cpim class

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, চলবে জিগির ঠেকানোর লড়াইও, বললেন সেলিম

জাতীয় রাজ্য

সিপিআই(এম) দেশের পক্ষে, দেশের মানুষের পক্ষে। সে কারণেই সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে বরাবর। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী জিগিরেরও বরাবর বিরোধী সিপিআই(এম)। নয়া ফ্যাসিবাদ বামপন্থীদের আক্রমণের লক্ষ্য করবেই। এই সময়ে বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ার কাজ চালিয়ে যাবে সিপিআই(এম)।
রবিবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আয়োজিত সাধারণ সভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, স্পষ্ট করে বলার যে আমরা জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে লড়ছি না। লড়ছি উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে। তেরঙ্গা জাতীয়তাবাদ না গেরুয়া জাতীয়তাবাদ তার বাছবিচার করা জরুরি।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। ৬ মে মাঝরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের ৯টি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে জানায় ভারতের সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের সেনা যদিও পালটা হামলা চালায় ভারতের সামরিক গাঁটি লক্ষ্য করে। নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাধারণ গ্রামবাসীদের ওপর হামলা হয়। ১০ মে সংঘর্ষ বিরতি হয়। ভারত ঘোষণা করার আগেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোানল্ড ট্রাম্প তার ঘোষণা করে দেন।
ঘটনাক্রম তুলে ধরে সেলিম বলেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী কোনও দেশ সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি চালাতে দিতে পারে না। আমরা সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে আক্রমণের বিরোধিতা করিনি। কিন্তু আমরা পুরোদমে যুদ্ধের বিপক্ষে থেকেছি। কারণ যুদ্ধ কোনও সমস্যার সমাধান করেনি। 
সেলিম বলেন, দেখা গেল যুদ্ধের চেয়ে যুদ্ধ জিগির বেশি। আরও বেশি যুদ্ধ উন্মাদনা। উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তি সন্ত্রাসবাদীদের চেয়ে বামপন্থীদের আক্রমণ করছে বেশি। চলছে ‘সেকু-মাকু’বলে আক্রমণ। বাংলাদেশের সময়েও আমরা এই উন্মাদনা দেখেছি।
সেলিমের ব্যাখ্যা, এরাজ্যে আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন শক্তিকে জড়ো করতে। যাঁরা দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁদেরও ফের নিয়ে আসতে। বিজেপি-আরএসএস মনে করছে তাদের বাড়া ভাতে চাই দেওয়া হচ্ছে। আক্রমণের লক্ষ্য করছে বামপন্থীদের।  
সেলিম বলেন, পাকিস্তান জন্ম থেকে আমেরিকার কোলে চড়েছে। ওরাই কাশ্মীরের সমস্যাকে আন্তর্জাতিক বিষয় করতে চেয়েছে। এদেশে সব রাজনৈতিক দল এই বিষয়ে একমত যে কাশ্মীর সমস্যা ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে মীমাংসার বিষয়। এবার দেখা গেলো ট্রাম্প বলে দিচ্ছেন যে তিনিই বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে দু’দেশকে সংঘর্ষ বিরতি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। যারা ‘যুদ্ধ’ ‘যুদ্ধ’ করছিল, তারা তা’হলে ট্রাম্পের চাপ মেনে নিল কেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সিপিআই(এম) সেখানে অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। শনিবারই সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা জরুরি। সেই দাবি থেকে আমরা সরছি না। সেই সঙ্গে দেশের কথা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলার ক্ষেত্রে অন্য সব দলের সঙ্গে ভূমিকা নেবে সিপিআই(এম)।  
তিনি বলেছেন যে সঙ্গত প্রশ্নের জবাব দিতে হবে কেন্দ্রকে। এখন দু‘দেশের সামরিক বাহিনীর ডিজিএমও স্তরের বার্তালাপ চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে আগে কেনো হলো না। সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে হয়েছে। কিন্তু সেটিই একমাত্রপথ নয়। আলোচনার প্রক্রিয়াও দরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত আলোচনা করবে না বলে ‘সার্ক’ বৈঠক বন্ধ হয়েছে। আঞ্চলিক সমস্যা থাকলেই বিশ্বের সর্বত্র আমেরিকা ঢুকে পড়ে। এখানেও তাই হচ্ছে। মোদী সরকার আসীন হওয়ার পর এই ভুল বিদেশনীতি নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে আমরা বিচ্ছিন্ন হচ্ছি। তিনি জানিয়েছেন যে যতই আক্রমণ হোক, সিপিআই(এম) এ সংক্রান্ত প্রশ্নে সরকারের জবাবদিহি চাইবেই। 
সেলিম বলেন, মাটিতে পা রেখে মাথা ঠাণ্ডা রেখে জনতার কাছে আমাদের কথা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়তে হবে। নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি বামপন্থীদেরই আঘাত করবে।

Comments :0

Login to leave a comment