Illegal mining death

অবৈধ খাদানে ফের ধস, নিহত ৩

জেলা

 কোলে চেপে এই প্রথম পুজোয় বেড়াতে বের হতো ছ’মাসের ফুটফুটে মেয়েটি। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে সদ্য বাবা হওয়া গরিব শ্রমিক মুকেশ মাল নতুন জামাও কিনেছিলেন মেয়ের জন্য। সদ্য জন্মানো মেয়ে ও পরিবারকে ভালো রাখতে রোজ সকাল থেকে বিকেল গতর নিঙড়ে দেওয়া এই শ্রমিকের পরিবারের সব স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে মঙ্গলবারের সকাল। পাথর ভাঙতে গিয়ে নেমে আসা ধস চিরতরে কেড়ে নিয়েছে পাথর শ্রমিক মুকেশ মালের প্রাণ। একা মুকেশ মাল নন, একই পরিণতি হয়েছে তাঁরই সহকর্মী অপর দুই শ্রমিক কমল মির্ধা ও রাজেশ মির্ধারও। ছাড়পত্রহীন পাথর খাদানে অপরিকল্পিত খনন ফের প্রাণ কেড়েছে তিন হতদরিদ্র শ্রমিকের। 
ঘটনা বীরভূমের সেই নলহাটির। যেখানে ১৭ দিন আগেই একইভাবে মৃত্যু হয়েছিল আরও দুই শ্রমিকের। গত ছয় মাসে শুধু নলহাটি পাথর বলয়ে দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ছয়। স্রেফ কাঁচা টাকা মুনাফার লোভে অবৈধভাবে চলা খাদানের পর খাদানে শ্রমিকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে নলহাটি ১নং ব্লকের মহিষাগড়িয়ায় থাকা এক পাথর খাদানে ধস নামে এদিন। এলাকার শ্রমিক মহল্লা থেকে জানা গেছে, এদিন সকাল দশটা নাগাদ গভীর খাদানের উঁচু দেওয়ালে পাথর ভাঙার জন্য ড্রিল মেশিন চালাচ্ছিলেন তিন শ্রমিক। অ আচমকা ধস নামে। ভেঙে পড়ে পাথরের চাঙর। ছিটকে পড়েন তিন শ্রমিকই। তাঁদের উপর চাপা পড়ে পাথর চাঁই। তাঁদের উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, মৃত শ্রমিক মুকেশ মালের (২৭) বাড়ি এই ব্লকেরই কুখুড়া গ্রামে। অপর দুই শ্রমিক রাজেশ মির্ধা (২৭) ও কমল মির্ধার (৪০) বাড়ি খাদান লাগোয়া ডহরনগী গ্রামে। ঘটনায় পাথরের ধূলোয় আষ্ঠেপৃষ্ঠে দিনগুজরান করা গরিব শ্রমিক মহল্লায় ছড়িয়েছে শোকের ছায়া। এক্ষেত্রেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা হয়েছিল সকাল থেকেই। তবে মৃত্যুর খবর চাপা থাকেনি। এখন মৃতদের পরিবারের ক্ষোভকে প্রশমিত করতে শুরু হয়ে ‘ক্ষতিপূরণ’-র নামে কিছু নগদ গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা। প্রয়োজনীয় অনুমতিহীন খাদানগুলোর মালিকগোষ্ঠীর চক্র এতটাই সক্রিয় যে তাদের দাপটের কাছে শ্রমিকের যন্ত্রণা, অভিযোগ ঠুনকো।  
মাত্র ১৭দিন আগে এই নলহাটিরই বাহাদুরপুরের এক খাদানে একইভাবে পাথর ধসে চাপ পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর থানার গাঙেড্ডা গ্রামের ভোলানাথ মাল (৪১) ও বাদাম শেখের (৪৮)। নলহাটি-১ নং ব্লকের নসিপুরে এক পাথর খাদানের দেওয়ালে ড্রিলিংয়ের সময় একইভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মৃত্যু হয় মুকুল লেটের (৪৭)। জখম হন আরও দুই শ্রমিক। এদিনের দুর্ঘটনার পর  এসডিপিও থেকে বিডিও-কে ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাঁচামী, শালবাদরা, রামপুরহাট, নলহাটি,  রাজগ্রাম সহ বিভিন্ন পাথর বলয়ের অধিকাংশ খাদানেরই ছাড়পত্র নেই।

Comments :0

Login to leave a comment