ছোট জমিতে বাড়ি এমনকি বহুতলেরও অনুমোদন দিতে শুরু করেছে কলকাতা কর্পোরেশন। মুখ্যত বস্তি এবং কলোনি এলাকার দিকে তাকিয়েই এই পদক্ষেপ। তবে কর্পোরেশনের এই সিদ্ধান্তে বিপজ্জনক বাড়ি তৈরির প্রবণতা আরও বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এক কাঠারও কম জমিতে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশন। গত সপ্তাহে কলকাতার মেয়র জানান যে ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ১০ ছটাকের জমিতে বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। নকশা জমা দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন মিলবে বলে জানান মেয়র। ভিত শক্ত হলে বহুতলও করা যাবে। কর্পোরেশন ঠিক করেছে, ছোট জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য আশেপাশে ছাড়ও দিতে হবে তুলনায় অনেক কম।
কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক বাড়ি হেলে পড়ছে। কয়েকমাস আগে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বেআইনি বহুতল ভেঙে মৃত্যুর হয়েছিল। সম্প্রতি ট্যাংরায় একটি হেলে পড়া বহুতল ভাঙতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে তাড়া খেতে হয়েছে কর্পোরেশনের আধিকারিকদের।
কলকাতায় বস্তি আন্দোলনের নেতা শিবেন্দু ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, "পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ই ঠিকা প্রজাস্বত্ব আইনে বস্তি এলাকায় বাড়ি তৈরিতে কম ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে ছাড় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে নতুনত্ব নেই। কিন্তু সমস্যা হলো এমন বিভিন্ন এলাকায় পাকা বাড়ির তৈরির নামে বেআইনি বহুতল তৈরির প্রবণতা লাফিয়ে বেড়েছে। কর্পোরেশনের এই সিদ্ধান্ত আসলে বেআইনি বহুতলকে বৈধ করার কৌশল। পৌর প্রশাসন এই ধরনের বহুতলকেই এখন বৈধ বলে ঘোষণা করবে। তাতে বিপদ কমবে না।’’
গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন যে মেয়র পারিষদ বৈঠকে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ১০ ছটাকের জমি, যার ঠিকানা ২২৬ মিডিল রো, সেখানে জমির প্ল্যান পাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ন্যূনতম ছাড় দিয়ে বাড়ি তৈরির প্রস্তাবিত প্ল্যান পাশ হয়েছে।
মেয়র জানিয়েছিলেন যে ৩ কাঠা পর্যন্ত জমিতে চারপাশে অল্প ছাড় রেখে জমির প্ল্যান পাশ করানো হচ্ছে। তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্তে পর কারও বিনা অনুমোদনে বেআইনি বাড়ি তৈরির দরকার হবে না। পনের দিনের মধ্যে প্ল্যান পাশ না হলে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও বলেন মেয়র।
প্রশ্ন উঠছে যে ১৫ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরির প্ল্যান পাশ করানো হলে যথেষ্ট পর্যবেক্ষণ করা যাবে কিনা। এমনিতেই কর্পোরেশনে কর্মীর সংখ্যা কম। তাড়াতাড়ি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা কী হবে। নাকি প্ল্যান জমা পড়লেই পাশের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে, ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট অংশ।
মেয়র জানিয়েছেন যে কলকাতার ‘বিল্ডিং রুলস’ পরিবর্তন করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন। রাজ্য সরকারের থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলেই পৌরসভা তা কার্যকর করবে। কিন্তু যতদিন এই আইন সংশোধন করা না হচ্ছে ততদিন এভাবেই নতুন প্ল্যান দেওয়া হবে।"
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক কাঠার কম বা সামান্য বেশি ছোট জমিতে নির্মাণ হচ্ছে মুখ্যত বস্তি ও কলোনি এলাকায়। এই অঞ্চলগুলিতে বহু বেআইনি বাড়ি রয়েছে। সেগুলিকেই বৈধতা দেওয়া হবে নতুন বিধিতে।
উল্লেখ্য, কলকাতায় যাদবপুরের কাছে বিদ্যাসাগর কলোনিতে একটি বহুতল অন্য বাড়ির দিকে হেলে পড়ায় বিপুল চাঞ্চল্য ছড়ায়। কলকাতার আশেপাশেও দেখা গিয়েছে এমন নির্মাণ। গার্ডনরিচেও নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়েছিল পাশের জমিতে। চারপাশে কম ছাড়ের অনুমতি অন্য বাসিন্দাদের বিপদ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
Multistoried in Small Plot Kolkata
কলকাতায় চিলতে জমিতে বাড়ির অনুমোদন বেআইনি বহুতলকে বৈধতা দিতে?
×
Comments :0