শুক্রবার থেকে জলপাইগুড়িতে শুরু হচ্ছে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ৩ দিনের বিশেষ অধিবেশন। নিম্নচাপের ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এই উপলক্ষে জলপাইগুড়ি শহরকে ফ্লেক্স পোস্টার ফেস্টুন পতাকায় সাজিয়ে তুলেছেন ছাত্র-যুব ও মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা। তৈরি হয়েছে একাধিক তোরণ। সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মহিলা আন্দোলনের নেত্রীবৃন্দ ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছেন শহরে। এই অধিবেশন উপলক্ষে শুক্রবার শহরের কদমতলা সংলগ্ন মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে বক্তব্য রাখবেন গণআন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম ধাওয়ালে, সর্বভারতীয় নেত্রী সুভাষিণী আলি, রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, মহিলা নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম, অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি জিয়াউল আলম সহ নেতৃবৃন্দ।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশনকে জেলাজুড়ে প্রচার চালাচ্ছেন মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা। সংগঠনের আগামী রাজ্য সম্মেলন ও সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগে এই কেন্দ্রীয় কমিটির এই বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে মহিলা আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলাজুড়ে। মহিলা সমিতির কর্মীদের পাশাপাশি অভ্যর্থনা সমিতির সদস্যরাও জেলাজুড়ে অর্থসংগ্রহ করেছেন এই অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে। 
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ জানিয়েছেন, দেশজুড়ে আক্রান্ত মহিলারা, কর্মক্ষেত্রেও তাঁরা নিরাপত্তাহীন। এরাজ্যে কলকাতার বুকে আর জি কর মেডিক্যা ল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। চা শ্রমিক থেকে কৃষি শ্রমিক, বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত মহিলারা তাঁদের পরিশ্রমের যথাযথ মজুরি পাচ্ছেন না। রাজ্যের সরকার ১০ বছর আগে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর করেনি। মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তোলার পাশাপাশি, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সমস্ত শ্রমজীবী মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে, বিজেপি ও আরএসএস’র শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে কর্পোরেট স্বার্থবাহী নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে আরও তীব্র করার লক্ষ্যে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশন আগামী ৩০, ৩১ মে ও ১ জুন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জলপাইগুড়িতে। 
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি জাহানারা খান জানিয়েছেন, নারীরা যখন পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন, তখন এদেশের বুকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মনুবাদের ভাবনাকে সামনে এনে মহিলাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করছে। কাজের অভাবে গ্রাম শহরের পুরুষরা রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। কম মজুরিতে কঠিন কাজ করতে হচ্ছে নারী শ্রমিকদের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হলেও এরাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মহিলারা। আজকের দিনে মহিলাদের দাবিকে সামনে রেখে মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। সারা দেশের মহিলা নেত্রীবৃন্দই আলোচনা করবেন দেশে ঐক্যবদ্ধ মহিলা আন্দোলনকে তীব্রতর করার লক্ষ্যে।
জিয়াউল আলম জানিয়েছেন, চা বাগান, পাহাড়, বনাঞ্চল, বনবস্তি, বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা সহ সম্মিলিত জলপাইগুড়ি জেলাকে ভারতবর্ষের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে। আদিবাসী নেপালি রাজবংশী বাঙালি সহ বিভিন্ন জনজাতির মানুষের বাস যে জেলায় সেই জলপাইগুড়ি জেলার বুকে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে নিবিড় প্রচার করা হয়েছে।