ISRAEL PALESTINE CONFLICT

রাষ্ট্রসঙ্ঘের সূত্র মেনে পৃথক দুই রাষ্ট্র ঘোষণাই পথ, বললেন ইয়েচুরি

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করল ইজরায়েল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু জানিয়েছেন, ‘‘ আমরা যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। এবং আমরা এই যুদ্ধ জিতে ফিরব।’’ অপরদিকে প্যালেস্তাইনের হামাস গোষ্ঠীর নেতা মহম্মদ দাইফ জানিয়েছেন, ‘‘ আমরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার সহ্য করেছি। কিন্তু আর নয়। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।’’

রেকর্ড করা অডিও বার্তায় দাইফ গাজা সহ অবরুদ্ধ ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়েছেন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সামিল হওয়ার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের কাছে বন্দুক রয়েছে, তাঁদের বলছি এটা বন্দুক ব্যবহারের সঠিক সময়।’’

নেতানইয়াহু তাঁর বার্তায় বলেছেন, ‘‘ ইজরায়েলের নাগরিকরা, আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি। কোনও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ নয়, কোনও বিশেষ অভিযান নয়, সরাসরি যুদ্ধ। হামাসকে এর এমন খেসারত দিতে হবে, যা ওরা কল্পনাও করতে পারছে না।’’

এই বিষয়ে ভারতীয় বিদেশনীতির পরম্পরা অগ্রাহ্য করে সরাসরি ইজরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গোটা ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ আখ্যা দিয়ে মোদী সোশাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, ‘‘ ইজরায়েলে হওয়া উগ্রপন্থী হামলার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ইজরায়েলের এই কঠিন সময়ে আমরা তাঁদের পাশে আছি।’’

সংঘর্ষের প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘ইজরায়েলের ইতিহাসে চরমতম দক্ষিণপন্থী সরকার চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু। চলতি বছরে ৪০জন শিশু সহ ২৪৮জন প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। অবিলম্বে প্যালেস্তাইনকে ইজরায়েলের দখলমুক্ত করতে হবে, এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের সূত্র অনুযায়ী পৃথক দুটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।’’

প্যালেস্তাইনকে পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে নারাজ ইজরায়েল। বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতে দশকের পর দশক প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ড সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে দখল করে রেখেছে ইজরায়েল। দখলদারি তীব্রতা পেয়েছে নেতানিয়াহুর এই সরকারের মেয়াদে।

সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা বা এআইপিএসও’র সর্বভারতীয় নেতা নীলোৎপল বসু বলছেন, শনিবার প্যালেস্তিনীয়রা মরিয়া প্রতিরোধ করেছে। একে কখনোই আগ্রাসন বলা চলে না। সেনা নামিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। যুদ্ধবিরতি চালু করতে হবে, এবং আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’

নীলোৎপল বসু আরও বলছেন, ‘‘নয়াদিল্লির জি-২০ বৈঠকে গ্লেবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল পৃথিবীর নেতা হিসেবে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করেছে মোদী সরকার। কিন্তু ইজরায়েল প্যালেস্তাইন প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের সুরে গলা মিলিয়েছে দিল্লি। কার্যত মার্কিন আধিপত্যবাদের অনুসারিতে পরিণত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।’’

শনিবার সকালে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড পেরিয়ে হামাস গোষ্ঠীর যোদ্ধারা দক্ষিণ ইজরায়েলের একাধিক গ্রাম এবং শহরে ঢুকে পড়ে। ইজরায়েলি প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে আমেরিকান সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস বা এপি জানাচ্ছে, শনিবার বিকেল অবধি ইজরায়েলের মাটিতে হওয়া সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ৪০জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৫৬১। তারমধ্যে ৭৭জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 বরাবর ইজরায়েলের সেনা হামলা চালিয়েছে প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। নেতানিয়াহু সরকারের মেয়াদে এমন দখলদারি বেড়েছে নজিরবিহীন মাত্রায়। আল-জাজিরা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে ২৪৭জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিককে হত্যা করেছে ইজরায়েল সেনা। প্রতিরোধ নিজেদের সীমান্তে হলেও প্যালেস্তাইনের কোনও বাহিনী জবাব দিতে ইজারায়েলের ভূখণ্ডে ঢোকেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্যালেস্তিনীয় বিক্ষোভকারীরা বুলডোজার দিয়ে গাজা ভূখণ্ডকে ঘিরে থাকা পাঁচিল এবং কাঁটাতারের বেড়া ভাঙছে। ইজরায়েল সেনার সামরিক ট্যাঙ্ক জ্বালিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে প্যালেস্তিনীয়দের।  মহম্মদ দাইফ এই অপারেশনকে ‘মিশন আল-আকসা ফ্লাড’ বলে চিহ্নিত করেছেন। 

প্যালেস্তিনীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে ইজরায়েলের দখলদার বাহিনী। প্যালেস্তিনীয়দের বসতি উচ্ছেদ করা প্রতিদিনের ঘটনা। গোটা গাজা ভূখণ্ডকে পাঁচিল এবং কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। গাজা কার্যত এক খোলা কারাগারে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে পূর্ব জেরুজালেম এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও হানাদারি চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি বাহিনী। জেরুজালেম শহরে আল-আকসা মসজিদ প্যালেস্তিনীয়দের অন্যতম পবিত্র স্থান। সেখানেও ঢুকে তান্ডব চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। 

হামাস অডিও বার্তায় বলেছে, ‘‘আল-আকসাকে ইজরায়েলের দখলমুক্ত করা হবে।’’ একইসঙ্গে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসবাসকারী প্যালেস্তিনীয়দেরও এই লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আহ্বাণ জানিয়েছেন মহম্মদ দাইফ। 

এর পাল্টা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু। ইজরায়েলের দাবি, হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ ইজরায়েলের অ্যাশকেলন এবং স’ডেরট’র মত গুরুত্বপূর্ণ শহরে ঢুকে পড়েছে। ৫ হাজার রকেট হামলার অভিযোগও করেছে ইজরায়েল। এর পালটা কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান দিয়ে গাজায় বিমানহানা শুরু করেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের তরফে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন আয়রন সোর্ড’। 

শনিবারের সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক বিবৃতি আসতে শুরু করেছে।  ইরানের তরফে ‘আল-আকসা ফ্লাডের’ সাফল্যও কামনা করা হয়েছে। কাতারের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করে গোটা বিষয়ের জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করা হয়েছে। একইসঙ্গে কাতারের বিদেশমন্ত্রক বলছে, এই ঘটনাকে ঢাল করে প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষকে অসম লড়াইয়ের মুখে ঠেলে দেবে ইজরায়েলের সেনা। দোহা’র তরফে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। 

সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, দুই তরফকে সংযম বজায় রেখে উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দিয়েছে ওমান। যদিও এক ধাক্কায় সমস্ত আগ্রাসনের দায় প্যালেস্তিনীয়দের ঘাড়ে চাপিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানিয়েছেন, ‘‘ইজরায়েলের সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালিয়েছে প্যালেস্তিনীয় উগ্রপন্থীরা।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের গলাতেও। 

রাষ্ট্রসংঘের তরফে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনে শান্তি স্থাপনের দায়িত্বে রয়েছেন টর ওয়েনেসল্যান্ড। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘দুই পক্ষকেই সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শান্তি প্রক্রিয়ায় আগ্রাসনের স্থান নেই।’’

Comments :0

Login to leave a comment