ধূসরবেলা — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
ধর্ম যুদ্ধ
মনীষ দেব
অষ্টমী বৈরাগীর একতারায় বাজে যে, সুর — তা রমিজ মিয়ার লাউমাচার লাউ-এ, না ধর্ম নেই। নেই আঁকশিতে। নেই লাউডগায়।
তবু ধর্ম যখন চৌরাস্তার মোড়ে জল্লাদের পোশাক পড়ে দাঁড়ায় তখন — অলি-গলি-পাকস্থলিতে হিংসার চোরাস্রোত বয়ে যায়। ধর্মের কোন রঙ নেই, ধর্ম অন্ধ — অন্ধকারই তার আশ্রয়।
তাই রবিবাউল গান বাঁধেন —
আমার মুক্তি আলোয় আলোয়,
এই আকাশে,….
গানের সুরে আমার মুক্তি উর্ধ্বে ভাসে ।।
আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,....
আসলে মানুষ আশ্রয় খোঁজে — মূর্ত এবং বিমূর্ত'র কাছে, যাকে ধর্ম বলে চালান করে মৌলবাদ, প্রাচীন বটের গায়ে নানান রঙের সুতো জড়ায় যে সাধারণ মেয়েরা তাদের আচার আলদা, বিশ্বাস আলাদা, তবু তারা একসাথে সুতো জরায়। আসলে ওই সুতোর গায়ে লেগে থাকে — আশা — আশা — আশা….।
যে অন্ধ বাউল ক্ষুধার অন্ন জোটাতে গঞ্জে-গাঁয়ে-ইসস্টেশনে গান গেয়ে বেড়ায়, সেই গান কোনও মুসলীম ফকিরের না টগর বোষ্টমীর কে জানতে চেয়েছে কোনদিন। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ সব জানতে চায় — রাষ্ট্র সব জানতে চায় কারণ মৌলবাদ এবং রাষ্ট্র চায় খবরদারী প্রতিশব্দে, প্রতি নিশ্বাসে খবরদারী — যুদ্ধ বাঁধানোয় খবরদারী, যুদ্ধ চলায় খবরদারী, যুদ্ধের অস্রের বিক্রিতে খবরদারী, যুদ্ধ থামানোতে খবরদারী, যুদ্ধ শেষে পূণর্গঠনে খবরদারী। যুদ্ধ আসলে একটা ব্যবসা, যে ব্যবসায় মুনাফা সবচেয়ে বেশী বহুমূখী এবং বহুমাত্রিক। এই বহুমাত্রিকতায় যুদ্ধের এজেন্ট হচ্ছে — মিডিয়া, যারা যুদ্ধকে পন্য করে এবং রাষ্ট্রের দালালী করে। নিরাপদ দুরত্ব থেকে হয়তো যুদ্ধকে বেচা যায় কিন্তু যদি আমার আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধ বিমান উড়ে আসে তখন চিৎকার করে উঠি — যুদ্ধ চাই না। মানুষ যুদ্ধ চায় না, সেনা যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ চায় — সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ এবং শাসক। যুদ্ধ চিরদিনই শাসকের নিরাপদ আশ্রয়। তাই এক হাট থেকে যুদ্ধ বিমান কেনা শাসকের দল যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় মাতে।
রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ না নাহি তোলে,….
তখন অন্য হাটে পসরা সাজায় — সেফালী সোরেন, স্বর্ণ মাসী, ফজল চাচা, যতন পাত্ররা আর তাদের পসরা এপার থেকে ওপারে পৌঁছে দেয় মানিক মাঝি, রফিক ভাই আর এই ধূসরবেলা'য় রবিবাউল আরও একবার গেয়ে ওঠে —
সব “অচলায়তন” ভেঙে —
আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি....।
Comments :0