স্মৃতি মুছে গেল বাঙালির আরেক নস্টালজিয়ার! ৮০’র দশকে বাংলার ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে হিল্লোল তোলা কৃশানু দে’র বাড়ি ভেঙে ফেলা হল। সেখানে গড়ে উঠবে ‘আধুনিক’ ফ্ল্যাট। ২৮ বাই ৩, খানপুর রোড, নাকতলা! বিখ্যাত এই ঠিকানাও বদলে যাবে কলকাতা কর্পোরেশনের নতুন নিয়মে ফ্ল্যাট উঠলে।
বছর খানেক আগেই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা অঞ্চল। যদিও তা আদতে ‘দুর্নাম’ বলাই বাহুল্য। চাকরি চুরির অভিযোগে নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে নিছক তাকে দিয়েই নাকতলার অতীত ঐতিহ্যকে বিচার করা অর্থহীন।
নাকতলার খানপুর রোডে প্রভাত সংঘ ক্লাবের কাছেই বাড়ি ‘ছিল’ ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা শিল্পী ফুটবলার কৃশানু দে–র। ভারতের মারাদোনাও বলা হয় যাকে। ‘ছিল’ কারণ তা এখন ভেঙে, গুঁড়িয়ে দিয়ে চলছে বহুতল ইমারত গড়ে তোলার কাজ। কৃশানুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বহুদিনের পুরানো ওই বাড়ির রক্ষনাবেক্ষণ করা সম্ভবপর হচ্ছিল না। প্রয়োজন হত বিপুল পরিমাণ টাকার। তাছাড়া কৃশানুর স্ত্রীর পক্ষেও একা অত বড় বাড়ির খেয়াল রাখা সমস্যদায়ক ছিল। একমাত্র ছেলে সোহম কিছুদিন আগে অবধিও কর্ম সূত্রে বাইরে থাকত। সে পেশায় ক্রীড়া সাংবাদিক। আপাতত নিকটবর্তী ব্রহ্মপুরে থাকছেন তারা। ফ্ল্যাট হয়ে গেলে ফিরবেন। কৃশানুর পাওয়া বহু পুরস্কার এবং স্মারক নিয়েই তারা আপাতত বাসা বদলেছেন। ফ্ল্যাট তৈরি হলে সেগুলোও ফিরবে।
তবে এই বাড়ি তো নিছকই কেবল বাড়ি নয়, তার প্রতিটা ইঁট-কাঠ-পাথরে খোদাই স্মৃতি-রোমাঞ্চ-উত্তেজনা কি মুছে ফেলা যায়?
বাংলার ফুটবলের বহু ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ, চাপানউতর, ওঠা-নামার সাক্ষী ওই বাড়ি। কতো ডাঁকসাইটে ব্যক্তির পা পড়েছে ওই বাড়ির চৌহদ্দিতে। কৃশানু–বিকাশ জুটিকে নিয়ে বাংলার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগানের তুমুল রেশারেশি হার মানাবে থ্রিলারকেও, যা আবর্তিত হয়েছিল এই বাড়িটি সহ অঞ্চলটিকে ঘিরে। দলবদলের গনগনে উত্তেজনার অম্লান স্মৃতি নাকতলার এই বাড়ি। রাতের অন্ধকারে দুই ক্লাব সমর্থকদের ভীড়ের মধ্যেই মোহনবাগান কর্তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে লাল হলুদের ডেরায় সই করেছেন কৃশানু। কখনও আবার পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকা ঘিরেও ফেলত হয়েছে পুলিশকে। বাংলার ফুটবলের সেইসব সোনালী অতীত অবশ্য এখন বহুলাংশেই ক্ষয়প্রাপ্ত কর্পোরেট গ্রাসে। দলবদল নিয়ে নেই তেমন কোনো উত্তেজনাও।
২০০৩ সালে অকালে প্রয়াত হন কৃশানু । তার ঠিক একুশ বছরের মাথায় স্মৃতি বিজরিত বাড়িটিও মুছে গেল। পরে রইল কিছু স্মৃতি। যা চিরন্তন।
Comments :0