প্রতীম দে
২১ জুলাই তৃণমূলর ‘শহীদ দিবস’। ১৯৯৩ সালে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্ব ‘মহাকরণ অভিযান’ করেছিল যুব কংগ্রেস। সেই মিছিলে ১৩ জন মারা যান। মমতা ব্যানার্জি দাবি করেন যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গুলিতে। বাংলার মানুষ যদিও দেখেছেন ভয়াবহ হিংসা সেদিন কলকাতার বুকে ছড়ানো হয়েছিল, পরিকল্পনা করে, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে।
ঘটনার পর ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেই মামলা এখনও চলছে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের ৬ এবং ১৪ নম্বর কোর্টে রুমে। আইনজীবী অলোক দাস মামলকারীদের পক্ষ থেকে এই মামলা লড়ছেন দীর্ঘদিন।
শুক্রবার, এ বছর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ করবে তৃণমূল। তার আগে, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, আইনজীবী অলোক দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের কাছে আবেদন করেছি যাতে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।’’
কেন এই কথা বলছেন তিনি? মামলা টানতে টানতে কি তিনি ক্লান্ত?
না।
অলোক দাস বলেন, ‘‘৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তার মধ্যে ২০ জনের নাম ঠিকানা রয়েছে। তাঁদের বাড়ি সমন যায়। বাকিদের নাম, ঠিকানা, বাবার নাম ঠিক নেই। তাই মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন করেছি অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করে দিতে। যাঁদের কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না তাঁদের জন্য বাকিরা কেন হেনস্তার শিকার হবে।’’
তিনি জানিয়েছেন যে নিয়মিত মামলার দিন পড়ে। কিন্তু ১৩ জন ‘শহীদের’ পরিবারের সদস্যরা আসেন না। আবার কখনও কখনও কেউ আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে ১৩ জন শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারের কেউ এখন শুনানিতে আসেন না। আগে এসেছিল কয়েকবার।’’
পুরনো স্মৃতি মনে করে কথার মাঝে বলেই ফেললেন, ‘‘সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না তবে যতদুর মনে আছে ১৯৯৬ সালে মমতা ব্যানার্জি নিজে কালো গাউন পড়ে এই মামলার শুনানিতে এসেছিলেন।’’
এখন এই মামলার কী অবস্থা তার খবর মুখ্যমন্ত্রী রাখেন না। তবে মামলার এই অবস্থা তৃণমূল সরকারের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে জানিয়েছেন আইনজীবী অলোক দাস। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তিনি বিষয়টি দেখবেন।
ক্ষমতায় আসার পর একটি কমিশনও করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। যার নাম ছিল ২১ জুলাই কমিশন। সেই কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কিছুক্ষন হেসে অলোক দাস বললেন, ‘‘আদালতের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ প্রয়োজন পড়লে আদালত কমিশনের রিপোর্ট চাইতে পারে।’’
কিন্তু সেই কমিশনের রিপোর্ট কোথায়? কবে প্রকাশিত হবে রিপোর্ট তা কেউ জানেন না। ২০১১ সালের পর থেকে ৯ বার ‘২১ জুলাই’-এর সমাবেশ হয়েছে। একটিতেও কমিশনের রিপোর্টের কথা শোনা যায়নি তৃণমূল নেত্রীর মুখে।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই ১৩ জন যুবকের মৃত্যু হয়েছিলো বলে তৃণমূল দাবি করে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২১ জুলাইয়ের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চ্যাটার্জি।
ঘটনার সময়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন মণীশ গুপ্ত। পরে তিনিই তৃণমূলের মন্ত্রী এবং সাংসদও হন। স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে তিনিই তদন্ত রিপোর্টে জানাতে বাধ্য হয়েছেন, যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেদিন, তাদের মধ্যে একজনের গায়ে গুলির কোনও আঘাতই মেলেনি। সেই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সিরোসিস অব লিভার।
উল্লেখ্য সেদিন ওই ঘটনায় মৃত ১৩-তম এই ব্যক্তি কে? তৃণমূলের ওয়েবসাইটে এখনও ওই ১৩ নম্বর জায়গার পাশে লেখা আছে— অ্যানোনিমাস। অর্থাৎ অজানা। কেন তাঁর পরিচয় গোপন রাখেন মমতা ব্যানার্জি?
Comments :0