UNEMPLOYMENT

তরুণ প্রজন্মের বেকারিতে ভারত শীর্ষে

জাতীয়

modi

মোদী তাঁর আমলে দেশে অর্থনীতির বিকাশে বেকারি কমেছে বলে সম্প্রতি দাবি করলেও বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের রিপোর্টে সেই দাবি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। রিপোর্টে বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানালো ভারতের তরুণদের বেকারির হার বিপুল হারে বেড়েছে। যে সময়ে বেকারির হার চরমে উঠেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে তা পুরোটাই মোদীর আমল। তার আমলে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটানের থেকেও ভারতে তরুণ প্রজন্মের বেকারির হার বেশি। 

বেকারি নিয়ে রিপোর্টে বিশ্বব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, ২০২২সালে ভারতে তরুণদের মধ্যে বেকারির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.২২ শতাংশ। সেখানে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এই একই সময়ে বেকারির হার হলো ১১.৩ শতাংশ, বাংলাদেশে এই বেকারির হার হলো ১২.৯ শতাংশ এবং ভুটানে বেকারির হার হলো ১৪.৪ শতাংশ। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের বেকারির হারের থেকে দ্বিগুণ হারে বেকারি বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। মোদী নতুন ভাষণে বলেছেন, তাঁর আমলে দেশে  তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রযুক্তি কাজের দক্ষতা সরকারি উদ্যোগে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কর্মসংস্থান বেড়ে গিয়ে বেকারির হার কমেছে। কিন্তু কলকারখানা বন্ধ, নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না, এতে বেকারি বাড়ছে, তা স্বীকার করছেন না মোদী। 

তাঁর আমলে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রতি বছর কমছে। আর্থিক বৃদ্ধির হারে অন্য দেশের থেকে পিছিয়ে পড়েছে  ভারত। মোদী ভারত অর্থনীতিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা হয়ে দেশ হয়ে উঠবে বলে যে দাবি করেছেন  তা যে বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু নয় তা প্রমাণ হয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের বেকারির তথ্যে। বিশ্বব্যাঙ্ক জানাচ্ছে,  গত বছর চীনে বেকারির হার ছিল ১৩.২শতাংশ, সিরিয়ায় বেকারির হার ২২.১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় এই হার ১৩ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এই হার ১১.৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে এই হার ৭.৪ শতাংশ,  দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার ৬.৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে এই হার ৬.১ শতাংশ। ভারতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই বেকারি হারে এই বিপুল বৃদ্ধি বলে জানানো হয়েছে। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সকেই তরুণ প্রজন্ম হিসাবেই ধরা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের (আইএলও) সূত্রে এই বেকারির হার নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই বছরে ২কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা আজ আর শোনা যায় না। তবে বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে মহা সমারোহে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নতুন পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্প ঘোষণা হলেও মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে এরকম কর্মসংস্থানের রকমারি প্রকল্পের ফানুস উড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৌশল দীক্ষান্ত সমারোহে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি করেছেন। তিনি পিরিওডিক লেবার সমীক্ষা রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, এতে গত ছয় মাসে বেকারির হার কমেছে। তাঁর দাবি ৫হাজার নতুন আইটিআই তৈরি করায় শিল্প প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ায় কর্মসংস্থান বেড়ে বেকারি কমে গেছে। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মত, এই সব প্রকল্প প্রচারের আলোয় কিছুকাল ভেসে থেকেছে তারপরে যে কে সেই। 

কোনও নতুন কাজের সন্ধান দিতে পারেনি সেসব প্রকল্প। যেমন, মোদীর বিপুল ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। তাতে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পদ্যোগীদের সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা কাজে দেয়নি। উলটে ব্যাঙ্কের ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে ঋণ দেওয়ার হার মোদী জমানায় বড় শিল্পের তুলনায় অনেক কমে যায়। পিএম বিশ্বকর্মায় যে প্রশিক্ষণের কথা বলা হচ্ছে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা প্রকল্পে একইভাবে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানানো হয়েছিল। সেই প্রকল্পে কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ কোনও কাজ বড় একটা এগোয়নি। উলটে বেসরকারি সংস্থাকে এই প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত করায় সরকারি প্রকল্পের অর্থ নয় ছয় হয়েছে। 

মহামারীর সময়ে আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা প্রকল্পের নামে নিয়োগকারীকে বিশেষ অনুদান দিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রকল্প  ঘোষণা করা হয়। এতে অনুদান মিলেছে নিয়োগকর্তার। কিন্তু নিয়োগ বাড়েনি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মোদী ঘোষণা হয়েছিল মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প। দেশি শিল্পকে আত্মনির্ভর করে তার পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে বিশ্ব বাণিজ্য ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে জানানো হয়েছিল। এতে দেশের শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে জানানো হয়েছিল। দেশি শিল্পের বিকাশ ঘটেনি। বিদেশে ভারতীয় পণ্যের বাজার রপ্তানি কমে গেছে। 

পরিণামে কর্মসংস্থান বাড়েনি, উলটে তা কমে গেছে। এদিকে রিপোর্টে  পিরিওডিক লেবার সার্ভের রিপোর্ট উল্লেখ করে বলা হয়েছে স্নাতকদের বয়স কমলে দেখা যায় বেকারি হার বেশি। আবার তাদের বয়স বাড়লে দেখা যায় বেকারি হার কমছে।  যেমন ২৫ বছর বয়সে যেমন বেকরি বেড়ে ৪২ শতাংশে চলে গেছে। এবারে বয়স বেড়ে ৪০ বছর হলে বেকারি কমে  ৪.৫ শতাংশ নেমে আসে। এতে স্নাতকদের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে কোনও কাজ না পেয়ে স্নাতকরা বাধ্য হয়ে যেকোনও কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয় বলে জানিয়েছে সংস্থা। কিন্তু এই পিরিওডিক্যাল লেবার সার্ভেতেই  তরুন প্রজন্মের বেকারির হার সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সব চেয়ে বেশি। সেই তথ্য সব সময়েই আড়াল করে গেছেন মোদী।

Comments :0

Login to leave a comment