Recruitment scam

অভিষেকের নামে কুন্তল তুলেছেন ৫০০ কোটি!

রাজ্য জেলা

kuntal ghosh ssc corruption scam tmc abhishek banerjee bengali news আদালতের পথে কুন্তল। ছবিঃ সংগৃহীত

নিয়োগ দুর্নীতিতে ফের এল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির প্রসঙ্গ! অভিষেক ব্যানার্জির নাম করেই নিয়োগকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ টাকা তুলতেন। 

সেই টাকার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি! বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এমন বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল।


কুন্তল ঘোষের গ্রেপ্তারিতেই নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিষেক ব্যানার্জির নাম আসে আদালতে। অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এই যুব তৃণমূল নেতাই আদালত ও পুলিশকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা তাঁকে জেরায় অভিষেক ব্যানার্জির নাম বলতে চাপ দিচ্ছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি সংশ্লিষ্ট মামলার পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেক ব্যানার্জিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। 

এমনকী ইডি’র বিরুদ্ধে লেখা কুন্তলের চিঠি নিয়ে চাইলে অভিষেক এবং কুন্তল ঘোষকে পাশাপাশি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। তবে সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, কুন্তল ঘোষ সুকৌশলেই অভিষেক ব্যানার্জির প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন আদালতে। 

এদিন আলিপুর আদালতে ঢোকার সময়েই ধৃত শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আগে আমি বলেছিলাম ১০০ কোটি টাকার খেলা। এখন শুনছি ৫০০ কোটি টাকার খেলা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে কুন্তল টাকা তুলেছে। খোঁজ নিন ওই টাকা হাওলায় খাটাচ্ছেন। জেলে বসে টাকা খাটাচ্ছেন।’’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, কার নাম করে টাকা তুলত কুন্তল? তাপস মণ্ডল ফের বলেন, ‘অভিষেকের নাম করেই টাকা তুলত’।


পাঁচশো কোটি টাকা তুলেছেন কুন্তল ঘোষ! দীর্ঘ দিন ধরে কুন্তলের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির টাকার লেনদেনে যুক্ত তাপস মণ্ডলের এমন অভিযোগে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।


এখানেই উঠেছে আরও গুরুতর প্রশ্ন। সব জেনে বুঝেই কি টাকা তোলার আপাদমস্তক এই এজেন্টকে যুব তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতা বানিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি? 

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায় এবং অভিভাবকত্বে এই নতুন কমিটি তৈরি করা হলো বলেও জানানো হয়। সেই নতুন কমিটিতেই রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের পদে কুন্তল ঘোষকে বসানো হয়। তার দু’মাস বাদেই নিয়োগকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন এই অন্যতম সাধারণ সম্পাদক।


গত ১১ এপ্রিল আদালতে ইডি দাবি করে, ২০১৪ নয়, এই সরকারের একেবারে প্রথম থেকেই নিয়োগ দুর্নীতির চক্র চলেছে। তদন্তে ও জেরায় জানা গিয়েছে, ২০১২ সালেও অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষদের চক্র সক্রিয় ছিল। দশ বছর ধরে চলেছে এই অবৈধ নিয়োগ। ওএমআর শিট বিকৃত করা, খালি ওএমআর শিটে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে। 

এদিন আদালতে রিমান্ড রিপোর্টে ইডি লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, ইতিমধ্যে নিয়োগকাণ্ডে ধৃত আরেক তৃণমূল নেতা ও হুগলী জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জি হেপাজতে থাকাকালীন জেরায় জানিয়েছেন, ২০১২ ও ২০১৪’র দু’টি প্রাইমারি টেটেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল। সেই টাকার একটা বড় অংশ তিনি নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আরেক এজেন্ট যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষকে দিতেন। 

মূলত তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ও প্রোমোটার অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করতেন কুন্তল ঘোষ।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে একাধিক। দুর্নীতিতে শুধু হাত পাকানোই নয়, অভিজ্ঞ হওয়ার পরেই কি সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি তাকে হুগলী জেলা থেকে রাজ্য স্তরে তুলে আনেন? তাপস মণ্ডলের অভিযোগ অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে যদি অভিষেক ব্যানার্জির নাম ভাঙিয়ে ৫০০ কোটি টাকা তুলে থাকেন এই সামান্য এক যুব নেতা, তা একবারও দলের শীর্ষের নেতৃত্বের কানে পৌঁছালো না? 


কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র একটি সূত্রের দাবি, তাপস মণ্ডলের এমন অভিযোগে এই নিয়োগ দুর্নীতি যে প্রভাবশালী মহলের মদতেই হয়েছে, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা হয়েছিল কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল ও অয়ন শীলকে। 

আলিপুর আদালতে প্রবেশ করার সময়ে এদিন কুন্তল ঘোষ সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে নিজের হাত দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমার হাতে আংটি নেই। ঘামাচি আছে।’’ জেলের ভিতরে পার্থ চ্যাটার্জির হাতে আংটি থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ইডি। তা নিয়েই এই কটাক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে। পরে আদালতে শুনানি চলাকালীন কুন্তল ঘোষের আইনজীবীরা জানান, লকআপে কয়েক জন ব্যক্তি তাঁদের মক্কেলকে হুমকি দিয়েছে, প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন কুন্তল ঘোষ।


এদিকে নিয়োগ দুর্নীতিতেই ধৃত মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূলী বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার দু’টি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিবিআই যে আবেদন করেছিল, আদালত তা মঞ্জুর করেছে।

সিবিআই’র তরফে তা এদিনই পাঠানো হয়েছে ওই পরীক্ষার জন্য। মুর্শিদাবাদের কান্দিতে ৬৫ ঘণ্টা ধরে জেরা ও তল্লাশি পর্বে এই জীবন সাহার মোবাইল নিয়েও রীতমতো নাটকীয় ঘটনা ঘটে। মোবাইল ফোন সিবিআই হাতে পেয়ে যাওয়ার পরেও তাদের অসতর্কতার সুযোগে তা ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে পাঁচিলের ওপারে নিজেদের জমিতেই পুকুর ও ঝোপঝাড়ের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দেন তৃণমূলী বিধায়ক। 

দু’দিন পরে দু’টি ফোনই অবশ্য উদ্ধার হয়। কিন্তু প্রশ্ন, তৃণমূল বিধায়ককে কেন সিবিআই-কে দেখে নিজের ফোন পুকুরে ছুঁড়ে ফেলতে হলো? নিয়োগকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীল, শান্তনু ব্যানার্জির মোবাইলের মতো তাহলে কি জীবনকৃষ্ণ সাহার মোবাইলও সোনার খনি? ওই দুই ফোনে কি কোনও শীর্ষ ক্ষমতার অধিকারী প্রভাবশালীর সঙ্গে কথোপকথন বা টাকা লেনদেনের সম্পূর্ণ হিসাব রয়েছে?

 

Comments :0

Login to leave a comment