Uttarakhand editorial

প্রধানমন্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না

সম্পাদকীয় বিভাগ

উত্তরাখণ্ডে প্রাচীন জনপদ এবং গাড়োয়াল হিমালয়ের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলির অন্যতম প্রবেশদ্বার যোশীমঠ নাকি আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না। অচিরেই সমস্ত অধিবাসীদের তাদের বহু পুরুষের ভিটেমাটি চিরতরে ত্যাগ করে যেতে হবে নতুন আস্তানার খোঁজে। সরকারি ও বেসরকারি নানা মহল থেকে এই বার্তা ইতিমধ্যেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে অনায়াসে। ছয় শতাধিক বাড়ি এবং রাস্তা খোলা চত্বরে বড বড় ফাটল ধরায় সেইসব বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র অস্থায়ী শিবিরে সরানোর কাজ চলছে। ফাটল ও হেলে যাওয়া বহুতল হোটেল ভেঙে ফেলার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গেছেন যোশীমঠে। প্রধানমন্ত্রীর উদেযাগে জরুরি বৈঠক হয় দিল্লিতে। অনুরূপ বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্যোগেও। সন্দেহ নেই যোশীমঠের ঘটনা উত্তরাখণ্ডের ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এমন বিপাকে ফেলেছে যে রীতিমতো রাতের ঘুম ছুটে যাবার অবস্থা।
এই বিপর্যয়কর ঘটনা কি অনিবার্য ছিল? হঠাৎ করে কি এমন অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এল যোশীমঠে? এককথায় উত্তর মোটেই না। এই বিপর্যয়ের জন্য পুরোপুরি দায়ী রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার। নির্দিষ্ট করে বললে মুখ্যত দায়ী প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী এখানেই নিতান্তই কাঠের পুতুল মাত্র। গাড়োয়াল হিমালয়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেশিটাই রয়েছে উত্তরাখণ্ডে। এমন সৌন্দর্যের টানে দেশ-বিদেশের লক্ষ-কোটি ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে আসেন এই রাজ্যে। তেমনি তথাকথিত হিন্দু ধর্মস্থানের ভিড় এই রাজ্যে। হিন্দুত্ববাদী বা প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ধর্মান্ধতার আবেগে জড়িয়ে ফেলতে এই পর্যটন কেন্দ্রগুলির ধর্মীয় মাহাত্ম্য এত বিপুলাকারে প্রচার করে যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পড়ে যায়। উত্তরাখণ্ডের এই প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা চায় আগত বাইরের পর্যটকদেরও অন্ধ হিন্দুত্বের পিটুলি গেলাতে। আর এই হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মূলত তাঁরই উদ্যোগে এবং কেন্দ্রীয় অর্থে অসংখ্য তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। গাড়োয়াল হিমালয়ে। মোদী সাধের চারধাম প্রকল্প তারই অন্যতম। অস্থিতিশীল, ভঙ্গুর, ধসপ্রবণ ও আলগা মাটি পাহাড়ী অঞ্চলে পাহাড় কেটে চলছে চওড়া জাতীয় সড়ক নির্মাণ। যত্রতত্র নদীতে বাঁধ দিয়ে হচ্ছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চলছে অপরিকল্পিত নির্মাণ। পাহাড়ের গায়ে তৈরি হচ্ছে বাড়ির পর বাড়ি। হচ্ছে বহুতল হোটেল। ভঙ্গুর মাটি তার বহন ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বাড়ি-গাড়ির বহর বাড়ছে। ফলে যা হবার সেটাই হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে ফাটল ধসের ঘটনা ঘটলেও মানুষের আতঙ্ককে আমল দেয়নি সরকার। নির্বিচারে নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেছে। আজ যোশীমঠের যা অবস্থা তার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে হিমালয়ের অন্যান্য জনপদগুলিতেও। তাই সঙ্কীর্ণ ভোটের রাজনীতি ও ক্ষমতা দখলের স্বার্থ এবং আকাশচুম্বী লোভ ত্যাাগ করে বিজ্ঞানের অনুশাসন মেনে না চললে ভয়াবহ মানবিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানো যাবে না। ধর্মান্ধদের মাথায় এসব আদৌ ঢুকবে কিনা বলা মুশকিল। যেখানে আত্মপ্রচার প্রিয় প্রধানমন্ত্রীই অপরিণামদর্শী সেখানে চরম মূল্য মানুষকেই দিতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment