এবার শিশুদের জন্য বর্ষাতি এবং ইউনিফর্ম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠল কলকাতা কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি মূল্যের বরাত দেওয়া হয়েছে ৩টি সংস্থাকে। এই ঘটনা সামনে আসায় হইচই পড়ে গিয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের অন্দরে।
চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি রেসিডেন্ট অডিট অফিসারের তরফে কলকাতা কর্পোরেশনের শিক্ষা বিভাগে একটি ‘নোট’ পাঠানো হয়। সেই নোটে জানতে চাওয়া হয়েছে, কিসের ভিত্তিতে টেন্ডার ছাড়া ২০১৯ সালে এই বিপুল পরিমাণ জিনিস কেনা হল?
রেসিডেন্ট অডিট অফিসারের পাঠানো নোট থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি কলকাতা কর্পোরেশনের তরফে ৩৩৫টাকা প্রতি পিস হিসেবে ২২০৪০টি রেনকোট এবং ২০০ টাকা প্রতি সেট হিসেবে ২৯৩৮৬টি স্কুল ইউনিফর্ম কেনার বরাত দেওয়া হয়। রেনকোট এবং ইউনিফর্মগুলি কলকাতা কর্পোরেশনের স্কুল এবং এসএসকে শিক্ষাকেন্দ্রের পড়ুয়াদের জন্য কেনা হয়। রেনকোট কিনতে মোট খরচ পড়ে ৭৩ লক্ষ টাকা এবং ইউনিফর্মের জন্য খরচ হয় ৫৮ লক্ষ টাকা।
অডিট দপ্তর পাঠানো নোট অনুযায়ী, টেন্ডার ছাড়া রেনকোটের জন্য বাছাই করা হয় ত্রিবেণী এন্টারপ্রাইস নামে একটি সংস্থাকে। আর স্কুল ইউনিফর্মের জন্য বাছাই করা হয় ৩টি সংস্থাকে। সেগুলি হল ত্রিবেণী এন্টারপ্রাইস, অওয়ান কুমার তিওয়ারি এবং মহম্মদ নসিম।
এই নোটের প্রেক্ষিতে যদিও দায় এড়ানোর খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে কর্পোরেশনে। শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য সন্দীপন সাহা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও তিনি চেষ্টা করছেন যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে নোটের উত্তর দেওয়ার।
কর্পোরেশনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, টেন্ডার নিয়ে সুস্পষ্ট নীতি রয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের। ২০১৯ সাল অবধি ৫ লক্ষ টাকার বেশি দামের জিনিস কিনতে গেলে ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক ছিল। বর্তমান নীতি অনুযায়ী, ১ লক্ষ টাকার বেশি দামের জিনিস কিনতে গেলেই ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক। কিন্তু অডিট বিভাগের নোট থেকেই স্পষ্ট, পড়ুয়াদের পোষাক কেনাকে ঘিরে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে।
কর্পোরেশনের আধিকারিকরা আরও জানাচ্ছেন, ই-টেন্ডারে অংশ নিতে গেলে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয় বিক্রেতাদের। সেই শর্তগুলি হল, টেন্ডার পরিমাণের ৪০ শতাংশ মূল্যের ১টি কাজ দক্ষতার সঙ্গে ৫ বছর আগে করে থাকতে হবে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সংস্থাকে। টেন্ডার পরিমাণের ৩০ শতাংশ মূল্যের ২টি কাজ টেন্ডার বেরনোর ৫ বছর আগে করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে সংস্থাটির। এবং বর্তমান সময়ে টেন্ডার পরিমাণের ৮০ শতাংশ মূল্যের কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। এই তিনটি শর্ত পূরণ না হলে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।
এর পাশাপাশি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলিতে টেন্ডারের বিজ্ঞাপন দেওয়াও বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন উঠছে, রেনকোট এবং স্কুল ইউনিফর্ম সরবরাহ করা সংস্থাগুলি কী এই সমস্ত শর্ত পূরণ করতে পেরেছিল? এর উত্তর যদিও স্পষ্ট নয়।
এর পাশাপাশি কলকাতা কর্পোরেশনের নিকাশি বিভাগের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের একটা অংশের অভিযোগ, নিকাশি নালা পরিষ্কারের জন্য দেওয়া টেন্ডারেও স্বজনপোষণ হয়েছে। টেন্ডার পেয়েছেন নিকাশি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য তারক সিংয়ের আত্মীয়। তারফলে খাতায় কলমে যন্ত্রচালিত মেশিন দিয়ে নিকাশি নালা পরিষ্কার হচ্ছে দেখিয়ে মোটা টাকা তোলা হলেও বাস্তবে কোনও কাজ হচ্ছেনা। তারফলে অল্প বৃষ্টি হলেই জল জমছে কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ, তৃণমূল বোর্ডের সময়কালে কমবেশি সমস্ত বিভাগেই এই জাতীয় দুর্নীতি হয়ে চলেছে। রেসিডেন্ট অডিট অফিসার শিক্ষা বিভাগে নজর দিয়ে ফেলেছেন, তাই এত শোরগোল হচ্ছে।
Comments :0