Maharashtra Crane Accident

মহারাষ্ট্রে দুর্ঘটনায় নিহত বাংলার ৪ শ্রমিক

রাজ্য

Maharashtra Crane Accident

মহারাষ্ট্রের থানেতে ক্রেনে চাপা পড়ে মৃত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার মোট ৪ জন শ্রমিক। জেলা প্রসাশন সূত্রে খবর নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ধূপগুড়ির ২ ও ময়নাগুড়ির ২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লকের নিহত দুই যুবকের নাম সুব্রত সরকার(২৪) ও বলরাম সরকার (২৮)। তাদের বাড়ি ময়নাগুড়ি ব্লকের চারের বাড়ি সংলগ্ন স্টেশন পাড়া এলাকায়। মঙ্গলবার এই সংবাদ শোনার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। 
মহারাষ্ট্রের থানে জেলার শাহপুর ব্লকের খুতাদি সারলম্ব গ্রামে এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ করার সময় ক্রেন ভেঙে পড়ে ১৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার  ময়নাগুড়ি এবং ধূপগুড়ি ব্লকের দুজন করে রয়েছেন। সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ এক্সপ্রেসওয়েতে কাজ করার সময় গার্ডার লঞ্চার ভেঙে শ্রমিকরা নিচে পড়ে যান। চাপা পরে সেখানে ১৭ জনের মৃত্যু হয় বলে সূত্রের খবর। সেই গার্ডার লঞ্চারের নিচে চাপা পরে ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়ির যুবকেরাও। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর খবর পৌঁছাতেই শোকের আবহ তৈরি হয় ধূপগুড়ি থানা এলাকার ঝার আলতা ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম ডাউকিমারী উত্তর কাঠুলিয়া গ্রাম ও
ময়নাগুড়ি ব্লকের চারের বাড়ি সংলগ্ন স্টেশন পাড়া এলাকায়।

ধূপগুড়ির ব্লকের গণেশ চন্দ্র রায় পেশায় শ্রমিক। গণেশের মা এবং স্ত্রী বারবার কান্নায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছে। পেটের তাগিদেই ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে গিয়েছিলেন আরো বেশ কয়েকজন গ্রামের যুবক। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর খবর পৌঁছালে গণেশের পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মা, স্ত্রী, এক পুত্র সন্তান ও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বাড়ির উপার্জক বলতে একমাত্র সেই ছিলেন।
গনেশ রায়ের ভগ্নীপতি জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন, আরেক ভাই একই কোম্পানির অন্য সাইটে কাজ করেন। দুর্ঘটনা স্থল থেকে  এক সহকর্মী সেই ভাইকে ফোন করে জানালে ভাই তাকে জানায়। বৃদ্ধ কাকা দেবেন রায় বলেন পেটের তাগিদে ১ বছর আগে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল। ভাইপো গনেশ বছরে একবার বাড়িতে আসে। নাগপুরের একটি নির্মীয়মাণ সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন। ২৮ দিন পরেই বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তাঁর। আজ ভোর বেলা মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছাতেই শোকের আবহ তৈরি হয় গোটা এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন গনেশের গোটা পরিবার।


মৃতের স্ত্রী প্রতিমা রায় জানান, রাতে শেষবার কথা হয়েছিল তখন বলছিল ২৮ দিন পর বাড়ি ফিরবে। বাড়ি আসলে আর কাজে যাবে না। এরপর আমরা খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম ভাঙার কিছুক্ষন পর পাশের বাড়ির একজন এসে জানান গণেশ মারা গিয়েছে। আমি ভাবতেই পারছি না আমার তিন সন্তান নিয়ে আমি কি করব।

দিদি মৌমিতা রায় জানান, আমাদের গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজন গিয়েছে। আমাদের এখানে কাজ করলে তেমন আয় হয় না। গ্রামে কাজের অভাব। সংসার চলবে কি করে ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ উঠবে কি করে। তাই বাড়তি আয়ের আশাতেই ভীন রাজ্যে গিয়েছিলো। কিছু দিন পরে বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। গ্রামের বাসিন্দারা জানান দুই ভাই শ্রমিকের কাজ করেন ভিন রাজ্যে গিয়ে। বাড়িতে বৃদ্ধা মা দুই ভাইয়ের স্ত্রী রা এবং সন্তানরা রয়েছে। মৃত গনেশ রায়ের এক পুত্র নবম শ্রেণির ছাত্র দুই কন্যা অষ্টম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ  শ্রেণীর  ছাত্রী।  

 


জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, আমাদের জেলার চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাগুড়ি দুজন এবং ধূগুড়ির দুজন রয়েছে। ময়নাগুড়ি দুজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই মৃতদেহ নিয়ে সড়কপথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তবে ধূপগুড়ির যুবকদের দেহ এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি। জেলা প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সব সময় আমরা নাগপুর প্রশাসন থেকে তথ্য নিচ্ছি। পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবার জন্য। পশ্চিম ডাউকিমারি গ্রামের সিপিআই(এম) শাখা সম্পাদক  আলিউল হক এবং আকবর আলি সহ কয়েকজন পার্টি কর্মী খবর পেয়ে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা  বলে শান্তনা দেন এবং পাশে থেকে  সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। আকলউল হক জানান, এই শ্রমিক পঞ্চায়েত ভোটের সময় আসতে পারেনি বাড়িতে। এক দের বছর বাদে বাড়িতে আসেন কিছুদিন থেকে আবার কাজে ফিরে যায়। সিপিআই(এম) ধূপগুড়ি পশ্চিম  এরিয়া কমিটির সভাপতি মনমোহন রায় বলেন, দু বছর আগে  আমাদের গধেয়ারকুঠি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার চার যুবক জম্মু কাশ্মীরে সুড়ঙ্গ কাটার সময় মাটি ধসে নিহত হয়েছিল। প্রায়শই  খবর আসে বিভিন্ন গ্রামের তরতাজা যুবকদের পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। রাজ্যের কর্মসংস্থান  যে একেবারে নেই এই ঘটনা গুলি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। 

জানা যায়, চারেরবাড়ি স্টেশন পাড়া এলাকার পাঁচ যুবক দীর্ঘ প্রায় সাত, আট বছর ধরে মহারাষ্ট্রে কাজ করতেন। কোম্পানির তত্বাবধানে এই কাজ করেন বলে জানা যায়। সোমবার গভীর রাতে নাইটে কাজ করার জন্য সুব্রত সরকার ও বলরাম সরকার যোগদান করেন। সেই সময় ব্রিজের গার্ডার তোলার প্রক্রিয়া করছিল দৈত্যাকার একটি ক্রেন। আচমকা ক্রেন ভেঙে নিচে পড়ে যায় গার্ডার। সেই গার্ডারের নিচেই চাপা পড়েন একদল শ্রমিক। দ্রুত রাতেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। 
দুর্ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট করে মৃতদের জন্য দুই লক্ষ এবং আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। 
দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment