগানকে। এর পাশাপাশি সেটপিস মুভমেন্টও কিছুটা এগিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বিশেষ করে কর্ণারের ক্ষেত্রে। ইস্টবেঙ্গলের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জর্ডন এলসে ৬ ফুটের উপর লম্বা। তাঁর হেড রোখাও চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে মোহনবাগানের ক্ষেত্রে। 

অপরদিকে মাঠের মাঝখান দিয়ে তৈরি হওয়া বাগান আক্রমণ সামলানো খুব সহজ হবেনা ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। 

Comments :0

Login to leave a comment