CHILD RAPE

ছ’বছরে দেশে শিশুকন্যা ধর্ষণ বেড়েছে ৯৬%

জাতীয়

 নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছু সময় পর থেকেই দেশে বাড়তে শুরু করেছে শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনা। ২০১৪-তে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। আর ২০১৬ থেকে ২০২২’র মধ্যে শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৯৬ শতাংশ। দেশের অন্যতম এনজিও ক্রাই এক রিপোর্টে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। গত বুধবারই জাতীয় কন্যাসন্তান দিবসে দেশের কন্যাসন্তানদের ‘অদম্য উদ্দীপনা’ ও ‘গুণ’-কে অভিবাদন জানিয়ে তাদের ‘পরিবর্তন-প্রতিভূ’ বলে অভিহিত করেছিলেন মোদী। সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশের কন্যাদের সাফল্য উদযাপনের দিন আজ। শেষ এক দশকে আমার সরকার এমন একটি দেশ গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে, যেখানে প্রত্যেক কন্যাসন্তানের সামনে শিক্ষার সুযোগ এবং বিকশিত হওয়ার সুযোগ থাকবে।’’ সেই গালভরা বক্তব্যের পর সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দেশের শিশুকন্যাদের নিয়ে ক্রাইয়ের তথ্য কার্যত বেআব্রু করে দিল মোদী সরকারকে।
রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস সোমবার বলেছে, এমনকী শিশুকন্যারাও নিরাপদ নয় মোদী সরকারের ‘অন্যায় কাল’-এ। দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেলে এই মন্তব্য করে মোদীর ন্যায়ের দাবিকে কটাক্ষ করে আরও বলেছেন, শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই ‘অন্যায় কাল’-এ তাদেরও ন্যায়বিচার দরকার। অন্যদিকে মোদী সরকারের মুখ বাঁচানোর জন্য এদিন কংগ্রেসের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই সাফাই গাইতে নেমে পড়েছে শিশু অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিশন (ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস) বা এনসিপিসিআর। কমিশন দাবি করেছে, এখন জোরালো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে এমন অপরাধের মোকাবিলা করার জন্য। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ আর গোপন থাকছে না, অপরাধীরাও শাস্তি পাচ্ছে। স্পষ্টতই কমিশন বলতে চেয়েছে, তথাকথিত জোরালো ব্যবস্থার কারণে এখন শিশুরা যৌন আক্রমণের শিকার হলে তা চাপা থাকছে না। সেই কারণেই শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনা এত বেড়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর অর্থ, দেশের শিশুকন্যারা যে বে‍‌শি বেশি সংখ্যায় ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, এনসিপিসিআর’র কাছে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই সব ধর্ষণের ঘটনার কথা জানতে পারার বিষয়টি।
লক্ষ্যণীয় বিষ‌য় হলো, কমিশন কিন্তু ক্রাইয়ের রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যের বিরোধিতা করেনি বা ওই তথ্যকে অস্বীকার করেনি। বরং ক্রাই এই তথ্য কেন জানতে পারল, তার ব্যাখ্যা দিতেই ব্যস্ততা দেখিয়েছে এবং সেই তথ্য জানতে পারাকে মোদী সরকারের সাফল্য বলে তুলে ধরতে চেয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে লিখেছেন, এ‍‌ই সময়ের মধ্যে এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো) এফআইআর’র ক্ষেত্রে কম্পিউটার-পরিচালিত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তার মাধ্যমে গোটা দেশের সমস্ত থানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং রিপোর্টে তা নথিভুক্ত রাখা হচ্ছে। যেন এটাই সাফল্য! শিশুকন্যাদের ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে বা তাদের ধর্ষণকে দমন করতে মোদী সরকার যে ব্যর্থ, সেই সত্য আড়াল করার উদ্দেশ্যে ও মোদী-আমলের ছ’বছরে শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনার ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধির পক্ষে এভাবেই হাস্যকর ব্যাখ্যা দিয়েছে এনসিপিসিআর।
শুধু তা নয়। মোদী সরকারের ওই ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে কমিশনের চেয়ারপার্সন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি কংগ্রেসের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘নির্যাতনের শিকার এক শিশুর পরিচয় প্রকাশ করার জন্য আপনা‍‌দের নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেই পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’ এমনভাবেই কমিশনের চেয়ারপার্সন রাহুল গান্ধীর নাম উল্লেখ করেছেন, যেন ধর্ষণের তুলনায় তিনি বেশি অপরাধ করে ফেলেছেন। এই সঙ্গেই কমিশনের চেয়ারপার্সন শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মোদী সরকার কী কী ব্যস্থা নিয়েছে, তার লম্বা ফিরিস্তি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, প্রত্যেক থানায় যাতে এক জন শিশু কল্যাণ পুলিশ অধিকারিক নিয়োগ করা যায় এবং প্রত্যেক জেলায় যাতে শিশুদের জন্য একটি বিশেষ পুলিশ শাখা গড়ে তোলা যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়েছে। সারা দেশের রাজ্য স্তরের কমিশনগুলি এবং জাতীয় কমিশন দ্রুততার সঙ্গে অভিযোগ নথিভুক্তও করছে। তার ফলে ঘটনার কথা বেশি জানা যাচ্ছে। কিন্তু এত করেও ধর্ষণের মতো নৃশংস অত্যাচারের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করার আসল যে কাজ, তার যে কিছুই হয়নি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন নিজেই। তাহলে মোদী-আমলে ছ’বছরে শিশুকন্যাদের ধর্ষণের ঘটনা ৯৬ শতাংশ বাড়ত না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’-এর কথা যিনি প্রায়ই দাবি করে থাকেন, সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিশুকন্যাদের ধর্ষণকে নির্মূল করতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, এক্স হ্যান্ডেলে তা লিখতে পারেননি তিনি। তিনি কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, শিশুকন্যারা ধর্ষণের শিকার হলে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াকেই আসল দায়িত্ব বলে মনে করছে এনসিপিসিআর। 
এদিকে, সোমবারই শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের একটি মামলায় বম্বে হাইকোর্ট বলেছে, কোনও শিশুকন্যার শরীরের ব্যক্তিগত অঙ্গে যদি কোনও পুরুষ তার যৌনাঙ্গ ছোঁয়ায়, তাহলে তা পকসো আইনের চার নম্বর ধারায় যৌন নির্যাতন বলেই গণ্য হবে। এই অবস্থানের ভিত্তিতে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পৃথ্বীরাজ চ্যবন এদিন এক অভিযুক্তর জামিনের আরজি খারিজ করে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, দুই শিশুকন্যার সঙ্গে ওই জঘন্য আচরণ করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি। সে সম্পর্কে ওই দুই শিশুর পিসেমশাই। তাদের মা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, ৯ ও ১৩ বছর বয়সী তাঁর দুই কন্যা পিসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ওই ব্যক্তির যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সে তাঁর দুই মেয়েকে পর্নোগ্রাফির ভিডিও দেখিয়েছে, বিবস্ত্র করে তাদের ছবি তুলেছে, নিজের যৌনাঙ্গ দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত অঙ্গ স্পর্শ করেছে এবং কাউকে এসব বললে সব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment