বইকথা — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
প্রসঙ্গ : ছেলেবেলা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কৃশানু ভট্টাচার্য
এক অন্য কলকাতার গল্প। সে কলকাতা আমরা কেউ চোখে দেখিনি। কলকাতার ইতিহাস যারা রচনা করেছেন তাদের রচনার মধ্যেও এই কলকাতার এত গভীর এবং মানবিক ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই কলকাতার ছবি এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবন সায়াহ্নে এসে পরবর্তী প্রজন্মের ছোটদের জন্য তার এই রচনা। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সেপ্টেম্বর ১৯৪০। তারপরে অজস্র পুনঃ মুদ্রণ প্রমাণ করেছে এ যুগের সিলিকন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছেও তুই কলকাতার ছবি বড় জীবন্ত, বড় আকর্ষণীয়।
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন," গোসাইজির কাছ থেকে অনুরোধ রইল ছেলেদের জন্য কিছু লিখি। চেষ্টা ভাব্লুম ছেলেমানুষ রবীন্দ্রনাথের কথা লেখা যাক। চেষ্টা করলুম সেই অতীতের প্রেতলোকে প্রবেশ করতে। এখনকার সঙ্গে তার অন্তর বাহিরের মাপ মেলে না। তখনকার প্রদীপে যত ছিল আলো তার চেয়ে ধোঁয়া ছিল বেশি। বুদ্ধির এলাকায় তখন বৈজ্ঞানিক সার্ভে আরম্ভ হয়নি, সম্ভব অসম্ভবের সীমা সরহদ্দের চিহ্ন ছিল পরস্পর জড়ানো। সেই সময়টুকুর বিবরণ যে ভাষায় গেঁথেছি সে সভাপতি হয়েছে সহজ যথাসম্ভব ছেলেদের ভাবনার উপযুক্ত।"
এ বইয়ের বেশ কিছু কাহিনী রয়েছে জীবনস্মৃতির মধ্যেও। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন দুটো স্বাদ আলাদা। তার নিজের ভাষায় একটা হল সরোবর আরেকটা ঝরনা।
বইয়ের শুরুতেই রয়েছে তার সেই বালক নামের বিখ্যাত কবিতা। সেই কবিতার মধ্যে রয়েছে কলকাতার ফেরিওয়ালার কথা, সন্ধ্যাবেলায় ছাদের উপর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের আসর, বিকেল বেলায় রামায়ণ গান কিংবা পাঁচালীর দলের মধুর সংগীত। বলছেন," জানার সঙ্গে আধেক জানা, দূরের থেকে শোনা/ নানা রঙের নানা সুতোয় সব দিয়ে জাল বোনা।"
সত্যি সত্যিই বড় সুমধুর সেই বিবরণ। এই বিবরণের মধ্যেই পাই আর তার হার বের করা ঘোরার কথা গিন্নি মায়ের গঙ্গাস্নানের অদ্ভুত বিবরণ। উঠে আসে সে যুগের এক চলমান সমাজ চিত্র। তবে তা সবটাই ছোটদের মতো করে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন সে যুগে গ্যাস বাতি বিজলীবাতি বা কেরোসিনের বাতি ছিল না ছিল মাত্র রেড়ির তেলের আলো তার মিটমিটে আলো এ মাস্টার মশাই পড়াতেন। আসলে এ হল রেড়ির তেলের আলোয় সেই সময়কে দেখা। যা আজও জীবন্ত আজও বহু কল্পনার জন্ম দিতে পারে।
Comments :0