High court dholahat

ঢোলাহাট কান্ডে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট

রাজ্য

ঢোলাহাট থানায় যুবকে পিটিয়ে মারা ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন শনিবার ২২ বছর বয়সী যুবক আবু সিদ্দিকির দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে হবে। গোটা বিষয়টি ভিডিওগ্রাফি করা হবে। মৃতের বাবা এবং বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢোলাহাটের ঘটনায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সওয়াল চলাকালীন থানায় পুলিশি অত্যাচারের যে বিবরণ সামনে এসেছে, তা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে চরম লজ্জার।
সামান্য ‘চোর’ সন্দেহে ২২ বছরের যুবক আবু সিদ্দিক হালদারকে থানায় নিয়ে গিয়ে ইলেকট্রিক শক দিয়ে, বুকে পা দিয়ে যেভাবে মারধর করেছে পুলিশ, সেই বিবরণে আঁতকে ওঠার আগে ভরা এজলাসে বিচারপতির সামনেই নিহতর পরিবারের তরফে আইনজীবী চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন। 
নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, সেদিন যখন থানায় বর্বর অত্যাচার চালানো হচ্ছে আবুর উপরে, তখন ২২ বছরের ছেলেকে বাঁচাতে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেন। পুলিশ জানায়, ২ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করলে ছাড়া পাবে। সেদিনই কোনওরকমে পরিবারের সদস্যরা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন। থানা থেকে আদালতে পেশ করার আগে সেই টাকা দিতে হয়েছিল, জামিন পাইয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রতি দিয়েছিল পুলিশ। টাকা দেওয়ার পরে গুরুতর জখম আবু সিদ্দিক হালদারের জামিনও হয়। কিন্তু পুলিশি অত্যাচারের চেহারা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, জামিন পাওয়ার পরে তিন দিনও বাঁচতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় ২২ বছরের ওই যুবকের।
ঢোলাহাট থানার ঘাটবকুলতলা গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবককে চোর সন্দেহে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মৃতর পরিবারের অভিযোগ, গত ৩০ জুন আবু সিদ্দিক হালদারের কাকা মহসিন হালদারের বাড়ি থেকে সোনার অলঙ্কার চুরি হয়। গত ৩ জুলাই রাত ৮টা ৫ মিনিটে মৃত যুবকের কাকা মহসিন হালদারকে দিয়ে জোর করে থানায় সোনা এবং নগদ টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করানো হয়। ভুয়ো এফআইআর হয়। সেই রাত থেকে থানায় শুরু হয় আবুর উপরে অত্যাচার। কাকার সামনেই মারা শুরু হয় ২২ বছরের ভাইপোকে।
বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়ে মৃত যুবকের কাকা মহসিন হালদার বলতে থাকেন, ‘‘থানায় আমার সামনেই ভাইপোকে কুকুরের মতো মারছিল। সে দৃশ্য ভুলতে পারছি না। কুকুরকেও এভাবে মারে না কেউ। চিৎকার করে কাঁদছে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আমার পা ধরে বলছিল, ‘কাকা বাঁচাও, আমি চুরি করিনি’। পুলিশকে বললে ওরা আরও মারে। টাকা চায়।’’ বর্বরতা শব্দটিও যেন ফিকে যাচ্ছে।
৩ তারিখে রাত ৮টা ৫ মিনিটে সেই এফআইআর দায়ের করা হয়। ৪ জুলাই ভোর ৩টে ৪৫ মিনিটে হেফাজতে নেওয়া হয় আবুকে। সেই ভোর রাত থেকেই চলে মারধর। দু’টি কিডনি তাতে বিকল হয়ে যায়। পায়ুদ্বারে শক্ত ভারী কোনও বস্তু ঢোকানো হয়। রক্তক্ষরণ হয়। মাটিতে ফেলে ২২ বছরের যুবকের বুকে, মুখে, গোপনাঙ্গে বুট দিয়ে পুলিশ লাথি মারতে থাকে দীর্ঘক্ষণ। 
হাইকোর্টে পরিবারের তরফে আইনজীবী শামিম আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নৃশংসভাবে অত্যাচার চালানো হয়েছে। ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে। শুধু তা নয়। গ্রেপ্তার করার পরের দিন আদালতে তোলার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু তা করা হয়নি। পুলিশ মিথ্যা দাবি করেছে যে, কাকদ্বীপ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমরা সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর দাবি করছি। জামিনের জন্য ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে পরিবারের কাছ থেকে। মৃত যুবক জামিন পাওয়ার পরে বাড়িতে অসুস্থ হলে তখন হাসপাতালে গিয়েছিল। পুলিশ নিয়ে যায়নি। থানার সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেওয়ার আরজি জানিয়েছি আমরা। অবশ্য পুলিশ দাবি করেছে গত ২৩ জুন থেকে না কি থানার সিসিটিভি বিকল!
আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা ঢোলাহাট থানার ওসি এবং এসআই রাজদীপ সরকারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করার আবেদন করেছি। তাঁদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ইলেকট্রিক শক দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। আঘাতের চিহ্ন আছে দেহের বিভিন্ন অংশে।‘‘ তাঁর পরিবারের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক পুলিশ কেস বলে ফেলে রেখেছিল। বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার পর আবুর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পুলিশ দেহ নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত করে।

Comments :0

Login to leave a comment